ছবি : সৌজন্য
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড এই দাবদাহ এড়িয়ে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের ৯৪তম বর্ষ স্মরণে রাজধানীর কবিতা ক্যাফেতে গতকাল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো সূর্য সমাবেশ ২০২৪।
সূর্য সেন সঙ্ঘ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটিতে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন- ড. মেসবাহ কামাল, আমিনুল ইসলাম ভূইয়া, ড. মোহাম্মদ বারী, শরীফ শমশির, জুলফিকার আলী মাণিক ও মনোয়ারা বেগম তামান্না।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে ‘যুব বিদ্রোহ’ সংঘটিত হলে চট্টগ্রাম ৪ দিনের জন্য ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীন থাকে। ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি চট্টগ্রাম শাখার সর্বাধিনায়ক সূর্য সেনের নেতৃত্বে অস্ত্রাগার, রেলওয়ে ও টেলিফোন, টেলিগ্রাফ অফিস আক্রমণ করে স্বাধীন ভারতের পতাকা উড়ানো হয়। ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে এক রক্সক্ষয়ী যুদ্ধে মাস্টারদারা পিছু হটে।
এবারের সূর্য সমাবেশ উৎসর্গ করা হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহকে। তাই শুরুতেই বক্তব্য রাখেন কুণ্ডেশ্বরীয়ান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি মনোয়ারা বেগম তামান্না। তিনি শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের বর্ণময় জীবন ও চট্টগ্রামে নারী শিক্ষায় তাঁর অবদান উপস্থিতদের মাঝে তুলে ধরেন।
সাংবাদিক জুলফিকার আলী মাণিক বলেন, এখন সময় এসেছে সত্যটা যা ঠিক তা সকলের সামনে তুলে ধরা। নূতন চন্দ্র সিংহকে পাকিস্তানী আর্মির সহায়তায় হত্যা করেছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী হেরে গেলে তাদের ক্ষোভ গিয়ে পরে নূতন চন্দ্র সিংহের প্রতি। কেননা স্থানীয় হিন্দু-মুসলিম কমিউনিটি নূতন চন্দ্রের মতকে গুরুত্ব দিতো। আর তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিলেন। যার ফলে ফজলুল কাদের চৌধুরী হেরে যান। এই প্রতিহিংসার বশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৩ এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানী আর্মিও একটি দল নূতন চন্দ্র সিংহের বাড়ি আক্রমণ করে তাঁকে হত্যা করে লুটপাট চালায় এবং তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে।
নাট্যব্যক্তিত্ব ড. মোহাম্মদ বারী বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের মধ্যে ধর্মান্ধ ও মৌলবাদিতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি যারা সাংস্কৃতিক চর্চা করছেন তাদের মধ্যেও বাংলার বদলে আরবি শব্দ বেশি ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। অথচ ৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি বাংলা ভাষার জন্য। আমাদের চিন্তার পথ সুদৃঢ় করবে মাস্টারদা সূর্য সেন ও নূতন চন্দ্র সিংহের দেশপ্রেম ও তাঁদের আদর্শিক জীবন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. মেসবাহ কামাল বলেন, দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে, সূর্য সেন, প্রীতিলতার কর্মকাণ্ড আজ সাবঅলটার্ন ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। মূলধারার ইতিহাসে তাদের পাঠ নগন্য বা খুবই কম। যদিও এর বিপরীতটা হওয়ার কথা ছিলো। গর্বিত বাঙালী হিসেবে চট্টগ্রামের সর্বাধিনায়ক সূর্য সেনের সশস্ত্র অভ্যূত্থান ছোটবেলা থেকেই আমাদের অবশ্য পাঠ্য হওয়া দরকার। সূর্য সেন সঙ্ঘের আজকের ছোট্ট প্রয়াস সেই কাজকে একদিন তরান্বিত করবে।
অনুষ্ঠানে সূর্য সেনের শেষ চিঠি পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী রানা আহমেদ এবং নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘পুরো মানুষের গান’ পড়ে শোনান আবৃত্তিশিল্পী নাসিমা খান বকুল।
এছাড়াও কবি সঞ্জীব পুরোহিত ও হাসিদা মুন দেশাত্ববোধক কবিতা পাঠ করেন। আর দ্রোহের গান পরিবেশন করেন হাবিব আহমেদ নচি। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন মোহাম্মদ ইসহাক আলী।
মেসেঞ্জার/সজিব