ঢাকা,  রোববার
১৯ মে ২০২৪

The Daily Messenger

বিবিএস বেকারত্ব জরিপে গলদ রয়েছে, বলছেন বিশ্লেষকরা

আবদুর রহিম

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ৭ মে ২০২৪

বিবিএস বেকারত্ব জরিপে গলদ রয়েছে, বলছেন বিশ্লেষকরা

ছবি : ডেইলি মেসেঞ্জার

আকবর হোসেন। চার বছর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। দীর্ঘ এই সময়ে একটি চাকরির জন্য কয়েক ডজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু এখনো তিনি চাকরির মুখ দেখেননি। এমন শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা উল্লেখ না করেই গতকাল প্রান্তিকের সূচকে বেকার সংখ্যার কথা জানায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কিন্তু সব শেষ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ( টিআইবি) বলছে, দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর শকতরা ৪৭ ভাগ বেকার। বিবিএস জানায়, বর্তমানে দেশে ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে তবে কমেছে নারী বেকারের সংখ্যা। ২০২৩ সাল শেষে গড় বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৭০ হাজার। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের (মার্চ-জানুয়ারি) তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে লাখ ২০ হাজার।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বেকারত্বে হিসাবের এই পদ্ধতিতে গলদ আছে। এর বাইরে বাংলাদেশে প্রচুর বেকার আছে। তাদের কর্মজীবী হিসেবেই দেখানো হয়। এছাড়া যারা কাজে আছেন তাদের বড় একটি অংশের আয় খুবই কম। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের চার ভাগের এক ভাগ এখনো বেকার। দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ায় এই সংখ্যা আরও বাড়ছে। বিশ্লেষকদের সঙ্গে এমন অভিযোগ দেশের বেকার যুবকদেরও। তারাও বলছেন বিবিএসের এই এই তথ্যতে শিক্ষিত যুবকদের তথ্য গোপন করা হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে চাকরি প্রত্যাশী আকবর হোসেন বলেন, গত চার বছর ধরে একটি পদের বিপরীতে প্রায় দুই হাজার প্রার্থীর সঙ্গেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঢাকায় থাকলে একটি পরীক্ষার পেছনে তার ৮০০-১০০০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু কখনো কখনো তাকে ফেনী থেকে এসেও পরীক্ষা  দিতে হয় তখন একটি পরীক্ষায় তার খরচ পড়ে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। এই যুবক বেকার থাকলেও তার হিসাব নেই বিবিএসের জরিপে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, অর্থনীতির সংখ্যায় বেকারত্ব বলতে গেলে বাংলাদেশে প্রায় জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ বেকারত্ব রয়েছে। বলা চলে চার ভাগের এক ভাগই বেকার। বিবিএস যে সংখ্যা বলছে এটা ঠিক না এটা গ্রহণ করা যায় না। দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ায় বেকারত্ব আরও বেড়ে যাচ্ছে। একজন শ্রমিক কাজ করে যদি সে ন্যায্য না পান কিংবা কর্ম ঘণ্টা যোগ্যতার আলোকে যদি কেউ আয় না করতে পারেন সেও বেকার। এগুলোতো বিবিএসের জরিপে আসে না। এটাকে সঠিক তথ্য বলা চলে না।

অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ইমেরিটাস . এটিএম নুরুল আমিন ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন,বেকার সংখ্যা নিয়ে বিবিএস যে তথ্য দিচ্ছে তা সঠিক বলে মনে করছি না। উন্নত রাষ্ট্রের সঙ্গে গরীব দেশের সংজ্ঞা মেলানো হচ্ছে এটা ঠিক নয়। আমাদের দেশের অসহায় মানুষ তিনদিনের বেশি না খেয়ে থাকতে পারেন না। কাজ না থাকলে খাওয়ার জন্য হলেও তাকে কিছু একটা করতে হয়। বাচার জন্য কিছু একটা করার পর তাকে আর বেকারের সংখ্যায় রাখায় হয় না। এছাড়া দেখেন একজন শ্রমিক আট ঘণ্টা কাজ করেও যদি সে তার প্রাপ্য না পায় সে কিন্তু অর্থনীতির সংজ্ঞায় বেকার, এছাড়া একজন শিক্ষিত যুবক যখন তার শিক্ষা অনুযায়ী চাকুরী পান না সেও কিনা বেকার এগুলো কিন্তু বিবিএসের জরিপে আসে না। বিবিএসের জরিপেই প্রকৃত হিসাব বলা যায় না।

সোমবার ( মে) ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জরিপ প্রতিবেদনে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বেকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। বিবিএস জানায়, পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে, কমেছে নারী বেকার। গত মার্চ মাস শেষে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪০ হাজার। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে (মার্চ-জানুয়ারি) সময়ে সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১০ হাজার। ফলে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ হাজার নারী বেকার কমেছে। এখন নারী বেকারের সংখ্যা লাখ ৫০ হাজার।শ্রমশক্তিতে এখন কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার নারী-পুরুষ আছেন। তাদের মধ্যে কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার লোক কর্মে নিয়োজিত, বাকিরা বেকার। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকেও ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার ছিল। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি। বর্তমানে বেকারের হার দশমিক ৫১ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের গড় বেকারের হারের চেয়ে কিছুটা বেশি। ২০২৩ সালের গড় বেকারের হার ছিল দশমিক ৩৬ শতাংশ।

ছাড়া শ্রমশক্তির বাইরে বিশাল জনগোষ্ঠী আছে তারা কর্মে নিয়োজিত নয়, আবার বেকার হিসেবেও বিবেচিত নয়। এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার। তারা মূলত সাধারণ ছাত্র, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক নারী-পুরুষ, কাজ করতে অক্ষম ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং কর্মে নিয়োজিত নন বা নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক গৃহিণী।

মেসেঞ্জার/হাওলাদার

Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 768