ঢাকা,  শনিবার
০৪ মে ২০২৪

The Daily Messenger

রেডিমেড কাপড় ও লোডশেডিংয়ের কাছে ধরাশায়ী দর্জিরা

রাঙ্গুনিয়া প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ৬ এপ্রিল ২০২৪

রেডিমেড কাপড় ও লোডশেডিংয়ের কাছে ধরাশায়ী দর্জিরা

রাঙ্গুনিয়ায় কাপড় সেলাই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এক দর্জি। ছবি : মেসেঞ্জার

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। আর এই ঈদকে আরো বেশী রাঙ্গিয়ে তুলতে নতুন পোশাকের জুরি নাই। আবাল বৃদ্ধা বনিতা সবারই ইতিমধ্যে  ঈদের কেনাকাটা শেষের দিকে। তবে এবার হাসি ফুটেনি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দর্জিদের মুখে। একদিকে বিদ্যুৎ সমস্যা অন্যদিকে রেডিমেট কাপড়ের সমাহার।

যে দর্জিরা এক সময় রমজানে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাতো, তাদের এবার ব্যস্ততা কমে গেছে। গেল বছর যে পরিমাণ কাপড় সেলাইয়ের অর্ডার হয়েছে এবার তার অর্ধেকও হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা। এরমধ্যে ধারাবাহিক লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ দর্জিরা। ঠিক সময়ে কাপড় ডেলিভারির শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, কারিগর সংকট ও লোডশেডিংয়ের কারণে দোকানগুলোতে কাজের অর্ডার নেওয়া হচ্ছে সীমিত। আগে যে রমজানে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করতেন দর্জিরা এখন সে ব্যস্ততা তুলনামূলকভাবে কমে গেছে। মধ্য রাতেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছেন তারা।

যদিও বা আগে দিনরাত ২৪ঘন্টায় খোলা রাখতে হতো তাদের দোকান। এদিকে কাপড় দোকানীদেরও একই দাবি, এবার রেডিমেড কাপড়ই বেশি বিক্রি হচ্ছে। মো. সালাউদ্দিন নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী জানান, এবার আমাদের অধিকাংশ কালেকশন ছিল রেডিমেট কাপড়।

দাম ও সেলাইয়ের জামেলা বিবেচনায় রেডিমেড কাপড়ে ক্রেতারাও সন্তুষ্ট থাকে। তবে প্রথম রমজানে ১০/১২ দিন সেলাই ছাড়া কাপড়গুলো বেশি চলেছে। ধীরে ধীরে বাকি ক্রেতাগুলো রেডিমেডের দিকেই ঝুঁকেছে।

শুক্রবার উপজেলার সবচেয়ে বড় কাপড়ের বাজার চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন আয়েশা আক্তার। সাথে নিয়ে এসেছেন তার দুই মেয়েকেও।

জানতে চাইলে তিনি জানান, রেডিমেড কাপড়ে সেলানোর অতিরিক্ত জামেলা থাকেনা এবং বর্তমানে যে হারে লোডশেডিং হচ্ছে কাপড় দর্জির দোকান থেকে ঠিক সময়ে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই তাই আমরা মা মেয়ে তিনজনই রেডিমেট কাপড় কিনেছি৷ এছাড়া সেলাতে গেলে অতিরিক্ত অনেক টাকা গুনতে হয়।

তার মেয়ে সায়মা ইয়াসমিন জানান, ঈদ ছাড়াও আমরা প্রায় রেডিমেট কাপড় কিনি। তবে অনেক সময় কাপড় ঢিলা হলে দর্জির কাছে যেতে হয়।

এই মার্কেটের আরেক নারী ক্রেতা শাকিফা বিনতে আলী নামে একজন দুটি রেডিমেট কাপড় কিনেছেন। সেলাইসহ কাপড় কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ব্যস্ততার কারণে এতদিন কেনাকাটা করা হয়নি। ঈদের বাকী আর কয়েকদিন আছে। এখন সেলাইকরা কাপড় কেনা ছাড়া আর উপায় নেই, কারণ দর্জিরা এই সময়ে আর কাপড় অর্ডার নিবে না।

মো. সোহেল নামে এক দর্জি জানান, আগে আমাদের দোকানে নিয়মিত ৪/৫জন কারিগর কাজ করতো। পরে কাজ কমে যাওয়ায় তারা বিদেশ চলে গেছেন। এই বছর দুইজন কারিগর নিয়ে দোকান চালাচ্ছি। 

শুরুতে কাজ কম থাকলেও শেষের দিকে এসে কাজের চাপ একটু বেড়েছে কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে কাজ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে অর্ডার গুলো নেওয়া হয়েছে এগুলো ঠিক সময়ে ডেলিভারি হবে কিনা সন্দেহ।

এদিকে নারীদের সাথে সমানতালে রেডিমেড কাপড়ের দিকে ঝুঁকেছেন পুরুষেরাও। আগে অন্তত মাদ্রাসার ছাত্ররা কাপড় কিনে পাঞ্জাবি সেলাই করতো কিন্তু এবছর দেখা যাচ্ছে অধিকাংশই একেবারে সেলাই করা পাঞ্জাবি নিচ্ছেন।

মূলত সেলাইয়ের জামেলা এড়াতে রেডিমেট পাঞ্জাবি কিনছেন তারা। তাছাড়া এখন বিভিন্ন ব্যান্ডের সব ধরনের পোশাকই সাইজ অনুযায়ী পাওয়া যায়। ফলে নেই কাটানোর বাড়তি ঝামেলা। এতে কমেছে খরচ।

পাঞ্জাবি সেলাই কাজে কর্মরত কয়েকজন দর্জি দোকানের কারীগর জানান, নারীদের সাথে পুরুষেরাও গতবছরের তুলনায় সেলাই কাপড়ের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়েছে। ঈদে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো পাঞ্জাবি সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকে। তবে এবার ব্যস্ততা একটু কম, তাই কারিগরও কম।

মানুষ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে রেডিমেডের দিকেই চলে যাচ্ছে। আবার রেডিমেডে কেনা পাঞ্জাবি সাইজে সমস্যা হলে অল্টার করানোর জন্য আমাদের কাছে আসতছে কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে ঠিক সময়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলার রোয়াজারহাট, রাণীরহাট, ধামাইরহাট, সরফভাটা, গোচরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়। কর্ম ব্যবস্থার ফাঁকে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা অধিকাংশ ক্রেতার দাবি গ্রাহকদের সাড়া পেয়ে কাপড়ের বিভিন্ন ব্যান্ডের কোম্পানি গুলো গেল বছরের তুলনায় রেডিমেড কাপড় তৈরির দিকে ঝুঁকেছে বেশি।

এছাড়া এখন রেডিমেড পোশাক সাইজ অনুযায়ী পাওয়া যায়। তাই আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে সেলাইয়ের কাজ। এতে খরচও কমছে। অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং দর্জিদের চরম ভোগান্তিতে আকার নিয়েছে।

মেসেঞ্জার/ইসমাঈল/তারেক

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700