ছবি: মেসেঞ্জার
সারাদেশে যখন তাপদাহে বিপর্যস্ত তখনই সারা দেশব্যাপী বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে কিন্তু ঠাকুরগাঁও দেখা দিয়েছে তার উল্টো চিত্র। ঠিক এই সময়েই ঠাকুরগাঁওয়ের ৪ হাজার গাছ মৃত্যুর অপেক্ষায় খনন গুনতেছে। এতে ক্ষোপ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
গেল বছরে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী, আমজানখোর ও চাড়োল ইউনিয়নের প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তার ৫ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ওই রাস্তাগুলোর মধ্যে ৮ কিলোমিটার রাস্তায় নতুন গাছ লাগালেও বাকি রাস্তাগুলোতে গাছ লাগানোর কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এর মধ্যেই দরপত্রের মাধ্যমে আবারও ধনতলা ও পাড়িয়া ইউনিয়নের ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার ৪ হাজার গাছ কাটা শুরু হয়েছে। তাপদহের এই দুঃসময়ে গাছ কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।
জেলা বনবিভাগ বলছে, নিয়ম অনুযায়ী আয়তনের তুলনায় ২৫ ভাগ বনভুমি থাকার কথা থাকলেও ঠাকুরগাঁও জেলা রয়েছে ২ ভাগের বম বনভুমি রয়েছে। এসব গাছপালা কেটে ফেলা হলে শূন্য কোঠায় পৌছাবে বনভূমি। সবকিছু জানার পরেও গেল মাসে ৮ ইউনিয়নে রাস্তায় থাকা অবশিষ্ট গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য দরপত্র দিয়েছে বন বিভাগ। এর মধ্যে দুটো ইউনিয়নে শুরু হয়েছে গাছ কাটা।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দরপত্র পাওয়া দিনাজপুরের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ করা শ্রমিকরা রাস্তার গাছ কাটছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এ কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা। দরপত্রের কার্যাদেশ অনুযায়ী ৪ হাজার গাছ কাটবেন তারা। এক সপ্তাহে ৩ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে বলে জানান শ্রমিকরা।
বন বিভাগের আহবান করা দরপত্র অনুযায়ী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের লোহাগাড়া হইতে তিলকরা সরাকন্দি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও ধনতলা ইউনিয়নের পাঁচপীর থেকে ফুটানী হাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার, তিলময় বাবুর বাড়ী হতে এনামুল চেয়ারম্যানের বাড়ী হইয়া বাহার জিলা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও সিন্দুরপিন্ডি হইতে খোঁচাবাড়ী হইয়া তীরনই নদীর শেষ সীমানা ও দলুয়া হইয়া পান্তা ভিটা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারসহ ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার পাশের বিশাল আকৃতির গাছগুলোর গায়ে সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হয়েছে কাটার জন্য। এসব গাছে পাখির বাসাও দেখা গেছে।
মশালডাঙ্গী গ্রামের কৃষ্ণ রায় মাঠে কাজ করে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি জানান, রাস্তার ধারে থাকা গাছগুলোর ছায়ায় কৃষক ও শ্রমজীবি শ্রেণির মানুষেরা মাঠে কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেয়। এ তীব্র তাপদাহের মধ্যে এখন রাস্তার দু'পাশের বিশালাকৃতির গাছগুলো কাটা হলে মরুভুমিতে পরিনত হবে এলাকাটি। তাই এলাকাবাসীর দাবি প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে এই মুহুত্বে গাছগুলো না কেটে কিছুদিন পরে কাটলে এলাকাবাসী উপকৃত হতো।
পথচারী আব্দুস সালাম জানান, পরিবেশটা ঠান্ডা হলে গাছগুলো কাটুক তাতে আপত্তি নাই। এখন গাছগুলো কাটলে প্রচন্ড রোদে মানুষসহ প্রাণিকুলের জন্য পরিবেশটা খারাপ হতে পারে।
স্কুলছাত্র আবু শামিম (১২) জানান, গরমের কারণে আমাদের স্কুল বন্ধ রয়েছে। বাড়ী থেকে স্কুল ৭ কিলোমিটার দুরে। গাছগুলোর জন্য মাথার উপর ছাড়া না থাকলেও আরামে স্কুলে যাতায়াত করতাম আমরা। গাছগুলো কাটতে শুরু করেছে, স্কুল খুললে গরমে স্কুলে যেতে ছাতা ব্যবহার করতে হবে, আগের মত ঠান্ডা ও শীতল থাকনো রাস্তাটি।
জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকলেও রংপুর আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, শুক্রবার ঠাকুরগাঁও জেলায় দুপুরে তাপের প্রখরতা ছিল ৩৭ ডিগ্রী। গরমের তীব্রতায় মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। উপজেলার বেশ কিছু স্থানে বৃষ্টির জন্য ইশতেশকার নামাজ আদায় করেছে মুসল্লিরা। এ অবস্থায় গাছ কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার লোকজন।
সনগাও গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক আমানুল্লাহ জানান, রাস্তার পাশের গাছগুলো এই মুহুত্বে যেমন মানুষের জন্য প্রয়োজন, তেমনী পশু পাখিদের জন্যও প্রয়োজন। অনেক পাখি এখন গাছগুলোতে বাসা বানিয়ে ডিম দিয়েছে। প্রচন্ড তাপদাহের সময়ে পাখিগুলোর জন্য হলেও কিছুদিন পরে গাছগুলো কাটা উচিত।
পাড়িয়া ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী জানান, দরপত্র হয়েছে গাছ কাটবে ঠিকাদার। এতে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে গ্রামবাসীর দাবি গরমের দিনগুলো পার করে গাছ কাটা হউক। এটা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং বন বিভাগকে প্রয়োজনে লিখিত আকারে জানাবো আমরা।
ঠাকুরগাঁও বনবিভাগের বন কর্মকর্তা শফিউল আলম মন্ডল মুঠোফোনে জানান, গাছগুলো কাটার উপযোগী এবং যারা লাগিয়েছেন তাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে দরপত্র আহবান করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় গাছগুলো কাটা বন্ধ রাখার জন্য ঠিকাদার ও বন বিভাগকে জানিয়েছি। তাপদাহ কমে গেলে দরপত্র অনুযায়ী ঠিকাদার কাটবেন।
মেসেঞ্জার/আরিফ/ফারদিন