ছবি : মেসেঞ্জার
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১ হাজার ৯২০ মিটার রাস্তায় বালুর পরিবর্তে কাঁদামাটি দিয়ে ফিলিং করার অভিযোগ উঠেছে। কার্পেটিং পদ্ধতিতে প্রাক্কলিত মূল্য ২ কোটি ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৮০১ টাকা ব্যয়ে কাজ করা হচ্ছে এ রাস্তার।
কিন্তু বালু ফিলিংয়ের নামে রাতের আঁধারে বালুর পরিবর্তে কাদামিশ্রিত মাটি দিয়ে রাস্তা ভরাট করার চেষ্টা করা হলে এলাকাবাসীরা প্রতিবাদ করে রাস্তায় কাদা মিশ্রিত মাটি ফেলা বন্ধ করে দিয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ ও প্রতিবাদী হয়ে জানান, বোয়ালমারী থেকে শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সড়কটির কার্পেটিং পাকা রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। শুরুতে পাকা করণের সড়ক কাটা হলে সেখানে বালু ফেলার কথা থাকলেও ফেলা হচ্ছে কাঁদামাটি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মাটি ফেলছেন স্থানীয় শহীদুল নামের এক ব্যক্তি।
কাঁদামাটি ফেলতে নিষেধ করলেও সে রাতের আধারে ট্রলিতে করে মাটি ফেলে। এ ঘটনায় আমরা তীব্র প্রতিবাদ করেছি যাতে সরকার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে যে স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করছে, সেখানে বালুর পরিবর্তে কাঁদা মিশ্রিত মাটি ফেলে কাজের অনিয়ম হবে কেন?
জানা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী পঞ্চগড়ের অধীনে তেঁতুলিয়ার বোয়ালমারী থেকে শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের মুহুরী হাট পর্যন্ত ১ হাজার ৯২০ মিটার পর্যন্ত বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রকল্পের (জিডিডিআরআইডিপি) এর প্রকল্পের আওতায় এর নির্মাণের প্রাক্কলিত মূল্য ২ কোটি ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৮০১ টাকা।
চুক্তি মূল্য হয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৩ হাজার ১২০ টাকায় কাজটি করছে এমএইচ কর্পোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজটি শুরু হয়েছে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি। আগামী বছর ২১ জানুয়ারিতে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে শালবাহান ইউনিয়নের মহিগছ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার বেশ কিছু জায়গা জুড়ে বালুর পরিবর্তে কাঁদা মিশ্রিত মাটি ফেলা হয়েছে। তাতে ক্ষোভে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন গ্রামবাসিরা।
তারা সংশ্লিষ্ট শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামকে খবর দিয়ে এনে দেখান কাজের অনিয়মের চিত্র। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করেন ইউপি চেয়ারম্যানও। তিনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী ওয়াকিলকে জানান।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চেয়ারম্যানকে জানান, কাজের কোন প্রকার অনিয়ম হবে না, যিনি এ মাটিগুলো ফেলেছেন তা তিনি জানতেন না।
গ্রামবাসীর মধ্যে ইসলাম হোসেন, দুলাল ও আব্দুল আজিজ জানান, আমাদের বাড়ির ধারে রাস্তার পাকা করণের কাজ হচ্ছে। সেখানে বালু ফেলানোর কথা থাকলেও ফেলা হচ্ছে পুকুর থেকে আনা কাঁদা মিশ্রিত মাটি। এতে করে রাস্তার কাজ খারাপ হবে। এই মাটি ফেলেছে বোয়ালমারীর শহিদুল। আমরা নিষেধ করেছি, তারপরেও ফেলায় আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করছি ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, ইঞ্জিনিয়ার ও আমাদের ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। রাস্তা ভালো হোক এটা আমরা চাই। কোন প্রকার অনিয়ম মেনে নেব না।
তবে শহিদুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়কে মাটি ফেলা হয়েছে। বালু ফেলা হয়েছে। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলেছে চলবে।
শালবাহান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে এসে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এখানে বালুর পরিবর্তে কাঁদা মিশ্রিত মাটি ফেলায় কাজটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ওয়াকিল ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, কাঁদা মিশ্রিত মাটি ফেলার কোন সুযোগ নেই। তবে যিনি ফেলেছেন তার সাথে এ নিয়ে কোন চুক্তি হয়নি। তাই এসব মাটি সরিয়ে বালু ফেলা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে এমএইচ কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী মো. ওয়াকিল বলেন, আসলে এ সড়কে বালুর পরিবর্তে কাঁদা মিশ্রিত মাটি ফেলা হবে জানতাম না। যিনি ফেলেছেন তার সাথেও এ নিয়ে কোন কথা হয়নি। তিনি কিভাবে কিসের ভিত্তিতে ফেললেন বুঝতে পারছি না।
যাই হোক, এ মাটিগুলো সরিয়ে নতুন করে বালু ফিলিং করে কাজ করা হবে। বরাবরই কাজ স্বচ্ছতার সাথে করে আসছি। এ কাজও ভালো হবে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের সার্ভেয়ার জয়নাল আবেদীন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, রাস্তায় বালু ফেলার নিয়ম রয়েছে। তাই কাঁদা মিশ্রিত মাটি ফেলা যাবে না। তাই যিনি ফেলেছেন তা অপসারণ করে বালু ফেলা হবে। রাস্তার কাজে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি সহ্য করা হবে না, সঠিকভাবে বালু ফিলিং করে রাস্তা তৈরি করতে হবে।
মেসেঞ্জার/আপেল
