ঢাকা,  শনিবার
০৪ মে ২০২৪

The Daily Messenger

১২ ঘন্টার ব্যবধানে মৃত্যুর ইচ্ছে পূরণ হলো আজগর-তহিদা দম্পতির

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ১৫ মার্চ ২০২৪

১২ ঘন্টার ব্যবধানে মৃত্যুর ইচ্ছে পূরণ হলো আজগর-তহিদা দম্পতির

ছবি : মেসেঞ্জার

মৃত্যু অনিবার্য। সেই মৃত্যুটা যেন একসাথেই হয়। এমন ইচ্ছা ছিল আজগর আলী (৭৮) এবং তহিদা বেগম (৭০) দম্পতির। আল্লাহ সেই ইচ্ছেও পূরণ করেছেন তাদের।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) একই দিনে ১২ ঘন্টার ব্যবধানে রংপুরের বদরগঞ্জের দামোদারপুর চম্পাতলি ইন্দিরার পাড় এলাকার এই দম্পতির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ঘটনাটি স্থানীয়দের অবাক করে দিয়েছে।

পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে দামোদারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আবু বকর সিদ্দিক জানান, আমারও ইউনিয়নের ইন্দিরার পাড় গ্রামেই ছিল ওই দম্পতির বসবাস। বুধবার (১৩ মার্চ) দিবাগত রাতের সেহরির খাবার একসাথে ঘুমিয়ে পড়েন স্বামী আজগার আলৗ স্ত্রী তহিদা বেগম।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়েন তহিদা খাতুন। এসময় স্বামীর সাথে অনেক কথাও বলেন। এরপর বাইরে যান তহিদা বেগম। সকাল টা পর্যন্ত স্বামী ঘুম থেকে না উঠায় ঘরে গিয়ে ডেকে তোলার চেস্টা করেন। কিন্তু সাড়া না পাওয়ায় কান্নাকাটি করতে থাকেন।

বাড়ির অন্য লোকেরা এসে দেখেন আজগার আলী মারা গেছেন। বাদ জোহর পারিবারিক কবরস্থানে স্বামীর দাফন কাজ শেষ হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েন স্ত্রী বয়োবৃদ্ধা তহিদা। এসময় তিনি উপস্থিত স্বজনদের সামনে আহাজারি করে বলতে থাকেন আল্লাহ যেন তাকেও দুনিয়া থেকে তুলে নেয়। রাত টার দিকে হঠাৎ বাড়িতে অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যান তহিদা। সাথে সাথেই তিনিও মারা যান। মধ্যরাতে তহিদাকেও স্বামীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।

আজগর আলীর ঘনিষ্ট স্থাণীয় ওয়ার্ড মেম্বার সামসুল ইসলাম জানান, আজগার আলী চাচার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি এ্যজমার রোগি ছিলেন। চাচির কোন রোগ ছিল না।

মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানান, ‘চাচি তাকে বলেছেন, ফজরের নামাজ পইড়বা যকন উটি। তখন ওমরা মোক কইল কই যান, মুই কনু নামাজ পইড়বার। তকন ওমরা মোক কইল, মোক নিয়া যাবান্নন। মুই কনু কেনে নিয়ে যাবাননই। এই কতা কয়া মুই নমাজ পড়ি বাইরোত গেইছোম। টার দিকি ঘরোত যায়া দেকোম বুড়া এ্যালাও শুতি আচে। যায়া ডাকাডাকি করি দেকম শোনে না। মুই তো কাইনব্যার ধইরচোম। বাড়ির সগাই আসি দ্যাকে বুড়া মোর মরি গেইচে।

ইউপি মেম্বার জানান, চাচার মৃত্যুর পর আমি সেখানে যাই। বেলা আড়াইটার দিকে মাটি হওয়ার পর যখন বাড়ি আসতে থাকি। তখন চাচি কইল, ‘তোমার চাচা তো তোমাক ছাড়া কিছুই বোজে নাই। এ্যলা চাচার দোয়া খায়ের ক্যামন করি কইরবো। তখন আমি চাচিকে বলি, ইফতারের করি এ্যালা আইসমো। তখন আলাপ হইবে। আমি ইফতার বদরগঞ্জ গিয়া করার পর একনা থানায় ঢুকি। তখন মাসুদ দাড়োগা আমার সাথে ছিলেন। হঠাৎ ফোন আসিল চাচি মাতা ঘুড়ি পড়ি যায়া মারা গেইচে। তারাতারি বাড়িত আসি মাঝ রাতেই চাচিকেও চাচার পাশে কবর দিলাম গ্রাম বাসি মিলি

ইউপি মেম্বার সামসুল আরও বলেন, চাচা-চাচি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তাদের নিজেদের মধ্যে খুব বোঝাপাড়া ছিল। তারা খুব পরহেজগার মানুষ ছিলেন। সংসার জীবনে তাদের তেমন কোন একটা মনোমালিন্য ছিল না।

সুখে দুখে প্রায় ৫০ বছরের সংসার তাদের। চাচা চাচির সাথে দেখা হলে বলতেন, ‘হামার দিন তো শ্যাষও হইচে। মরায় তো নাইগবে। তোমরাগুলো দোয়া করেন তো মইরলে যেন বুড়া-বুড়ি একসাতে হামরা মরি।তাদের আশা পূরণ হলে।

এলাকার খুব বয়োজষ্ঠ এবং সম্মানিয় ছিলেন তারা। তাদের ১২ ঘন্টার ব্যবধানে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ আলোচনা হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ধরণের মিল মহব্বত থাকার কতা সবাই ভালো বলছে। তার ছেলে মেয়ে সন্তান ছিল।

আজগার-তহিদার পুত্র লাভলু মিয়া বলেন, ‘আমার বাপ-মাও খুউব ভালো মানুষ আচিলো। ওমরা সউগ সময় কইতো যাতে এক সাতে মারা যায়। আল্লাহ তামার মনোবাসনা পূরণ কইরচে। কিন্তু হামরা এতিম হয়া গেইনো।

স্থানীয় চম্পাতলি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দুলাল চন্দ্র জানান, একই দিনে ১২ ঘন্টার ব্যবধানে বয়স্ক স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনাটি এলাকায় বেশ আলোচনা হচ্ছে। তারা নিজেরাও ধরণের মৃত্যু কামনা করেছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে। তারা খুব ভালো এবং ধার্মিক মানুষ ছিলেন।

মেসেঞ্জার/মাজহারুল/আপেল

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700