ঢাকা,  মঙ্গলবার
২১ মে ২০২৪

The Daily Messenger

তাপদাহে তালপাখা বানানোর ধুম পড়েছে বিদ্যানন্দ গ্রামে

এম এ  কালাম ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ১ মে ২০২৪

তাপদাহে তালপাখা বানানোর ধুম পড়েছে বিদ্যানন্দ গ্রামে

ছবি : ডেইলি মেসেঞ্জার

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ১০ নম্বর কালাদহ ইউনিয়নের বিদ্যানন্দ গ্রামে তালপাতার হাতপাখা বানানোর ধুম পড়েছে। আমার নাম তালের পাখা, শীতকালে দেইনা দেখা, গ্রীষ্ম কালে প্রাণের সখা।

তীব্র গরমে তালপাতার কারিগরদের এখন অনেক কদর। তাই গ্রামের সর্বত্র মেলা জমিয়ে কারিগররা আপন মনে বুনে চলেছেন একের পর এক দৃষ্টিনন্দন তালপাখা। আর সেসব তালপাখার কদর রয়েছে দেশজুড়েই। প্রতি বছর অন্তত ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার তালপাখা বিক্রি হয় বিদ্যানন্দ গ্রাম থেকে।

বাজারে প্লাস্টিকের হাতপাখা পাওয়া গেলেও তা তালের হাতপাখা বা খেজুর পাতা, কাপড়ের তৈরি নকশীপাখার মর্যাদা নিতে পারেনি। তালের হাতপাখার বাতাস একদম শীতল। আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় হাতপাখার কদর দিনে দিনে বাড়ছেই। হাতপাখার চাহিদা গরমে কখনো কমে না। গ্রীষ্মের গনগনে সূর্যতাপ ও খরায় নাস্তানাবুদ মানুষের কাছে হাতপাখার কদর এখন আরও বেশি। এ তীব্র তাপদাহ থেকে নিস্তার নেই কারও। মাতৃক্রোড়ের শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ, চাকুরে কিংবা দিনমজুর, ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল সবাই। 

তালপাখার গ্রাম হিসাবে পরিচিত বিদ্যানন্দে ৫০০ শ কারিগর রয়েছে তালপাতা পাখা তৈরির। গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহী তালপাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রামের বিভিন্ন বয়সী মানুষ। সংসারের কাজের পাশাপাশি পুরুষের সঙ্গে তালপাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন গ্রামের অনেক নারী। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজের চাপ বাড়ে তালপাখা গ্রামে’র মানুষদের। এ সময় তালপাতা দিয়ে বানানো পাখার চাহিদা বেড়ে যায় বহু গুণ। তালপাতার পাখা বানিয়ে সচ্ছলতাও ফিরেছে অনেক সংসারে। 

মহিলা তালপাতা কারিগররা জানান, পাতা সংগ্রহ, ধোয়া, শুকানো এবং পরিষ্কার করার কাজটি করে পুরুষরা। আর পাখা আকৃতির মতো পাতাগুলো কেটে রং দেওয়া, বাঁশের কাঠি যুক্ত করা, সুতা দিয়ে বাঁধাইয়ের পর পাখার পূর্ণ রূপ দানে নারীরা সিদ্ধহস্ত। 

তারা জানান, একজন নারী প্রতিদিন ৬৫ থেকে ৭৫ পিস পর্যন্ত পাখা তৈরি করতে পারেন।

পুরুষ কারিগররা জানান, জেলা ও জেলার বাইরে থেকে পাখা তৈরির প্রধান কাঁচামাল তালের পাতা পিস প্রতি কেনা হয় ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে। প্রতি পিস তালপাতা থেকে দুটি পাখা তৈরি হয়। প্রতিটি বাঁশ কেনা হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। একেকটি বাঁশে পাখা হয় শতাধিক। প্রতিটি পাখা তৈরিতে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ টাকা। তৈরি পাখাগুলো মান ভেদে পাইকারি বিক্রয় হয় ১৮ থেকে ২৫ টাকায়। আর হাত বদলে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত গিয়ে সেটির মূল্য দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা। এখানকার তৈরিকৃত পাখাগুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরেও বিক্রি করা হয়। তবে তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে ওঠানামা করে পাখার চাহিদা। 

মৌসুমের শুরুতে ১৩০ থেকে ১৪০টি পাখা তৈরি হলেও গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০০ থেকে ২৫০টি পাখা তৈরি করতে হচ্ছে। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হাতপাখার প্রধান উপকরণ ‘তালপাতার’ সংকটের কথাও জানান তিনি। 

তালপাতার পাখা শীত মৌসুমে চলেনা। তখন কারিগররা বেকার থাকেন। সুদ মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হলে কারিগর স্বাসছন্দে জীবনযাপন করতে পারত বলে জানান জামাল উদ্দিন। তিনি জানান, মূলত স্থানীয় পাইকাররা কারিগরদের কাছ থেকে পাখা কিনে রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করেন। এসব অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে ট্রাকে করে সরাসরি কারিগরদের কাছ থেকে পাখা কিনে নিয়ে যান। প্রতি বছর অন্তত ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার তালপাখা আমরা বিক্রি করি শুধু বিদ্যানন্দ গ্রাম থেকে।

অন্যদিকে পাখা গ্রাম থেকে সংগৃহীত পাখা, আশপাশের জেলা উপজেলার বিক্রয়কারী একাধিক পাইকার জানান, এখানকার তৈরি পাখার গুণগত মান ভালো থাকায় বাজারে এর কদর রয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকার দরুন বিক্রি এবং মুনাফা দুটোই সন্তোষজনক বলেও জানান তারা।

মেসেঞ্জার/সজিব

Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 768