ছবি : সংগৃহীত
প্রথম ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট করে ৬ উইকেটে জিতল আফগানিস্তান।
নতুন বলে আরও একবার টপ-অর্ডারের ত্রাস হলেন ফাজালহাক ফারুকি। চমৎকার স্পিন বোলিংয়ে মিডল-অর্ডার ধসিয়ে দিলেন আল্লাহ্ মোহাম্মাদ ঘাজানফার। বিব্রতকর রেকর্ড তখন দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে। ভিয়ান মুল্ডারের প্রতিরোধে সেটির হাত থেকে বাঁচলেও আফগানদের কাছে পরাজয় এড়াতে পারেনি প্রোটিয়ারা।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৬ উইকেটে জিতল আফগানিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে ১৪৪ বল বাকি থাকতে ম্যাচ শেষ করে দিল তারা।
তিন সংস্করণ মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটিই আফগানদের প্রথম জয়। আগের পাঁচ ম্যাচে তেমন লড়াইও করতে না পারা দলটি এবার পাত্তাই দিল না র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা প্রোটিয়াদের।
প্রথম দশ ওভারেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় এইডেন মারক্রামের নেতৃত্বাধীন দলটি। ফারুকি ও ঘাজানফারের সম্মিলিত আক্রমণে পাওয়ার প্লেতে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। স্কোরবোর্ডে তখন মাত্র ৩৬ রান।
ওয়ানডেতে ‘বল বাই বল’ ডাটা সংরক্ষিত থাকা ম্যাচগুলোর মধ্যে স্রেফ দ্বিতীয়বার দেখা গেল এমন ঘটনা। একই মাঠে ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দশ ওভারে ৭ উইকেট হারায় আফগানরা।
প্রায় ৮ বছর পর এবার প্রতিপক্ষকে একই ঘটনার তেতো স্বাদ দিয়ে ৪ উইকেট নেন ফারুকি। আর ঘাজানফার ধরেন ৩ শিকার।
ঘাসহীন উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ছিল বেশ কঠিন। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নিজেদের বিপদই যেন ডেকে আনে প্রোটিয়ারা। অসমান বাউন্স ও গতির বিরুদ্ধে কঠিন পরীক্ষায় পড়েন ব্যাটসম্যানরা। উইকেটের আচরণ বুঝে ভালো জায়গায় বল ফেলে একের পর এক উইকেট নিতে থাকেন ফারুকি ও ঘাজানফার।
নিজের পরপর তিন ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার তিন ব্যাটসম্যানকে বিদায় করেন ফারুকি। অনেক বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন রিজা হেনড্রিকস। স্লোয়ার বলে একইভাবে বোল্ড হন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টোনি ডি জোর্জি।
প্রতিপক্ষের মিডল অর্ডারে ছোবল দেন ঘাজানফার। অষ্টম ওভারে জোড়া উইকেট নেন তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা এই অফ স্পিনার। ট্রিস্টান স্টাবস এই সংস্করণে তার প্রথম শিকার। পরে বিদায় করেন অভিষিক্ত জেসন স্মিথকে। দুইজনেই খুলতে পারেননি রানের খাতা।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে কাইল ভেরেইনাকে এলবিডব্লিউ করে দেন ঘাজানফার। ওভারের শেষ বলে নাটকীয়ভাবে রান আউটে কাটা পড়েন আন্দিলে ফেলুকোয়াইয়ো। ঘাজানফারের বল তার পায়ে লাগার পর এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেন বোলার ও উইকেটরক্ষক।
বল কোথায় গিয়েছে তা বুঝতে না পেরে প্রথম ক্রিজে থাকলেও পরে এক-দুই পা বেরিয়ে যান ফেলুকোয়াইয়ো। সেই সুযোগে স্লিপে দাঁড়িয়ে কাছ থেকেই স্টাম্প ভেঙে দেন গুলবাদিন নাইব। বিস্ময়ের অভিব্যক্তি নিয়ে মাঠ ছেড়ে যান ফেলুকোয়াইয়ো।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ছয় ব্যাটসম্যান মিলে করেন মাত্র ৩২ রান। ওয়ানডেতে কোনো ম্যাচে প্রোটিয়াদের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের এটিই সর্বনিম্ন সম্মিলিত স্কোর। ১৯৯৩ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৫ রান করেছিল তাদের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যান।
মাত্র ৩৬ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলা প্রোটিয়াদের সামনে তখন নিজেদের দলীয় সর্বনিম্ন ৬৯ রানের আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা। এই অবস্থায় দলের হাল ধরেন মুল্ডার।
ভীষণ বিপর্যয়ে একপ্রান্ত ধরে রেখে ১ ছক্কা ও ৫ চারে ৫২ রান করেন তিনি। ওয়ানডেতে এটি তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে আর কেউ ২০ রানও করতে পারেননি।
১৬ রান করা বিয়ন ফোরটানের সঙ্গে ৩৯ রানের জুটি গড়েন মুল্ডার। নান্দ্রে বার্গারের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৩০ রান। তাতেই মূলত কোনোমতে একশ পার করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে তাদের এর চেয়ে কম রানে অলআউটের ঘটনা আছে আর মাত্র দুটি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একশ উইকেট পূর্ণ করা ফারুকি নেন ৩৫ রানে ৪ উইকেট। জাতীয় দলের হয়ে উইকেটের খাতা খোলা ঘাজানফারের শিকার ৩টি। শেষ দিকে ২ উইকেট নেন লম্বা সময় পর ওয়ানডে খেলতে নামা রাশিদ খান।
রান তাড়ায় আফগানদের শুরুটাও তেমন স্বস্তিময় ছিল না। লুঙ্গি এনগিডি, বার্গার, ফোরটানদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে কঠিন পরীক্ষায় পড়েন টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ওভারে গুরবাজকে ফিরিয়ে দেন এনগিডি।
পাওয়ার প্লের মধ্যে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন রেহমাত শাহও। ১৪তম ওভারে একই পথে হাঁটেন ৩৫ বলে ১৪ রান করা ওপেনার রিয়াজ হাসান। দলকে পঞ্চাশ পার করিয়ে আউট হন অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শাহিদি।
এরপর আর বিপদ ঘটতে দেননি আজমাতউল্লাহ ওমারজাই ও নাইব। দুজনের ৪৮ বলে ৪৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ইতিহাস গড়া নিশ্চিত করে আফগানিস্তান।
৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৭ বলে ৩৪ রান করেন নাইব। ওমারজাইয়ের ব্যাট থেকে আসে ২ ছক্কায় ৩৬ বলে ২৫ রান।
মেসেঞ্জার/আজিজ