ঢাকা,  সোমবার
১৩ মে ২০২৪

The Daily Messenger

ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামায় সুপেয় পানির সংকট

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামায় সুপেয় পানির সংকট

ছবি : মেসেঞ্জার

নদী নালা খাল বিলের পানি শুকিয়ে শুন্য হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে ২৮ ফুট নিচে। সেই সাথে চলমান তাপদাহে জনজীবন এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নদীনালায় কোথাও পানি নেই। খালবিল, ডোবা, পুকুর শুকিয়ে চৌচির।

এতে সুপেয় পানির সঙ্কট দেখা দিচ্ছে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। দীর্ঘ দিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ভয়াবহ সেচপানি সঙ্কটে পড়েছেন কৃষকরা। এতে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দিয়েছে।

পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে সেচপাম্প চালানো যাচ্ছে না। যতটুকু সময় চালানো যায়, তাতে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না। মাঠের পর মাঠ বোরো ধান ক্ষেত শুকিয়ে খাঁখাঁ করছে।

কৃষকরা জানান, সকালে বোরো খেতে পানি দিলে তাপদাহে তা দুপুরের আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলন্ত ধান খেতে পর্যাপ্ত সেচ দেয়া না গেলে ধানে চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই, অধিকাংশ কৃষকের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। এ দিকে বৈরি আবহাওয়ায় ঝরে পড়ছে মাঝারি আকারের আমের ও লিচুর গুঁটি।

তীব্র খরা ও বৃষ্টিহীনতায় সেচ যন্ত্রের পাশাপাশি টিউবওয়েলে সুপেয় পানি উঠছে না। ফলে খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ঘিওর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে সদর ইউনিয়ন এবং বড়টিয়া ইউনিয়নে সুপেয় পানির সঙ্কট এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী পানিতে ২০২১ সালে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সিংজুরী, বানিয়াজুরী, বড়টিয়া, নালী, ঘিওর, বালিয়াখোড়া, পয়লা ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৫০০ টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করার পর সাড়ে তিন হাজারেরও অধিক টিউবওয়েলে আর্সেনিক পায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ।

উপজেলায় সর্বোচ্চ প্রতি লিটারে ০.১৭২ মিলিগ্রাম আর্সেনিক এবং ১০.১ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া গেছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বলে জানান তারা। এ ধরনের নানা সমস্যায় সুপেয় পানির সঙ্কট দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে ঘিওর উপজেলায়।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ জানায়, বর্তমানে এ উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২৮ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। পারিবারিকভাবে বসানো হাজার হাজার নলকূপে পর্যাপ্ত পানি উঠছে না।

কিছু এলাকায় মানুষ ৫৫০-৬০০ ফুটেরও বেশি গভীরে নলকূপ বসিয়ে নিজ নিজ পরিবারের জন্য পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন। উপজেলার কয়েক হাজার মানুষের বাড়িতে এবং তাদের কৃষি জমিতে তীব্র পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

উপজেলার বড়টিয়া গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, এ বছর মাঠে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। পানির অভাবে খেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এবং পর্যাপ্ত ভোল্টেজ না থাকায় জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে আর সপ্তাহখানেক গেলে ধানের চেয়ে চিটার পরিমাণ বেশি হবে।

উপজেলার বড়টিয়ার গ্রামের আব্দুর রহমান জানান, প্রায় মাস খানেক ধরে বাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছেনা। পাশের অন্যবাড়ি থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করে দিলে উপকৃত হতাম।

বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের চরকোশুণ্ডা গ্রামের শহিদুর রহমান টিপু বলেন, ২০০ ফিটের টিউবওয়েল স্থাপন করেছি কিন্তু পানি পরীক্ষা করে আর্সেনিক ধরা পড়ে। যার কারণে টিউবওয়েলের পানি খাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারিনা। খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

ঘিওর উপসহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জাকারিয়া কবির জানান, উপজেলায় সরকারিভাবে টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে তিন হাজার ২৩৬টি এবং গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে ৯৪৮টি। তার পরও সুপেয় পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম বলেন, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর, তবে আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে।

এভাবে লোডশেডিং ও বৃষ্টি না হলে তা এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিণ হয়ে পড়বে। খরা ও তাপদাহে এ বছর উপজেলায় আমের ফলনেও বিপর্যয় ঘটতে পারে।

মেসেঞ্জার/সামি/তারেক

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700