ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
১৬ মে ২০২৪

The Daily Messenger

রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস

তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত প্রাণিকূল

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৪২, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস

ছবি : মেসেঞ্জার

পদ্মাপাড়ের অঞ্চল রাজশাহীতে তাপমাত্রা বাড়ছেই। বইছে আগুনের মত উত্তপ্ত বাতাস (লু-হাওয়া) পহেলা এপ্রিল মৃদু তাপপ্রবাহ দিয়ে অঞ্চলে শুরু হয়েছিল গরমের দাপট। এরপর মাঝারি তাপপ্রবাহ। তারপর শুরু হয় তীব্র তাপপ্রবাহ।

তারপর টানা দুই সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পাশেই থাকছে। এদিকে টানা তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত প্রাণিকূল। বৃষ্টির জন্য হাহাকার চলছে। গত রোববার হিট স্ট্রোকে রাজশাহীতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

খরতাপে ঝরে পড়ছে আম লিচুর গুটি। অন্যদিকে চলমান তাপপ্রবাহে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল চত্ত্বরের গাছের ডালের বাসায় কেবল উড়তে শেখা বকের ছানাগুলো পড়ে মারা যাচ্ছে।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) রামেক সংলগ্ন বাংলাদেশ পরমাণু চিকিৎসাকেন্দ্রের পাশে ১০টির বেশি কানি বকের মৃত ছানা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিগত কয়েকদিন থেকে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরমানু চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্মচারীরা। তারা পানি খাইয়ে কানি বকের ছানা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১২ শতাংশ। সকাল ৬টায় দিনের তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের তিন দিনও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রির ওপরে। এর আগে গত বছরের ১৭ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪২. ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ২০০৫ সালের এপ্রিলেও রাজশাহী অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২. ডিগ্রি সেলসিয়াস।

উর্ধ্বমুখি তাপমাত্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে রাজশাহী অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিরূপ প্রকৃতির কাছে যেন হার মানছে সবকিছুই। থমকে দাঁড়িয়েছে জনজীবন।

 

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ২০ এপ্রিল বিকেল ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছি ৪১ দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল। যা এযাবতকালে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তাপমাত্রার রেকর্ড আর ভাঙেনি।

জানা গেছে, রামেক হাসপাতাল চত্ত্বরের গাছে পাখির কলোনি গড়ে উঠেছে। বড় বড় গাছে পাখিরা বাসা বেঁধে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা নিয়ে চলে যায়। আবার ডিম দেওয়ার সময় ফিরে এসে বাসা বাঁধে। বর্তমানে হাসপাতাল চত্বরের গাছে বকের বাসা রয়েছে।

রামেক হাসপাতালের কর্মচারী স্থানীয়রা বলছেন, রামেক হাসপাতাল চত্ত্বরের প্রায় প্রতিটি গাছে বাসায় বকের ছানা রয়েছে। সদ্য উড়তে শেখা বাচ্চাগুলো প্রখর তাপ সহ্য করতে না পেরে বাসা থেকে উড়ে ছায়াযুক্ত জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। সময় পিপাসায় কাতর হয়ে অনেক বাচ্চা নিচে পড়ছে। উড়তে না পেরে কোনটি মারা যাচ্ছে। পানি খাওয়ালে কোনোটি আবার উড়ে যাচ্ছে।

সোমবার দুপুরে রামেক হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, পরমাণু চিকিৎসাকেন্দ্রের গাড়ির চালক সোহেল, রিপন পরিচ্ছন্ন কর্মচারী বিকাশ পড়ে যাওয়া একটি বকের ছানাকে পানি খাইয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। চিকিৎসাকেন্দ্রের পূর্ব পাশের দেয়াল ঘেঁষে ভাজা বিক্রি করেন রোকনুজ্জামান।

তিনি বলেন, দুই-তিন দিন ধরে গাছ থেকে বকের ছানা পড়ছে আর মরছে। একটু পানি খাইয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাচ্ছে। তিনি রোববার তিনটি বকের ছানাকে পানি খাইয়েছেন। তারপর ছানাগুলো উড়ে গেছে। তিনি চিকিৎসাকেন্দ্রের পাশে সোমবার ১০টির বেশি মরা বকের ছানা পড়ে থাকতে দেখান।

নাটোরের গুরুদাসপুর থেকে রামেক হাসপাতালে রোগীর সাথে এসেছেন আব্দুল কুদ্দুস। তিনি জানান, একটা বকের ছানা তার সামনেই গাছ থেকে রাস্তায় পড়ে যায়। তিনি বোতল থেকে একটু পানি খাইয়ে দেন। এরপর চানাটি একাই উড়ে যায়।

গাছ থেকে বকের ছানা পড়ে মরার খবর পেয়ে রবিবার রাজশাহী বনবিভাগের বন্যপ্রাণী প্রকৃতি সংক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির লোক পাঠিয়েছিলেন। পড়ে যাওয়া পাখির ছানা উড়তে না পারলে উদ্ধার করে তাদের রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে যেতে বলেন। পরে তার লোকজন তিন-চারটি বকের ছানাকে পানি খাইয়ে সুস্থ করে উড়িয়ে দিয়েছে।

জাহাঙ্গীর কবির জানান, প্রখর তাপে উড়তে শেখা বকের ছানারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আর ফিরতে পারছে না। তখন অসুস্থ হয়ে পড়ে গাছ থেকে পড়ে যাচ্ছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. গাওসুজ্জামান জানান, ভারী বর্ষণ ছাড়া তীব্র তাপপ্রবাহ আপাতত কমার সম্ভাবনা নেই।

মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/আপেল

dwl

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 770