ছবি : মেসেঞ্জার
প্রতি ঈদের ন্যায় এবার ঈদেও তেঁতুলিয়ার ৬ শতাধিক শিশুকে ঈদের নতুন জামা ও নতুন টাকার নোট দিয়ে হাসি ফুটালো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিশুস্বর্গ।
শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার দর্জিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সীমান্ত ঘেষা কয়েকটি গ্রামের শিশুদের হাতে ঈদের উপহার হিসেবে নতুন জামা তুলে দেন পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য নাঈমুজ্জামান ভুইয়া মুক্তা।
অনুষ্ঠানে শামসুজ্জামান নাহিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম শফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন, ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী, মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সুজয় কুমার, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী, আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী মন্ডল, বিশিষ্ট সমাজসেবক মোখলেসুর রহমান ও শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবীর আকন্দ প্রমুখ।
এ ছাড়াও শিক্ষক আতাউর রহমান, আকরাম হোসেন জাকারিয়া, চন্দ্রা রানী জোয়ার্দ্দারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ শিশুস্বর্গ বিদ্যা নিকেতনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।
বক্তব্যে অতিথিরা বলেন, আজকের শিশুরা হচ্ছে আগামী দিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যত। সেই শিশুদের নিয়ে কাজ করছে শিশুস্বর্গ। তা অত্যন্ত ভালো কাজ। প্রতি বছর ঈদের সময় শিশুদের নতুন জামা ও নতুন টাকা দিয়ে যে আনন্দ সঞ্চার করেছেন, সে আনন্দ বিলিয়ে নিজেকে নিহিত করেছেন তা অনন্য উদাহরনমূলক কাজ।
শিশুস্বর্গের প্রতিষ্ঠাতা কবীর আকন্দ, তিনি এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও সুদুর নেত্রকোনা থেকে এসে এখানে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছেন হাজার শিশুদের মধ্যে। শিশুস্বর্গের এমন মহৎ উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানাই।
শিশুস্বর্গের প্রতিষ্ঠাতা কবির আকন্দ তার বক্তব্যে বলেন, আজ শিশুদের ঈদের উপহার দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটাতে পেরে মুখে খুব ভালো লাগছে। কেননা, এই শিশুরা আমার আনন্দ। তারা হাসলে আমার হৃদয় আনন্দে ভরে উঠে। কেননা এই শিশুদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্যই ২০০৮ সালে নিজের বেতনের একটা অংশ দিয়ে প্রান্তিক জনপদে ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলগামী করতে শিক্ষাবৃত্তি চালু করে শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম।
ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষায় আলোকিত করতে নিজের বেতনের একটা অংশ দিয়ে শিশুদের বই, খাতা, কলম দিয়ে শুরু হয়। পরবর্তীতে যুক্ত হয় আমার প্রিয় ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তাদের হাত ধরেই আজকের এই শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশন। আমরা প্রতি ঈদে শিশুদের নতুন জামা ও নতুন টাকা দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটাতে চেষ্টা করি। এ বছরও আমরা শিশুদের হাসি ফুটাতে চেষ্টা করেছি।
প্রধান অতিথি এমপি নাঈমুজ্জামান ভুইয়া মুক্তা বলেন, শিশুস্বর্গের এ ধরণের আয়োজন সত্যিই প্রশংসাজনক। সংগঠনটি সম্পর্কে তেঁতুলিয়ার তেঁতুলিয়ার কাজী আনিস ভাই ও এক আলোকচিত্রীর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী কবীর আকন্দের কথা।
তিনি নেত্রকোনা থেকে এসে তেঁতুলিয়ার সীমান্তঘেষা দর্জিপাড়ার মতো একটি গ্রামে শিশুদের নিয়ে শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখানকার শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে প্রতি ঈদে নতুন জামা দিয়ে আনন্দ দিচ্ছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের আয়ের একটি অংশ দেশের এই প্রত্যন্ত অঞ্চল তেঁতুলিয়ার শিশুদের জন্য পাঠায়। যাতে করে এখানকার শিশুরা ভালো থাকে। তারা আলোকিত হবে। আজকের এই শিশুরা যে সামান্য উপহার তারা পাচ্ছে, মনে হচ্ছে বছরের সেরা আনন্দ তারা পাচ্ছে। তাই শিশুস্বর্গের উদ্যোগকে স্বাগত ও ধন্যবাদ জানাই।
সীমান্তের অবহেলিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে এ ধরণের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এছাড়াও তিনি শিশু শিক্ষা উদ্বুদ্ধমূলক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে দেশের উত্তরের প্রান্তিক অঞ্চলে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করে আসছে জাহাঙ্গীরনগর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশন।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাবৃত্তিতে পড়ালেখা করছে ৬৫ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ২৫ জন শিক্ষার্থী দেশের নামদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। অনেকে বিদ্যাপাঠ শেষ করে প্রবেশ করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে কবীর আকন্দ এ অঞ্চলে শিশুদের কাছে আংকেল হয়ে উঠেছেন।
এছাড়াও শীতবস্ত্র, শিক্ষাবৃত্তি, স্বল্প শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান, নারীদের স্বনির্ভরতা গড়ে তুলতে প্রশিক্ষন, শিক্ষার্থীদের আইটি প্রশিক্ষণ, মাধ্যমিক স্কুল হিসেবে রওশন আরা মেমোরিয়াল শিশুস্বর্গ বিদ্যালয় চালু, পাঠাগার, নারী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ চালু করেছে শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশন।
মেসেঞ্জার/দোয়েল/আপেল