ঢাকা,  মঙ্গলবার
০৭ মে ২০২৪

The Daily Messenger

সামাজিক বনায়নের দোহাই

সুনামগঞ্জে ১৯ কি.মি সড়ক পাড়ের গাছ কেটে ফেলার পাঁয়তারা

দ্বিপাল ভট্টাচার্য্য, সুনামগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫:৩৬, ৩১ মার্চ ২০২৪

সুনামগঞ্জে ১৯ কি.মি সড়ক পাড়ের গাছ কেটে ফেলার পাঁয়তারা

ছবি : মেসেঞ্জার

সামাজিক বনায়নের দোহাই দিয়ে টুকেরবাজার-সাচনাবাজার এলাকার ১৯ কিলোমিটার সড়কের দু'পাশের সারি সারি গাছ কেটে ফেলার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে বনবিভাগ। 

জানা গেছে, সুনামগঞ্জের-সাচনাবাজার ১৯ কিলোমিটার সড়কের পাশের গাছগুলো কেটে ফেলতে দরপত্রও আহ্বান করেছে বনবিভাগ। ইতোমধ্যে এই বিশাল কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবে প্রতিটি গাছের গায়ে লাল কালিতে নম্বর দিয়ে চিহ্নিতও করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা বন বিভাগ জানায়, ১৯ কিলোমিটার রাস্তায় যে বৃক্ষগুলো আছে সেগুলো সামাজিক বনায়নের আওতায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে রোপন করা হয়েছিল। সামাজিক বনায়নের বিধিমালা অনুযায়ী অংশীদারত্ব মূলক বনায়নের সর্বনিম্ন বয়স ১০ বছর আর সর্বোচ্চ ২০ বছর। কিন্তু  গাছগুলোর বয়স ২০ বছরেরও অধিক তাই এখন কাটতেই হবে। সবুজে মোড়া হাজারো গাছের সমারোহ এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের প্রাণ। লক্ষ লক্ষ   পথচারীর অক্সিজেন আর  আশ্রয়। কিন্তু পথচারি কিংবা এলাকার মানুষ জানেনই না তাঁদের অক্সিজেন দেয়া গাছগুলো কাটার জন্য চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার টুকেরবাজার থেকে জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার পর্যন্ত সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের দুই পাশে লাগানো গাছগুলো কেটে বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বানও করেছে বন বিভাগ। এই সংবাদে স্থানীয় লোকজনের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে এতো গাছ কেটে ফেলার কথা শুনে অনেকেই বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

টুকেরবাজার-সাচনাবাজার সড়কের ১৯ কিলোমিটার এলাকার গাছ কেটে ফেলার বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ  রাশেদ ইকবাল চৌধুরী'র কাছে জানতে চাইলে দ্য ডেইলি মেসেঞ্জারকে তিনি বলেন, সড়ক পাড়ের গাছের বিষয়টি সম্পূর্ন  সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বে। তবুও মানুষের প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে  সড়ক ও জনপথ  সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীর  সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।'

এই ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ  সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীর মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

শনিবার (৩০ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা নদীর আবদুজ জহুর সেতু থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে তেমন গাছ  নেই। টুকেরবাজার থেকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিয়ামতপুর হয়ে সড়কটি জামালগঞ্জের সাচনাবাজার পর্যন্ত গেছে। সড়কের বেশির ভাগ অংশ সদরে। দুই পাশে সারি সারি গাছ। টুকেরবাজার থেকে গাছে নম্বর দেওয়া শুরু হয়েছে। সদরের উমেদশ্রী, নিধিরচর, ইচ্ছারচর, ইসলামপুর, বেড়াজালি, আহমদাবাদ; বিশ্বম্ভরপুরের দুলবারচর, সংগ্রামপুর এবং জামালগঞ্জের শেরমস্তপুর, নজাতপুর থেকে সাচনাবাজার পর্যন্ত প্রতিটি গাছে নম্বর দেওয়া।

স্থানীয়রা মনে করতেন এই লাল চিহ্নিত নম্বরগুলো গাছ গণনার জন্য দেয়া হয়েছে। গাছগুলো কাটা হবে এই কথা শুনে বিস্মিত হয়ে টুকেরবাজারের ব্যবসায়ী ( মুদির দোকান)  দেবল দাস বলেন ' এসব আমরা জানি না। শুনু এটা জানি গাছগুলো আমাদের সম্পদ না কাটলে এর সুফল ভোগ করবো আমরা সকলে'।


বন বিভাগ সুনামগঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা  বলেন, বিধিমালা অনুযায়ীই গাছগুলো কাঁটতে হবে। উক্ত রাস্তায়  সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গাছ লাগানো হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা গাছের পরিচর্যা করেছেন।' তিনি জানান, বিধিমালা আমার কাছে অফিসে আসলে দেখাতে পারবো।' এসময় উল্লেখ করেন,  সামাজিক  বনায়ন বিধিমালা-২০০৪ অনুযায়ী, গাছ বিক্রির টাকা উপকারভোগী ৫৫ ভাগ, বন অধিদপ্তর ১০ ভাগ, ভূমির মালিক হিসেবে সওজ ২০ ভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ৫ ভাগ পাবে। বাকি ১০ ভাগ টাকা দিয়ে আবার বনায়ন করা হবে।

গাছগুলো কবে কাটা শুরু হবে এমন প্রশ্নে দ্বীন ইসলাম জানান, '  সেটা বলা যাচ্ছে না তবে দরপত্রের কার্যক্রম শেষ হলেই পর্যায়ক্রমে গাছ কাটা শুরু হবে। কাজটি সম্পাদন করতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে। ' 

স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান গাছ কাটার কথা শুনে বিস্মিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এত গাছ কাটবে কেন? পরে আবার লাগানোর চেয়ে এগুলো কীভাবে রক্ষা করা যায়, সেই পথ খোঁজা উচিত। প্রশাসন স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরাও থাকব। প্রয়োজনে স্থানীয় মানুষদের সরকার অন্যভাবে সুবিধা দিক। তবু হাজার হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ বন্ধ করা দরকার।’

মেসেঞ্জার/শাহেদ

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700