রাশেদা কে চৌধুরী, ড. এটিএম নুরুল আমিন, ও যতীন সরকার। ছবি : ডেইলি মেসেঞ্জার
দেশের তাপমাত্রা উঠল ৪৩ ডিগ্রিতে। মৃদু থেকে মাঝারি আবার কোথাও কোথাও বইছে দাবদাহ। বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। ক্লাসে উপস্থিতিও কম। সন্তানদের পড়াশোনা, পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বৃহস্পতিবার (২ মে) পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে একদিন পরেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আইনজীবীরা জানিয়েছেন এখনই শিক্ষামন্ত্রী আদালতের বিরুদ্ধে আপিলে যাচ্ছেন না। অন্যদিকে মন্ত্রী আরেকটি অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বলেছেন, প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার মান ধরে রাখতে প্রয়োজনে শুক্রবারেও ক্লাস নেওয়া হবে।
আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলমান দাবদাহে প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নিয়ে অভিভাবক ও সচেতন মহলের একাংশ থেকে দাবি উঠলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের থেকে এখন দীর্ঘমেয়াদি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও অনলাইনে ক্লাসের পক্ষে বড় অংশই মত দিচ্ছেন না। দেশের সব শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে প্রাকৃতিক বিষয়টি অঞ্চলভিত্তিক মোকাবিলা করার বিষয়ে মতামত দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, আমরা একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি। এখনই অনলাইনে ক্লাসের বিষয়টি প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছি না। এটা নিয়ে গবেষণার বিষয় রয়েছে। হুট করেই একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাবনার বিষয় আছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের কারণে এখনো শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারছে না। বিদ্যুৎ যদি না থাকে, ডাটা যদি না থাকে কীভাবে বাচ্চারা অনলাইনে পড়বে। ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর সুবিধার কথা চিন্তা করে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।
তিনি বলেন, আপনারা খোঁজ নিলে দেখবেন সরকার স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা দিলেও কোচিং কিন্তু ঠিকই চলছে। গরমের এই প্রাকৃতিক বিষয়টি এবারই আমরা বড় আকারে মুখোমুখি হয়েছি, অনেক অভিজ্ঞতা পেয়েছি। আগামীতে হয়তো বিকল্প বিষয়গুলো অভিজ্ঞতার আলোকে ঠিক করা যেতে পারে। এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, সিলেটসহ অনেক যায়গায় কিন্তু ঢাকার মতো গরম নেই। এখন ঢাকার সিদ্ধান্ত সিলেটের উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। প্রাকৃতিক বিষয়গুলো অঞ্চলভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে, যেভাবে অতীতেও করা হয়েছে।
শিক্ষাবিদ ও প্রফেসর ইমেরিটাস ড. এটিএম নুরুল আমিন ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। করোনার সময় আমাদের ছেলেমেয়েরা অনলাইনে ক্লাস করে অভ্যস্ত হয়েছে আবহাওয়াবিদদের পরামর্শের আলোকে অনলাইনে ক্লাসের বিষয়টি প্রয়োজন রয়েছে কি না ভাবা যেতে পারে। যে পরিমাণ তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে এত দ্রুত স্কুল কলেজ খোলা প্রয়োজন আছে আমি মনে করি না। সময় বাড়ানোই যৌক্তিক মনে করছি। এই তাপদাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে পরিবেশের বিষয়ে আমাদের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। আমরা পুরো শহরকে ইটের শহর বানিয়ে ফেলেছি । বসবাসের অনুপযোগী শহর করে ফেলেছি। আজ এবং আগামীতে আমাদের বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ এবং বাঁচার শহর গড়ে তুলতে সরকার নগরীর অভিভাবক সবাইকে গাছপালা লাগানোর বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, শিক্ষার্থীদের মঙ্গল বিষয়গুলো ভাবা দরকার,সরকার ভাবছে, স্কুল কলেজ বন্ধ করে অনলাইনে ক্লাসের প্রয়োজন আছে কি না এ বিষয় যারা বেশি অভিজ্ঞ তারাই ভালো বলবেন, আমি কিছু বলতে চাই না।
মেসেঞ্জার/হাওলাদার