বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন শুরুতেই ভঙ্গ হলো ৮১ শিক্ষার্থীর

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন শুরুতেই ভঙ্গ হলো ৮১ শিক্ষার্থীর। ১/২ মিনিট বিলম্ব করায় রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন কেন্দ্রে ৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষায় বসতে পারেননি তারা। পা ধরেও অনেকেই প্রবেশ করতে পারেন নি। বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ায় ২ শিক্ষার্থীকে আটকও করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে ৯ টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে এই ঘটনা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০ টায় পরীক্ষা শুরু হলেও ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী সকাল সাড়ে ৯ টার ১/২ মিনিট দেরি করে আসে। অনেকেই আসে ৫ মিনিট পর। তারা হলে প্রবেশ করতে চাইলে তাতে বাঁধা দেয় কর্তব্যরত ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশ। অনেকেই অনুনয় বিনয় করেও ঢুকতে পারেন নি। বাক বিতন্ডাও জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা।

বিতন্ডায় জড়ানোর কারণে বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্র ও পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রের সামনে থেকে ২ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।

রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, নিয়ম ভেঙ্গে কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা ও বিশৃঙখলা তৈরির কারণে ২ জনকে আটক করা হয়েছিল। পরীক্ষা শেষে তাদের ছেড়ে দেয়।

নগরীর ১৮ টি কেন্দ্রের সবগুলোতে এ ধরণের ঘটনায় তিন শতাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে না পারার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু তিনটি কেন্দ্রের ৮১ জনের তথ্য স্বাধীনভাবে যাছাই করেছেন প্রতিবেদক।

এর মধ্যে বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রে ২৫ জন, লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ৪৬ জন ও পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ১০ জন সাড়ের ৯ টার সামান্য পরে আসায় মোট ৮১ জন পরীক্ষার্থী বসতে পারেন নি।

পরীক্ষায় বসতে না পারায় শুরুতেই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে এসব শিক্ষার্থীর। লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসতে না পারা হামিদুর রহমান জানান, “আমি ২০২০ সালে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করেছি। আমি ৪৬ বিসিএস এর পরীক্ষা ছিলাম। লায়ন্স স্কুলে আমার সিট ছিল। আমি ৯ টা ৩৪ মিনিটে গেটে আসি।

কিন্তু কর্তব্যরত ম্যাজিষ্ট্রেট সাড়ে ৯ টার পর কাউকে ঢুকতে দেয় নি। অথচ এর আগের বিসিএস পরীক্ষায় ক্যান্ট পাবলিক স্কুল কেন্দ্রে আমার সিট পড়েছিল, সেখানে অনেকেই পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট আগেও কেন্দ্রে ঢুকতে আমি দেখিছি। কিন্ত এবার এখানে ৫০/৬০ জনকে এই ম্যাজিষ্ট্রেট ঢুকতে দেয় নি। সেকারণে আমাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েগেলো। আমি ম্যাজিষ্ট্রেটের বরখাস্ত দাবি করছি। আমি সেখানে কথা বলেছি জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট আমাকে গ্রেফতার করার হুমকি দিয়েছিল। এবং অতিরিক্ত পুলিশ ডেকে এনে আমাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করবো। আমরা চাই আমাদের লাইফে যে সমস্যা হলো সেই সমস্যা যেন আর কারো লাইফে না হয়। এ ধরণের ম্যাজিষ্ট্রেটের জন্য কারো যেন আর সমস্য না হয়।’

একই কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসতে না পারা শোভন সরকার জানান, ‘আমার বাসা কুড়িগ্রাম। কারমাইকেল কলেজ থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করি। আমি যানজটের কারনে ৯ টা ৩৪ মিনিটে লায়ন্স স্কুল কেন্দ্রের গেটে উপস্থিত হই। কিন্তু ম্যাজিষ্ট্রেট আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয় নি। আমরা এসময় ৪০/৫০ জন ছিলাম। তাকে অনুরোধ করলেও তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ৯ টা ৩০ মিনিটেই গেট বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হবে ১০ টার সময়।

কিন্তু আমিসহ অনেকই ঢুকতে পারলাম না। এতো দিনের প্রিপারেশন আমার ৩/৪ মিনিটেই নষ্ট হয়ে গেলো। আমি এক বছর থেকে কনটিনিউ পড়াশুনার মধ্যেই ছিলাম। এটা আমার লাস্ট বিসিএসএস ছিলো। এটা আমার লাইফের জন্য বাজে একটা ব্যাপার হয়ে দাড়ালো। এর আগে আমি দুইবার প্রিলিতে টিকেছিলাম’।

আরেক পরীক্ষার্থী মুন্নি আক্তার জানান, ‘আমি কারমাইকেল কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি। আমার আসতে ৪ মিনিট লেট হয়েছে। কিন্তু ম্যাজিষ্ট্রেট আমাকে ঢুকতে দেয় নি। আমি ম্যাজিষ্ট্রেটের পায়ে পর্যন্ত ধরেছি। কান্নাকাটি করছি। কিন্তু তিনি আমাকে ঢুকতে দেয় নি। অনেককেই ঢুকতে দেয়। ৪০/৪৫ জনের মতো ছিলাম আমরা।

আমার এতো বছরের কষ্ট, পরিকল্পনা, পড়াশুনা তিনচার মিনিটেই শেষ হয়ে গেলো। আর যেন কারো এরকম না হয়। এজন্য আমি ম্যাজিষ্ট্রেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাই। যেহেতু পরীক্ষা ১০ টায় শুরু হবে। সেকারণে আমাদের ঢুকতে দেয়াই যেতো। আমরা তো ১০ টার পর আসিনি। বিষয়টি দেখার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই।

এ বিষয়ে জানতে রংপুর বিভাগীর কমিশনায় জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘সরকারি কর্ম কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন কর্তব্যরতরা। কখন উপস্থিত হবে বিষয়টিও ম্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল’।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ‘৪৬ তম বিসিএস পরীক্ষা-২০২৩ এর প্রিলিমিটারী টেস্টের আসন ব্যবস্থা, সময় সূচি ও পরীক্ষা পরিচালনার নির্দেশনা দেয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, প্রার্থীদের অবশ্যই সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। ৯ টা ৩০ মিনিটের পর কোন পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারবে না। ৯ টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষার হলের মূল ফটক বন্ধ করে দেয়া হবে’।

একজন সাবেক সচিব জানান, নির্দেশনা মেনেই যথাযসময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করাটাই পরীক্ষার্থীদের জন্য বাঞ্ছনীয়। এটাকে ভুল বলা যাবে না, এটা দায়িত্বহীনতা।

সরকারি কর্মকমিশন রংপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক রোকসানা বেগম জানান, ‘সাড়ে ৯ টার পর কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। এটা পিএসসির হেড অফিস থেকে নির্দেশনা। এখানে আমাদের করণীয় কিছু নেই। ম্যাজিষ্ট্রেটরা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন’।

পিএসসি রংপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের সহকারি পরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, রংপুরের ১৮ টি কেন্দ্রে ৩০ হাজার ৪৫১ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের কথা ছিল। এরমধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন ৭ হাজার ৫০ জন। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।