ঢাকা,  রোববার
১৯ মে ২০২৪

The Daily Messenger

মাইশা হত্যার রহস্য উন্মোচন, ঘাতক মায়ের স্বীকারোক্তি

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:২০, ৬ মে ২০২৪

আপডেট: ১৬:৩৪, ৬ মে ২০২৪

মাইশা হত্যার রহস্য উন্মোচন, ঘাতক মায়ের স্বীকারোক্তি

ছবি : মেসেঞ্জার

আট বছর বয়সের মাইশা খাতুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোগাইল বগাদি গ্রামে নানা বাড়িতে মোবাইল চার্জারের তার গলায় জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে এমন ইতিহাস নিয়ে তার স্বজনরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর সকাল ১০ টার দিকে হাসপাতালে মৃত্যু হয় শিশুটির।

তারপর মৃত মাইশা'র মা পপি খাতুন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে এমন তথ্য সম্বলিত একটি লিখিত অভিযোগ করলে অফিসার ইনচার্জ চুয়াডাঙ্গা সদর থানা ওইদিনই রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর থানা একটি অপমৃত্যু মামলা করেন যার নম্বর ১৪।

এই অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতিকুর রহমান জুয়েল রানা তদন্তকালে শিশুটির মৃত্যু বিষয়ে ঘটনাস্থল থেকে নানা ধরণের নেতিবাচক তথ্য পাওয়ার কারণে মেয়েটির দুর্ঘটনামূলক স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।

প্রসঙ্গতঃ শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ দাফনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশ সুপার চুয়াডাঙ্গার মৌখিক নির্দেশে এই নাবালিকা কন্যা শিশু সন্তানের মৃত্যুটি হত্যাজনিত না দুর্ঘটনামূলক তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য মৃত্যুর সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতসহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কর্তৃক সুনির্দিষ্ট মতামত গ্রহণের জন্য ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেন।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করেন। অতঃপর শিশুটির নানা মোঃ শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে আলমডাঙ্গা থানার মামলা নম্বর- ০১, তারিখ ০৩/০৫/২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ, ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড অনুযায়ী একটি খুন মামলা রুজু হয়।

এরপর ৫ এপ্রিল (শুক্রবার) সকাল ৮ টায় আর এম ফয়জুর রহমান, পুলিশ সুপার চুয়াডাঙ্গা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোঃ আনিসুজ্জামান, ডিআইও-১ আবু জিহাদ খান ও মামলা তদন্তকারী অফিসার এসআই বিকাশ কুন্ডুসহ ঘটনাস্থলে পরিদর্শনকালে শিশু মাইশা'র মা পপি খাতুনের কথা-বার্তায় সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসেন।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি স্বেচ্ছায় এই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেন। কেন এই হত্যাকান্ড ঘটানো হলো? তার কোন সহযোগী ছিল কিনা? এসব প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন, তিনি নিজেই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন।

পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান জানান, তদন্তে নিহত মাইশার মা পপি খাতুন এর পূর্বাপর পারিবারিক ব্যক্তি জীবন, বৈবাহিক জীবন অতঃপর বিবাহ বিচ্ছেদ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি পাওয়া গেছে যা এই হত্যাকান্ডের নেপথ্যে অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে।

এই মামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃত আসামি পপি খাতুন বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের বড় সফলতা হচ্ছে, একটি স্পর্শকাতর খুন মামলা রুজু হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। ঘটনায় জড়িত মূল কিলার এই নাবালিকা কন্যা সন্তানের আপন মা পপি খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে। যেহেতু এটি একটি স্পর্শকাতর খুনের ঘটনা সেহেতু চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। তদন্তকালে প্রাপ্ত সকল তথ্যাদি যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনায় জড়িত আসামীকে বিচারের মুখোমুখি করার লক্ষ্যে বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।'

নিহত মাইশা খাতুন (৮), কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাইফুল ইসলামের কন্যা।

সোমবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০ টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস বিফ্রিংয়ে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি তুলে ধরেন পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান।

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এ্যান্ড অবস নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আনিসুজ্জামান, ডিআইও-১ আবু জিহাদ খান, আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) আবু সাঈদসহ চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মেসেঞ্জার/লিটন/আপেল

dwl

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 768