ঢাকা,  শুক্রবার
০৩ মে ২০২৪

The Daily Messenger

পঞ্চগড়ে পর্যটকের মন মাতাচ্ছে নজরকাড়া টিউলিপ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১৪:৩৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

পঞ্চগড়ে পর্যটকের মন মাতাচ্ছে নজরকাড়া টিউলিপ

ছবি : মেসেঞ্জার

বাহারী রঙে টিউলিপে মজেছে নানান বয়সী পর্যটকরা। এবারও দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় টিউলিপের একখন্ড নেদারল্যান্ড হয়ে উঠেছে। নানান রঙের ভিনদেশি টিউলিপ দেখতে নানান বয়সী পর্যটকের ঢল নেমেছে জেলার সীমান্তবর্তী টিউলিপ গ্রাম দর্জিপাড়ায়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভলেভমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)’র উদ্যোগে ১৬ জন নারী কৃষাণী নিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রায় দুই একর জমিতে চাষ করা হচ্ছে এ ভিনদেশী ফুল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারও টিউলিপ চাষে পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে ও অর্থনীতির সমৃদ্ধিতে প্রান্তিক চাষিরা লাভবান হবেন।

শুক্রবার বিকেলে পর্যটকদের উন্মুক্ত করতে টিউলিপ গার্ডেনের উদ্বোধন করেন ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান ও ইএসডিওর পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার দম্পতি। এ সময় ইএসডিও’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারী, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও টিউলিপ চাষিরা উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে থেকে শতশত দর্শনার্থী ও পর্যটকের সমাগমে টিউলিপ বাগান দেখতে ব্যাপক সমাগম ঘটে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি সালের জানুয়ারী মাসের ১০ তারিখে জেলার সীমান্তঘেষা গ্রাম দর্জিপাড়ায় রোপন করা হয় টিউলিপের ব্লাব। মাত্র ২০-২৫ দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে কয়েক সারিতে ফুল ছড়িয়ে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে টিউলিপ। এবার ১৯ প্রজাতির টিউলিপের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ), ষ্ট্রং গোল্ড (হলুদ), জান্টুপিঙ্ক (গোলাপী), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপী), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)।

ছুটির দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্রমণ ও বনভোজনে আসা পর্যটকদের মন মাতাচ্ছে এই ভিনদেশি রাজসিক টিউলিপ। বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ফাগুনের আগমনে বসন্তের প্রারম্ভে রঙিন টিউলিপে রাজসিক সৌন্দর্যে মজেছে ফুল প্রেমিরা। এসব পর্যটকদের মধ্যে কেউ প্রেমিক-প্রেমিকা, কেউ নব-দম্পতি, কেউ এ্যাংগেজমেন্ট হওয়া যুগল আবার কেউ পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে ছুটে এসেছেন টিউলিপ গ্রাম দর্জিপাড়ায়। টিউলিপের রূপে মুগ্ধ হয়ে মোবাইলে ধারণ করছেন টিউলিপের চিত্র। আর টিউলিপময় এ ভালোবাসার রং বহুগুণে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, টেলিগ্রাম, হোয়াটঅ্যাপসের মতো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তৃতীয়বারের মতো দর্জিপাড়ায় ১৬ জন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে এ বছর ২৫ হাজার ব্লাব (বীজ) দিয়ে টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। পর্যটকদের মুগ্ধ করতেই এখানে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তুলছে। আগামী মৌসুমে সারা বছরই এ অঞ্চলে ফুলসহ ইকো ট্যুরিজম রূপ দেয়া হবে। এবার দেড়িতে টিউলিপ লাগানো হলেও এটি আগামী আরও দুই-তিন মাস স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি ফেব্রুয়ারি ও আগামী মার্চ মাস জুড়ে এখানকার আচার-অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবস ও ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস রাঙাবে আমাদের টিউলিপ। মুগ্ধ করবে যেকোন পর্যটকদের।

নারী কৃষাণীরা জানান, আমরা তৃতীয়বারের মতো নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ চাষ করেছি। টিউলিপ ফুল দেখতে এ অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটতে শুরু করেছে। যদিও এ বছর সবগুলো গাছে এখনো ফুল আসেনি, ফুল ফুটতে শুরু করেছে। আশা করছি গত দুই বছরের মতো এবারও টিউলিপের দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য ও হাসিতে মুগ্ধ করবে।

রংপুর থেকে নারী দর্শনার্থী সামি বলেন, আমি প্রথমবারের মতো তেঁতুলিয়ায় এসেছি শুধু এই টিউলিপ বাগান দেখার জন্য। অসাধারণ ও সুশোভিত ফুল। সত্যিই খুব মুগ্ধ হয়েছি। এমন সৌন্দর্যের মুগ্ধতার কথা জানান বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকরাও।

টিউলিপ ফুল দেখতে আসা ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, স্বাধীনতার পর ও কয়েক বছর আগেও আমরা কল্পনা করতে পারতাম না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহে সম্মতি, দিকনির্দেশনা এবং আমাদের এখানে ইএসডিওর মাধ্যমে এ অঞ্চলে টিউলিপ চাষ হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। যদিও এখনো সব গাছে ফুল আসেনি, সপ্তাহের খানেকের মধ্যে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে এ বাগান। মুগ্ধ করবে আমার মতো সব পর্যটকদের।

ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপারের সহধর্মিনী ও জেলা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)’এর সভানেত্রী প্রিয়াংকা অধিকারী বলেন, টিউলিপের সৌন্দর্যে মোহিত হয়েছি। আসলে এর সৌন্দর্যের অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা পাচ্ছি না। এতো ভালো লেগেছে। আসলে আমি যখনই শুনেছি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় টিউলিপের চাষ হচ্ছে, তখন থেকেই মাথায় আসে এ টিউলিপ আমাকে দেখতে হবে।

এজন্য আমার স্বামী ও ইউএসডিওর নির্বাহী পরিচালক জামান ভাইকে বলেছি, আমি যেন টিউলিপ বাগানে এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি। এ টিউলিপ দেখতে ছুটে এসেছি। আসলে এর সৌন্দর্যের কী এক অনুভূতি, যেন ফুলে হারিয়ে গেছি। খুব ভালো লাগছে। পর্যটকরা এলে তাদেরকেও মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিবে ভিনদেশি এই নজরকাড়া টিউলিপ।

জানা যায়, শীত প্রধান অঞ্চলের টিউলিপ ফুল। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপা’। এটি নেদারল্যান্ডসের ফুল। যা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। বর্ষজীবি ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভূক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের হাইব্রিডসহ টিউলিপের সকল প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়। টিউলিপ মূলত বর্ষজীবি ও শীত প্রধান দেশের বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত।

ইএসডিওর পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার বলেন, আমরা খুব আনন্দিত যে তৃতীয়বারের মতো তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ায় টিউলিপ চাষ করতে পেরেছি। নারী ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে আমরা এ অঞ্চলের প্রান্তিক নারীদের সহযোগিতায় এ বছরও টিউলিপ আবাদ করেছি। আমরা আজ ফিতা কেটে উদ্বোধন করেছে। আসলে এ ফুল ফোটার পিছনে এখানকার প্রান্তিক নারীরা এ ফুল ফুটিয়ে অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তাদের হাতে ফোটা টিউলিপের নজরকাড়া সৌন্দর্যে পর্যটকদের মোহিত করছে, আকৃষ্ট করছে। সবাই টিউলিপ দেখে মুগ্ধ হোক। ভ্রমণে হোক, বনভোজনে হোক সবাই যাতে এ ফুল দেখতে পারে তাহলে আমাদের উদ্যোগ সার্থক হবে।

ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান জানান, বাংলাদেশের খামার পর্যায়ে টিউলিপ চাষে তৃতীয় বর্ষ চলছে। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। এবারের প্রেক্ষাপটি একটু ভিন্ন ছিল দুটো কারণে। একটি হচ্ছে যে, টিউলিপের ব্লাব সংগ্রহের বিষয়টি একটু কঠিন ছিল ডলারের সংকটের কারণে।

নেদারল্যান্ড থেকে ব্লাব এলসি করে অনেকটাই চ্যালেঞ্জ ছিল। এ কারণে বিলম্বে এসেছে। ভালো দিক আছে যে, এবারের ফুলগুলো কিন্তু অনেক দিন থাকবে। গতবার এটি একবারই করতে হয়েছিল, যেটি ২১-২৪ দিনের মধ্যে ফুল ফুটে যেত। কিন্তু এবার আশা করছি আগামী দুই মাস এ টিউলিপের রাজসিক সৌন্দর্য ও সৌরভ ছড়াবে সারাদেশে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমরা নেদারল্যান্ড থেকে এক্সপার্ট নিয়ে এসেছিলাম।

এখন আমাদের চাষিরা অনেক অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে। তারা বুঝতে পেরেছে কোন পরিবেশে এই ফুল ফোটতে হয়। এ টিউলিপ ঘিরে আগামী মৌসুমে আমরা সারা বছরই ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যের ফুল, ফল চাষ করবো। যাতে সারা বছরই পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে। এ টিউলিপ চাষে ব্যাপক পর্যটকের আগমনে আমাদেরকে বিস্মিত করে। এবারও করবে আশা করছি।

মেসেঞ্জার/দোয়েল/আপেল

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700