![রামেকের নিম্নমানের লিফট এখনো অপসারণ করা হয়নি রামেকের নিম্নমানের লিফট এখনো অপসারণ করা হয়নি](https://www.dailymessenger.net/media/imgAll/2024February/Untitled-18-2405251559.jpg)
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ছবি : সংগৃহীত
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নির্মাণাধীন নতুন আইসিইউ ইউনিটের একটি লিফট স্থাপনে জালিয়াতি ধরা পড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দরপত্রে চাওয়া হয়েছিল ‘এ’ গ্রেডের লিফট। কিন্তু ঠিকাদার সরবরাহ করেছে ‘সি’ গ্রেডের লিফট। এই দুই লিফটের দামের পার্থক্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।
এদিকে জালিয়াতি ধরা পরার পর ঠিকাদারকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিম্নমানের লিফট অপসারণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও ঠিকাদার লিফট অপসারণ করেননি। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের লিফটই গছানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তবে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সরবরাহকৃত লিফট বাতিল। লিফটি সরাতেই হবে।
এ নিয়ে আগামি রোববার ঢাকায় একটি বৈঠক ডাকা রয়েছে। আবার পুনঃতদন্তের জন্য আরেকটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিও রোববার রাজশাহীতে আসার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফজলুল হক জানান, আজ রোববার লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক হবে। ঠিকাদার সরবরাহকৃত লিফট অপসারণ ও দরপত্রে চাহিদাকৃত নতুন লিফট লাগিয়ে দেবে। তিনি আরও জানান, দরপত্রে ফায়ার লিফট (অগ্নি প্রতিরোধক) চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরবরাহ করা হয়েছে শুধু প্যাসেঞ্জার লিফট। এই লিফট সরাতেই হবে। ঠিকাদারকে দিয়েই নতুন লিফট আনার ব্যবস্থা করা হবে। কারণ, এই লিফট বাইরে থেকে আনতে গেলে এখন দেড় কোটি টাকা লাগবে। কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এই মুহূর্তে ঠিকাদারের চুক্তি বাতিল করলে সরকারের দেড় কোটি টাকা গচ্চা যাবে।
বিষয়টিতে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হবে জানিয়ে প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, লিফট আসার আগেই এটি পরিদর্শন করা হয়। এটাকে ‘পিএসআই’ বলে। গতবার করোনা পরিস্থিতির কারণে পিএসআই করা সম্ভব হয়নি। এই সুযোগটাই সম্ভবত ঠিকাদার কাজে লাগিয়েছেন। নিয়ম হলো যে দেশ থেকে লিফট আসবে, একজন কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে কয়েকটি স্পেসিফিকেশনে স্বাক্ষর করবেন। বাংলাদেশে এলে সেই কর্মকর্তা মিলিয়ে দেখবেন যে লিফটে তিনি সই করে দিয়েছিলেন, সেটিই এসেছে কি না।
তখন আর দুই নম্বরি করার কোনো সুযোগ থাকবে না। লিফট স্থাপনে জালিয়াতি ধরা পড়ার পর ৭ মে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে লিফটটি অপসারণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। দুই সপ্তাহ পার হলেও ঠিকাদার লিফট অপসারণ করেননি। এ বিষয়ে প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬০০ কেজি প্যাসেঞ্জার কাম বেড লিফটের দরপত্র মোতাবেক স্পেসিফিকেশন আনুযায়ী সঠিক কি না? তা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়। গত ৬ মে ঐ কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দরপত্রের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী লিফট সরবরাহ করা হয়নি। দরপত্রে চাওয়া হয়েছিল ‘এ’ গ্রেডের লিফট। সরবরাহ করা হয়েছে ‘সি’ গ্রেডের লিফট। উভয় লিফটের দামের পার্থক্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। আবার চাওয়া হয়েছিল ‘ফায়ার প্রটেকটেড’ লিফট।
সরবরাহ দেওয়া হয়েছে সাধারণ লিফট। এই অনিয়মের কারণে ঠিকাদারকে সাত দিনের মধ্যে লিফট অপসারণে নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে দুই সপ্তাহ পার হলেও সরবরাহকৃত লিফট অপসারণ করা হয়নি। গণপূর্ত বিভাগ এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে গণপূর্তের একাধিক সূত্র জানায়, ঠিকাদার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সরবরাহকৃত লিফট গছিয়ে দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। সরবরাহকৃত লিফট অপসারণের জন্য গণপূর্ত বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর ঠিকাদার সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। ফোন করলেও সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্র ফোন কেটে দিচ্ছেন।
মেসেঞ্জার/সজিব