ঢাকা,  মঙ্গলবার
২১ মে ২০২৪

The Daily Messenger

আউয়াল কমিশনের কাঁধে বিতর্কের বোঝা

আবদুর রহিম

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ১০ মে ২০২৪

আউয়াল কমিশনের কাঁধে বিতর্কের বোঝা

ফাইল ছবি

তরুণ ভোটার বাড়লেও দিন দিন কমছে ভোট প্রদানের হার। এবার ইতিহাসের কম ভোটের রেকর্ড হয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের অধীনে হওয়া ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানিয়েছেন, প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচনে ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১৭ শতাংশ। নির্বাচন সংশ্লষ্টরা বলছেন, তিনমাস আগে হওয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও কম ভোট পড়েছে। প্রায় ৫৯ শতাংশ মানুষ জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। এবার একই কমিশনের অধিনে হওয়া উপজেলা নির্বাচনেও প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়নি। দেশের সাধারণ নাগরিক, বিদেশি মহল থেকে কম ভোট নিয়ে উঠে আসা বিতর্ক কাধে ছাপছে কমিশনের উপর।

গত বুধবারের নির্বাচনে প্রাণহানি না ঘটলেও জাল ভোট,কেন্দ্র দখল, ককটেল বিস্ফোরণ, নির্বাচনী কর্মকর্তা গ্রেপ্তার, সাংবাদিকদের মারধরসহ অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের আস্থা উঠে গেছে। দেশের সাধারণ নাগরিকরা মনে করছেনএখন আর আগের মতো স্বচ্ছ গণনায় ভোট হয় না। জনগণের ভোটেও আর কেউ নির্বাচিত হয় না ক্ষমতাসীন মহলের প্রভাব থাকে ভোটে। সরকার যাকে চাইবে সেই পর্দার আড়াল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসবে। তাই প্রতিযোগীও হচ্ছে নিজেদের মধ্যে। বিএনপিসহ অর্ধশত রাজনৈতিক দল ভোটে অংশ নিচ্ছে না। এই দলগুলোর অনুসারীও ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছে না। বিরোধী রাজনৈতিক মহলের দাবি বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের অনুগত। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জন্য মাঠ পর্যায়ে ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসি এই চারজনের ভূমিকা থাকে অনেক বেশি। এদের উপরও একটা অংশের অনাস্থা তৈরি হওয়ায় মানুষ  আর ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। অতীতে নির্বাচনে মানুষের ভোট এবং ভালোবাসা বেশি প্রয়োজন হলেও বর্তমান সময়ে ভোটের মাঠে বেশি টাকা খরচ হওয়ায় যোগ্য প্রার্থীরা প্রতিযোগিতা আসছে না। তাই ভোটাররাও যোগ্য প্রার্থী খুঁজে না পেয়ে ভোট দিতে আসেন না।

ভোটের হারের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের ভোটেও হার কমে যাচ্ছে। গত ৫টি উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ৩৬ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা ভোটে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১ শতাংশ এবং তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় উপজেলা নির্বাচন এবং ১৯৮৫ সালের প্রথম উপজেলা নির্বাচনের ভোটের হারের সঠিক তথ্য জানা যায়নি। এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮০ দশমিক ২০ শতাংশ। ওই নির্বাচনে কোটি ৩৫ লাখ ৩২ হাজার ৯১১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। সে হিসাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার কমেছে ৩৮ দশমিক শতাংশ। দিন দিন ভোটের হার কমে যাওয়ায় পর্যবেক্ষণরা সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতাকেও দায়ী করছেন। ভোটারদের আস্থা তৈরি করতে না পারলে আগামীতে আরও কম ভোট পড়ারও আশঙ্কা  করা হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন (সম্পাদক) বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের উপর জনগণের আস্থা নেই। তাই মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছে না। একতরফা জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের নির্বাচন সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গেছে।

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ভোট কম পড়ার বিষয়টি এখন জাতীয় ইস্যু হয়ে গেছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব স্থানীয় নির্বাচনে পড়বে এটাই স্বাভাবিক অবাক হওয়ার কিছু নেই। তা ছাড়া নির্বাচনের সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন এসেছে। মানুষ এখন অযথা ঝামেলায় জড়াতে চায় না। প্রার্থী হওয়াটাও কঠিন কাজ। প্রার্থী হতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। এগুলো কারণে অনেকেই প্রার্থী হচ্ছেন না; প্রার্থী কম হওয়ায় ভোটাররাও কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে ভোট না হওয়ায় ভোটাররা কেন্দ্রে আসার উৎসাহ হারাচ্ছে। তাছাড়া মানুষের মধ্যে এখন ভোট দেওয়ার আগ্রহ অনেক কমে গেছে। এটার পেছনে একটি কারণ নয়, অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তবে বড় একটি কারণ হচ্ছে, সব দলের অংশগ্রহণে ভোট হলে এক ধরনের পরিবেশ থাকে, ভোটারদের উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকে। যেহেতু সব দলের অংশগ্রহণে ভোটগুলো হচ্ছে না, তাই ভোটার কম আসছে।

জোষ্ঠ রাজনীতিবিদ কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। যার কারণে মানুষ এই কমিশনের অধীনে হওয়া নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছেন না। জাতীয় নির্বাচনেও দেশের সিংহভাগ মানুষ ভোট দিতে যায়নি, স্থানীয় নির্বাচনেও যায়নি। তবে ভোটার কম আসার জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনই দায়ী নয় এর সঙ্গে অন্তত চারটি স্তর ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসিদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তারাও মাঠ পর্যায়ে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কমিশনের উপর। আর কমিশন যেহেতু জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না তারাও মনে করছে এই আউয়াল কমিশন ক্ষমতাসীন সরকারের সিগন্যালে চলে।

মেসেঞ্জার/হাওলাদার

Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 768