ছবি : সংগৃহীত
অবশেষে রাজশাহীর বাগানের গাছ থেকে রসালো ফল আমপাড়া শুরু হয়েছে। শনিবার (২৫ মে) রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বরে বিভিন্ন জাতের গুটি (আটি) আমের পাশাপাশি স্বল্প পরিমাণে সুস্বাদু ‘গোপালভোগ’ আমের দেখা মিলেছে।
আমচাষি ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার তীব্র খরায় রাজশাহীতে ফলন কম হওয়ায় আমের দাম বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ মে গুটিজাতের আমপাড়ার সময়সীমা বেধে দিয়েছিল রাজশাহী জেলা প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ে গুটিজাতের আমের দেখা মেলেনি।
তবে জেলা প্রশাসনের মেনে শনিবার (২৫ মে) বানেশ্বর হাটে গোপালভোগ আমের দেখা মিলেছে। তবে হাতে গোনা কিছু আড়ত এবং খুচরা ভ্যানে গোপালভোগ আম দেখা গেছে। তবে শনিবার বানেম্বর হাটে প্রচুর গুটি আমের দেখা মিলেছে।
আমচাষি ও ব্যভসায়ীরা জানান, প্রতিবছর মৌসুমের শুরুতে পাইকারী বাজারে ১ হাজার ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ দামে গোপালভোগ আম কেনাবেচা হয়। এই দাম বাড়তে বাড়তে সাড়ে তিন হাজার থেকে মৌসুম শেষে চার-পাঁচ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত উঠে।
কিন্তু শনিবার গাছ থেকে গোপালভোগ আমপাড়া শুরু হয়েছে। প্রথম দিনই বানেশ্বর হাটে প্রতিমণ গোপালভোগ আম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়।
এদিকে গত ১৫ মে গুটি জাতের আমপাড়া শুরু হলেও এতোদিন জমেনি গুটি আমের বাজার। বাজার না জমলেও প্রথম দিনই গোপালভোগ বাজার মাত করেছে। এরপর বাজারে আসবে নানা নাম ও স্বাদের রসালো আম। সবমিলিয়ে এবার নির্ধারিত ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ মেনে আম নামানো পুরোপুরি শুরু না হলেও আগামি সপ্তাহে আমের হাট-বাজার জমে উঠবে বলে আশা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাগানের গাছের আম পরিপক্ব না হওয়ায় এবার রাজশাহীর অনেকেই ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ অনুসরণ করছেন না। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গতকাল শনিবার (২৫ মে) রাজশাহীতে গোপালভোগ আম বাজার দখলে নেওয়ার কথা।
কিন্তু গোপালভোগ আম নেমেছে ঠিকই।তবে পরিমাণে খুবই অল্প। তাই বাজারে গোপালভোগ আমের দেখা মিলেনি। গত ১৫ মে থেকে বাজারে গুটি আম উঠলেও টক-মিষ্টি স্বাদের গুটি আমের চাহিদা কম। তাই বেচাকেনাও চলে ঢিলেঢালা।
জানা যায়, আমের বাজার ধরতে রাজশাহীর অনেক এলাকায় শনিবার গোপালভোগ আমপাড়া শুরু হয়েছে। তবে এখন কেবল বুকিং বা প্রি-অর্ডার অনুযায়ী গোপালভোগ আমপাড়া হচ্ছে। ফলে গোপালভোগ আমের সরবরাহ বাড়তে আরও একসপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহী বড়বনগ্রামের আম চাষি ফরিদুল ইসলাম জানান, এবার মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে পুরো এপ্রিল কেটেছে ভয়াবহ খরায়। তীব্র রোদে পুড়েছে প্রকৃতি। তাপের দাপটে গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে পড়েছে। তাই ফলন কম হয়েছে।
এরপর আবহাওয়ার তারতম্য থাকায় সব এলাকায় একসঙ্গে এবার গোপালভোগ আম পরিপক্ব হয়নি। তাই একযোগে সবাই এখনো বাগান থেকে গোপালভোগ আমপাড়া শুরু করেননি।
তবে আগামী সপ্তাহ থেকে প্রায় সব বাগানের গোপালভোগ আমপাড়া শুরু হবে। জমে উঠবে রাজশাহীর আমের বাজার।
মহানগরীর বড় আমের মোকাম শালবাগান বাজার। এখানকার আম ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, গতকাল শনিবার বাজারে খুব অল্প সংখ্যক গোপালভোগ আম এসেছে। তবে ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি। প্রথম দিনই ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা মণ দামে গোপালভোগ বিক্রি হয়েছে। স্বাদের কারণে মৌসুমের শুরুতে গোপালভোগ আমের চাহিদা বেশি থাকে। এবারও চাহিদা আছে কিন্তু সরবরাহ কম।
নগরীর শালবাগান বাজারের আম ব্যবসায়ী শাহীন শেখ জানান, বর্তমানে গুটি জাতের চোষা আমের দাম একটু কম। ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দামে বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ আরও কমিয়েও বিক্রি করছেন। তবে আশ বেশি এবং টক-মিষ্টি স্বাদের হওয়ায় গুটি আমের চাহিদা কম। সুস্বাদু ও আশ না থাকায় সবার পছন্দের শীর্ষে থাকে গোপালভোগ আম।
উল্লেখ্য, রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী, গুটি আগ ১৫ মে, গোপালভোগ ২৫ মে, লক্ষ্মণভোগ (লখনা) ও হিমসাগর (ক্ষীরসাপাত) ৩০ মে, ১০ জুন ল্যাংড়া ও ব্যানানা , ১৫ জুন আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি এবং ২০ আগস্ট ইলামতি আম পাড়া যাবে। এছাড়া নতুন জাতের কাটিমন ও বারি-১১ আম পরিপক্ব সাপেক্ষে বছর জুড়ে পাড়া যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজশাহীর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোছাম্মত সাবিনা বেগম জানান, গত ১৫ মে গুটি আমপাড়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আমপাড়া হবে।
গত মৌসুমে রাজশাহীতে আম উৎপাদন হয়েছিল ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে। এবার রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন।
তিনি জানান, রাজশাহীতে বাণিজ্যিক আম চাষি বেশি। যারা গুটি আম হার্ভেস্ট করেন না। এখানে ব্রান্ডের আম বেশি চাষ হয়।
‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মতিতেই ঘোষিত হয়েছে। তবে একই জাত বা গাছের আম একেক সময়ে পাকে। যারগাছের আম পরিপক্ব হবে তিনি পাড়বেন, বলাই আছে অপরিপক্ক আম পাড়া ও বাজার জাত করা যাবে না।
মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/আপেল