ছবি : মেসেঞ্জার
ঢাকার সাভারে এক শিশুকে অপহরণ করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে সৎ বাবাসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় অপহৃত ৮ বছরের শিশু ইমামুলকে উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে সাভার মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) আব্দুল্লাহিল কাফী।
গ্রেপ্তরকৃতরা হলেন- চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার পাটারি বাড়ি পদুয়া গ্রামের সুখ চাঁনের ছেলে মো. মোসলেম পাটোয়ারী (৩৮) ও একই থানা এলাকার সাহেদাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মতিনের ছেলে মো. মোশাররফ হোসেন (৫২)।
এদের মধ্যে মোসলেম পাটোয়ারী অপহৃত শিশুটির সৎ বাবা এবং মোশাররফ হোসেন তার সহযোগী। তারা উভয়েই নেশাগ্রস্ত বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফী জানান, গত ২১ এপ্রিল বিকেল ৩ টার দিকে সাভারের ইমান্দিপুর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে পোশাক শ্রমিক পারুল বেগমের প্রথম স্বামী তরিকুল ইসলামের ঔরসজাত ৮ বছরের শিশু পুত্র ইমামুলকে অপহরণ করেন সৎ বাবা মোসলেম পাটোয়ারী ও তাঁর সহযোগী মোশাররফ হোসেন।
পরে ইমামুলকে খেলনা কিনে দিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে চাঁদপুরের কচুয়া থানার পদুয়া পাটারি বাড়ি গ্রামে নিয়ে যান তারা।
সেখানে মোসলেম পাটোয়ারী তার সহযোগী মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে শিশু ইমামুলকে রাখেন। এরপর পরিচয় লুকিয়ে বিভিন্ন নম্বর থেকে মুঠোফোনে কল করে শিশুটির মা পারুল বেগমের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, এ ঘটনায় ২২ এপ্রিল পারুল বেগম সাভার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
পরে সাভার মডেল থানার এসআই মাহমুদুল হাসান শিশু ইমামুলকে উদ্ধারে অভিযানে নামেন। এরই মধ্যে অভিযুক্তদের দেয়া ঠিকানায় গেলে পারুল বেগমকেও জিম্মি করেন তারা।
খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে ২৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টায় সন্দেহভাজন হিসেবে মোসলেম পাটোয়ারী ও মোশাররফ হোসেনকে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থানা এলাকা থেকে আটক করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিশু ইমামুলকে কচুয়া থানার পদুয়া পাটারি বাড়ি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে গ্রেপ্তার দুই আসামিকে ঢাকার আদালতে পাঠানো হয়। এছাড়া শিশুটিকে তার মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
অপহৃত শিশুটির মা পারুল বেগম জানান, ২০০৬ সালে তরিকুল ইসলামের সঙ্গে তার পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। তাদের সংসারে আবু সালেহ (১৩) ও ইমামুল (৮) নামের দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
২০১৮ সালে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে প্রথম স্বামী তরিকুল অন্যত্র বিয়ে করে তাকে তালাক প্রদান করেন। এরপর মোসলেম পাটোয়ারীর সঙ্গে বিয়ে হয় পারুল বেগমের।
৪ বছরের দ্বিতীয় সংসারে মাদকাসক্ত মোসলেম পাটোয়ারীর ঘরে কোন সন্তান নেয়নি। পোশাক শ্রমিক মায়ের কাছ থেকে টাকা খসাতে প্রথম স্বামীর ঔরসজাত পুত্র সন্তানকে অপহরণ করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন দ্বিতীয় স্বামী।
পরে বাধ্য হয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হলে মায়ের কোলে সন্তানকে ফিরিয়ে দেয় সাভার মডেল থানা পুলিশ। এতে বুকের রত্ন ফিরে পেয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে পুলিশের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পোশাক শ্রমিক পারুল বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহ্জামান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাশিদ, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন্স) নয়ন কারকুন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাহমুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
মেসেঞ্জার/নোমান/তারেক