ছবি : ডেইলি মেসেঞ্জার
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বালুমহাল নিয়ে চলছে লঙ্কাকান্ড। পহেলা বৈশাখ থেকে বালু উত্তোলন, পরিবহণ ও টোল আদায়সহ সরকারি কোনো নিয়ম মানছেন না ইজারাদার। শুধু তাই নয়, মহাসড়কের পাশে বালু রাখতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কেটে উধাও করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকায় স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোসের সৃষ্টি হয়েছে।
রাজশাহীর ডিসি অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহীর প্রেমতলি বারোমাইল ও ফুলতলার ৫ ও ৬ মৌজায় দুইটি বালুমহাল রয়েছে। বাংলা ১৪৩১ সনের জন্য ঐ বালুমহাল ইজারা পেয়েছে নগরীর কাশিয়াডাঙ্গার মুখলেসুর রহমান মুকুলের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজ’। একই প্রতিষ্ঠান ইজারা পেয়েছে বালুবাহী
ট্রাক থেকে টোল আদায়ের। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নানা অনিয়মের মাধ্যমে শুরু করেছে কার্মকান্ড। বালু উত্তোলন, পরিবহণ ও টোল আদায়ে ইজারার কোনো নিময় মানছে না তারা।
বালু বা মাটি উত্তোলন ইজারার ২১ নং শর্ত অনুযায়ী পদ্মাপাড়ের ১ হাজার ৫০০ মিটার অর্থাৎ কমপক্ষে দেড় কিলোমিটার দূর থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে। ইজারার ২০ নং শর্ত অনুযায়ী সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বালু বা মাটি উত্তোলন ও পরিবহণ করা যাবে। কিন্তু এসব সরকারি নিয়মের কোনই তোয়াক্কা করছেন না ইজারাদার।
অভিযোগ উঠেছে, দুইটি বালুমহালে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে পদ্মার পাড়ের ৫০০ মিটারের মধ্যেই। আর বালু বা মাটি উত্তোলন ও পরিবহন করা হচ্ছে রাতভর। এছাড়া পরিবহনের সময় বালু ঢেকে নেয়ার নিয়ম থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। বালু উত্তোলন ও পরিবহনের ট্রাক চলাচলের শব্দে স্থানীয়রা রাতে ঘুমাতে পারছে না; তেমনি পরিবহনের সময় বালু ছিটে পড়ে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাসহ পাশের বাড়িঘর।
বালু মজুদ : ইজারার ৭ নং শর্ত অনুযায়ী রাস্তার পাশে, ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জমি ও খেলার মাঠে বালু বা মাটি স্তুপ সৃষ্টি বা মজুদ করা যাবে না। এছাড়া ইজারার ১০ নং শর্ত অনুযায়ী বালু বা মাটি উত্তোলন, পরিবহন ও মজুদ করতে কোনোভাবেই ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও রাস্তার ক্ষতি করা যাবে না। কিন্তু এসব শর্ত মানা হচ্ছে না গোদাগাড়ীর দুই বালুমহালে। সুলতানগঞ্জ এলাকার গাংগোবাড়ি মৌজায় রাজশাহী- চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের পাশে প্রায় ১০ একর ফসলি জমিতে বালু মজুদের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই কয়েক একর জমির কাঁচা ধান কেটে ফেলা হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে ইজারাদার মুখলেসুর রহমান মুকুলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বালু মজুদ করতে কাঁচা ধান কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এছাড়া বালু বা মাটি উত্তোলন ও পরিবহনে ইজারার শর্ত লঙ্ঘনের বিষয়ে তিনি ফোনে কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে গোদাগাড়ীর সহকারি কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হাসান বলেন, রাতে বালু ও মাটি কাটা হচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ভ্রাশ্যমাণ আদালত বসিয়ে অভিযান চালানো হয়।
রাত ১১টা পর্যন্ত অভিযান চলে। তবে অভিযানের খবর জানাজানি হওয়ায় কাউকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া ৫০০ মিটারের মধ্যে যে মাটি কাটা হয়েছে তা রাস্তার তৈরীর জন্য বলে জানান এই সরকারি কর্মকর্তা।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, বালু মজুদ করার জন্য জমির কাঁচা ধান কাটা হয়েছে কিনা তা অবগত নই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, গোদাগাড়ী এলাকায় দুইটি বালুমহাল রয়েছে।
সেগুলো নিয়মের মধ্যে চলছে কি না তা মনিটরিং করা হচ্ছে। নিয়মের বাইরে চালাতে দেওয়া হবে না।
মেসেঞ্জার/সজিব