ঢাকা,  শনিবার
০৪ মে ২০২৪

The Daily Messenger

বান্দরবানে কেএনএফের তৎপরতার প্রতিবাদে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী

বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বান্দরবানে কেএনএফের তৎপরতার প্রতিবাদে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী

ছবি : ডেইলি মেসেঞ্জার

বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিভিন্ন অপকর্মকান্ডের প্রতিবাদে সব জনগোষ্ঠীর সামাজিক নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২০ এপ্রিল) জেলার ক্ষুদ্র সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট (কেএসআই) অডিটরিয়ামে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা। 

সভায় বক্তারা বলেন, গত ২ এপ্রিল রাতে রুমা উপজেলার সোনালি ব্যাংকে হামলা, সরকারি অস্ত্র-গুলি লুট ও ব্যাংক ম্যানাজারকে অপরহরণ এবং পর দিন ৩ এপ্রিল থানচি উপজেলায় দিন দুপুরে সোনালি ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতিসহ কেএনএফের বিভিন্ন অপকর্মকাণ্ড অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক এবং নিন্দনীয় কাজ। তারা কেন কোন সাহসে এই অপরাধ করেছে ৷ এটার উত্তর আমরা খুঁজতে যাব না। আমরা নিশ্চয় জেনেছি, তারা শান্তি চাই না। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইনা। 

ম্রো, ত্রিপুরা, মারমা, খিয়াং, বাঙালি, লুসাই, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খুমি, চাকমা, বম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নেতৃবৃন্দরা তাদের বক্তব্যে বলেন, কেএনএফের অপকর্মকাণ্ডের কারণে কমবেশি পাঁচ শত পরিবার আতঙ্কে নিজেদের পাড়া ছেড়ে বাস্তুহারা হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় চরম ব্যাঘাত ঘটছে। বর্তমানে এক কেজি লবনসহ অন্যান্য নিত্য পণ্য কিনতে হলে থানার ওসি বা ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হয়। এটি বাংরাদেশের কোন আইনে লেখা হয়েছে। সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সবার ধারণা প্রতিটি বম কেএনএফের সঙ্গে কমবেশি সম্পৃক্ত। এখন সাধারণ বমদের উচিত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কেএনএফের সঙ্গে সশস্ত্র ও নিরস্ত্রভাবে যারা জড়িত তাদেরকে দেখিয়ে দিয়ে নিজেদের অসম্পৃক্ততার প্রমাণ করার। ব্যাংক ডাকাতি, সরকারি অস্ত্র-গুলি লুট ও ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্মকান্ড কখনো একটা পরিচ্ছন্ন আদর্শিক অবস্থান থেকে কোনো দল বা গ্রুপের রাজনৈতিক অধিকার বা দাবি আদায়ের লক্ষ্য বা আদর্শ হতে পারে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে কেএনএফের নতুন দাবি, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি, রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলা নিয়ে পৃথক প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রণয়নসহ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চায়। যার নামকরন করা হয় কুকি-চিন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল বা কেটিসি। শান্তিতে ফিরে আসতে চাইলে এত কিছুর আবির্ভাব হতো না। মাত্র ১২ হাজার জনসংখ্যার একটি ছোট্ট জনগোষ্ঠীর এমন দাবি কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব অপকর্মকান্ডের কারণে কেএনএফ সদস্যদের শান্তি জীবনে ফিরে আসার সুযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার অন্ধকার বৈ আলোর পথ চিনে না। তাদের কর্মকান্ড জনবান্ধব নয় নয় বলে জানান বক্তারা। 

সভাপতির বক্তব্যে ক্যশৈহ্লা বলেন, সম্প্রতি হওয়া ঘটনার পর গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) আরো নতুন ঘটনা ঘটেছে। যে ঘটনায় দেশের একজন বীর সৈনিক শহীদ হয়েছেন। ওই দিন বিকালে অভিযানের সময় বিলাইছড়ি উপজেলার বড় থলি পাড়া আর্মি ক্যাম্পের আওতাধীন পলি প্রাংসা পাড়া এলাকার মাঝামাঝি স্থানে একটি যাত্রী ছাউনি এলাকায় কেএনএফের হামলার শিকার হয়। ওই ঘটনায় আরও তিন সৈনিক আহত হয়। যা খুবই দুঃখজনক। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মন্ত্রী কেএনএফকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেহেতু তারা সন্ত্রাসী দল, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে কোন আলোচনা নয়।  এর পর পরই ভিন্ন কথা জানান ক্যশৈহ্লা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশ। এর সাথে লাগানো ভারতের মিজোরাম, এরপর মনিপুরি ও নাগাল্যান্ড। সবল বা দুর্বল যে কোন সশস্ত্র গ্রুপ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের যে কোন সহযোগির সহযোগিতা না পেলে গ্রুপগুলো টিকে থাকতে পারে না। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে প্রশ্রয়, আশ্রয়, সহযোগিতা পাচ্ছে বলে কারা এখনো টিকে আছে। মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে যুদ্ধ চলছে। রাজ্যটির বিদ্রোহী দল কাচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। তারা যদি ট্রেনি না দেয়। তাদের সহযোগিতায় তারা ট্রেনিং না পেত। তাহলে এ ধরনের সশস্ত্র সংগঠন হতো না বলে জানান তিনি। 

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী কাজী মহতুল হোসাইন যত্ন, ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের বান্দরবান জেলা সভাপতি আইনজীবীবী খুশিরায় ত্রিপুরা, ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি রাংলাই ম্রো, খুমি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি লেলুং খুমী, বাংলাদেশ মারমা অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মংচিংনু মারমা, চাক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি উচাইহ্লা চাক, খিয়াং জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নেওয়াজাই খিয়াং, কৃপা ত্রিপুরা, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনু, বুদ্ধজ্যোতি চাকমা প্রমুখ। 

মেসেঞ্জার/সজিব

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700