সহিদা খাতুন। ছবি: ডেইলি মেসেঞ্জার
জীবনের স্বপ্ন ছিল একজন নারী উদ্যোক্তা হয়ে অসহায় জীবন থেকে সুখ- সমৃদ্ধতায় ভরা জীবনের অধিকারী হবেন। এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করবেন। এই স্বপ্ন বুকে ধারণ করেই ২০১৫ সালের দিকে নিজ বাড়ি ছেড়ে পাড়ি জমান ঢাকায়। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা তার এই স্বপ্নকে নিমিষেই ধুলিসাৎ করে দেয়। সেই স্বপ্ন দেখা তরুণী সহিদা খাতুন (২৮) এখন পঙ্গুত্ব জীবন যাপন করছেন। হাঁটাচলা করতে এলবো ক্র্যাচ এখন তার জীবনসঙ্গী। সংবাদ প্রতিবেদনের এই স্বপ্নময় নারীর বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নিভৃতপল্লী ব্যাপারিটারী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সহিদ মিয়ার মেয়ে।
জানা গেছে, অসহায় পিতা সহিদ মিয়ার ঘরে জন্ম নেয়া সহিদা খাতুন ছোট থেকেই অভাবী পিতা-মাতা ও ভাইবোনদের সুখ দেওয়ার জন্য অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। ২০০৯ সালের দিকে সহিদাকে পার্শ্ববর্তী এলাকার এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেন তার পিতা-মাতা।
এখানে সহিদার গর্ভে একপুত্র সন্তানের জন্ম হয়। তার স্বামী খারাপ মানসিকতার সেটি জানতো না সহিদা। বিয়ের পর স্বামীর মানসিক নির্যাতনের খড়গ চলে আসে তার উপর। প্রায়ই তাকে মানসিক নির্যাতন চালাতো তার স্বামী।
এক পর্যায়ে সহিদা তার বুকের পুত্র সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়িতে। অসহায় বাবার বাড়িতে না থেকে পুত্রসন্তান সৌরভ হোসেন সজীবকে পার্শ্ববর্তী একটি হাফিজীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে তিনি গার্মেন্টেসে কাজ করার জন্য ঢাকায় যান।
ঢাকার বাইপেলের একটি গার্মেন্টেসে সামান্য বেতনে কাজ করেও নতুনভাবে জীবন চলার পথ খুঁজে পান সহিদা। এখান থেকেই একজন নারী উদ্যোক্তা হয়ে অসহায়ত্ব থেকে সুখ-সমৃদ্ধতায় ভরা জীবনের অধিকারী হওয়ার স্বপ্ন ও এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টির স্বপ্ন দেখেন সহিদা।
কিন্তু ২০২৩ সালের একটি দুর্ঘটনা সহিদার স্বপ্নকে বাঁধাগ্রস্ত করে ফেলে। সহিদা ঢাকায় তার ভাড়া বাসার বাথরুমে পা পিছলে পড়েন। এতে তার ডান পায়ের হিটজয়েন্ট নষ্ট হয়ে যায়। এরপর গার্মেন্টে কাজ করা উপার্জিত সঞ্চয়ী অর্থ দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শ্রীপুরের ফজিলাতুননেছা হাসপাতাল, ঢাকার ইবনেসিনা হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকদের চিকিৎসা নেন।
সহিদাকে চিকিৎসা প্রদান করেন অর্থোপেডিক ডাক্তার অসিম কুমার দাস, অর্থোপেডিক ডাক্তার মাহাবুল আলম, অর্থোপেডিক ডাক্তার রুহুল আমিন ও অর্থোপেডিক ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম। প্রথমদিকে সবাই ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ প্রদান করলেও এতে আরোগ্যলাভ না হওয়ায় পরবর্তীতে ডাক্তার অসিম কুমার দাস সহিদাকে এমআরআই করার পরামর্শ দেন।
ডাত্তারের পরামর্শে এমআরআই করা হলে রির্পোটে দেখা যায় তার ডান পায়ের হিটজয়েন্ট নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হিট জয়েন্টের জন্য অপারেশন অপরিহার্য বলে ডাক্তাররা তাকে জানান। ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের অর্থোপেডিক ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাংলাদেশে একটি পায়ের হিটজয়েন্টের অপারেশন করাতে ৪ লাখ টাকা লাগবে। তবুও অপারেশনের পর ওই পা স্বাভাবিক হওয়ার সংশয় আছে।
তবে ভারতের চেন্নাইয়ে সফলভাবে এই অপারেশন করাতে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলেও জানান ডাক্তার। ডাক্তারের এই পরামর্শে অসহায় সহিদা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে ভারতের চেন্নাইয়ে তার পায়ের অপারেশন করাতে চান। কিন্তু এতো টাকা সংগ্রহ করবে কীভাবে?
এ অবস্থায় সহিদা খাতুন দেশ-বিদেশের স্ব-হৃদয়বান দানশীল মানুষের আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন। সহিদা তার হাঁটা-চলার ক্র্যাচ ফেলে স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা করার আকুতি প্রকাশ করেছেন।
অসহায় তরুণী সহিদা জানান, আমি এক অসহায় নারী। আমি একজন নারী হয়ে সকলের কাছে সবিনয় অনুরোধ করছি আমার পঙ্গুত্ব জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। আমার ব্যাংক একাউন্ট, বিকাশ, নগদ, রকেট একাউন্টে আর্থিক সাহায্য পাঠান।
অসহায় সহিদা খাতুনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে ও বিকাশ, নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্টে সাহায্য পাঠানোর জন্য ০১৭৮৮-৭৯৩১২৩ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। এ ছাড়া ‘মোছাঃ সহিদা খাতুন- সঞ্চয়ী হিসাব নং ০২২০১৩৪৮২৩৮৫১, উপ-শাখা আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম’ বরাবর আর্থিক সাহায্য পাঠানো যবে।
মেসেঞ্জার/হাওলাদার