ছবি : মেসেঞ্জার
ঠাকুরগাঁও পাকিস্তানী হানাদারমুক্ত দিবস। রোববার (৩ ডিসেম্বর) ১৯৭১ সালের এই দিনে ঠাকুরগাঁও পাক হানাদার মুক্ত হয়।
ঠাকুরগাঁও তখন মহকুমা ছিল। ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানা মিলে ওই মহকুমা ছিল। এ অঞ্চলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। চুড়ান্ত বিজয় আসে আজকের এই দিনটিতে।
ঠাকুরগাঁও তখন ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম খাদেমুল বাশার। এ সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল। ২৯ নভেম্বর এ মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শক্রমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাত ছাড়া হওয়ার পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়।
এরপর তারা প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁওয়ে। ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচুর গোলাগুলি শুরু হয়। ওই রাতেই শক্রবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোররাতে ঠাকুরগাঁও শহর শক্রমুক্ত হয়।
সদর উপজেলার ফাড়াবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধার পিতা শেখ শহর আলী ও তার ভাই শেখ বহর আলীসহ ১৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে হত্যা করে তাদের মরদেহ আব্দুর রশিদ ডিগ্রি কলেজের পাশের একটি কূপে ফেলে দেয়। হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা গণহত্যা চালায় সদর উপজেলার জাঠিভাঙ্গা গ্রামে। সেখানে স্থানীয় কিছু লোকের সহায়তায় আশ-পাশের অনেক গ্রামের প্রায় তিন হাজার নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে পাকবাহিনী গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। পরে তাদের মরদেহ মাটি চাপা দেয়া হয়।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক স্থানে গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী ও তার দোসররা। এরই মধ্যে সুসংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামি মানুষ। তারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলে দুর্বার প্রতিরোধ।
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর পতনের পর এ এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আনন্দ উদ্বেলিত কন্ঠে ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি আর হাতে প্রিয় স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে তরুণ-যুবক সবাই।
এদিন সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরসহ জনপদ ও লোকালয়ে মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দের মিছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও শহর।
দিবসটি পালনে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কার্যালয় চত্বর হতে একটি আনন্দ র্যালি বের হয়ে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় গিয়ে শেষ হবে।
সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পন শেষে জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম বিডি হলে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও’র উদ্যোগে দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের উদ্যোগ গ্রহন করা হবে বলে জানা যায়।
দিবসটি পালনে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা কালেক্টরেট চত্তর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের হবে। র্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা পরিষদ ডাক বাংলোয় অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করা হবে। পরে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম (বিডি হলে) বিষয়ের উপরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
মেসেঞ্জার/বুলবুল/আপেল