ঢাকা,  মঙ্গলবার
২১ মে ২০২৪

The Daily Messenger

দূর্যোগপ্রবণ গাইবান্ধায় নেই আবহাওয়া অফিস 

তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১৩:৩৬, ১ মে ২০২৪

দূর্যোগপ্রবণ গাইবান্ধায় নেই আবহাওয়া অফিস 

ছবি: মেসেঞ্জার

তীব্র শীত, খরা, বন্যায় বিপর্যস্ত উত্তরের জনপদ গাইবান্ধা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছরই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ।

বৃহত্তর রংপুর থেকে ১৯৮৪ সালে মহকুমা থেকে গাইবান্ধাকে জেলা হিসেবে উন্নীত করার পর থেকে সকল সরকারি অফিসের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হলেও নির্মাণ হয়নি আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট কোনো অফিস। ফলে সঠিক সময়ে সঠিক পূর্বাভাস না পেয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই জনপদ।

জানা যায়, প্রতিবছরই বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাইবান্ধা জেলার কয়েক লাখ মানুষ। আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস না থাকায়  দূর্যোগের মাত্রা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কোন তথ্য পায় না ফলে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

এদিকে যেকোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে তথ্য সংকটে পড়েন গাইবান্ধায় কর্মরত সাংবাদিকরা। তীব্র শীত ও খরার সময় তথ্যের জন্য অনলাইনে খোঁজাখুঁজি করতে হয়। সেখানে সঠিক তথ্য না পাওয়া গেলে রংপুর আবহাওয়া অফিসে ফোন করে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়, যা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি মোমেনুর রশিদ সাগর বলেন, বর্তমানে সারা দেশের মতো গাইবান্ধা জেলাতে তীব্র তাপদাহ বইছে, কিন্তু দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত ছিলো তা জানতে আমাকে রংপুর আবহাওয়া অফিসে কয়েকবার ফোন করে জানতে হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা একটা দূর্যোগ প্রবন এলাকা তাই এখানে আবহাওয়া অফিস স্থাপন খুবই জরুরী।

এছাড়া বন্যা প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত এই জেলায় কত মিলিমিটার বৃষ্টি পাত হলো তা জানার কোন উপায় না থাকায় প্রতি বর্ষা মৌসুমেই নিম্নাঞ্চলের শত শত হেক্টর জমির ফসল এক রাতের বৃষ্টিতে পানির নিচে তলিয়ে যায়। 

ফুলছড়ি উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গাইবান্ধায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় বন্যার আগাম সতর্ক বার্তা পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ফলে আমাদের এলাকায় প্রতিবছর বন্যায় ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সঠিক সময়ে যদি বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যেত তাহলে বন্যার ভয়াবহতা কিছুটা কমে যেতো।

জলবায়ু পরিবর্তন ও ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ করা পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ নেট গাইবান্ধা জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়ক মারুফ হাসান বলেন, গাইবান্ধা জেলার অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষি কাজ। আর কৃষি খাতটি সম্পূর্ণ আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল।  গাইবান্ধা জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় এ অঞ্চলের আবহাওয়ার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার কোন উপায় নেই । কৃষকরা এখনো অনুমানের উপর ভিত্তি করে চাষাবাদ করছে। আসন্ন প্রতিকুল আবহাওয়া সম্পর্কে তাদের ধারণা না থাকায় প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না এতে করে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, রংপুর আবহাওয়া অফিসের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান মুঠোফোনে বলেন, গাইবান্ধাসহ উত্তরের ৬ জেলায় আবহাওয়া অফিস নেই। প্রতি বছর খরা, বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এই জেলা গুলোতে কোটি কোটি টাকার ফসলহানি হয়। বৈরী আবহাওয়ায় কোন সতর্ক বার্তা দেওয়ার থাকলে জেলা পর্যায়ে সঠিক সময়ে তথ্য পাঠাতে পারছি না। আমরা আমাদের সমস্যার কথা বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

এসময় তিনি আরও বলেন, গাইবান্ধায় একটি পূর্ণাঙ্গ আবহাওয়া অফিস স্থাপন করা হলে, ঐ অঞ্চলের মেঘের অবস্থান, গতি, দিক, তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হলে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে। এছাড়া  ভূমিকম্প ও বড় ধরনের বন্যার তথ্য সঠিক সময়ে দেওয়া যাবে। আগাম বৃষ্টিপাতের তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে কৃষকদের ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাবে। 

মেসেঞ্জার/সিয়াম/ফারদিন

Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 768