ঢাকা,  মঙ্গলবার
০৭ মে ২০২৪

The Daily Messenger

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেপ্তার শত শত

মেসেঞ্জার অনলাইন

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেপ্তার শত শত

ছবি : সংগৃহীত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি যুদ্ধের অবসানের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে চলা এই বিক্ষোভ ক্রমান্বয়ে সহিংস হয়ে উঠছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শত শত শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে মার্কিন পুলিশ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার শীর্ষ স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।

লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি) শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনে ‘‘নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা’’ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। দেশটির কয়েক ডজন ক্যাম্পাস থেকে শত শত শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ মার্কিন প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করছে। 

বিবিবি বলছে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে চলে যেতে বাধ্য করতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে কর্তৃপক্ষের আলোচনা চলছে।

গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে প্রথম গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সেখানে বিক্ষোভ করেন।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বলেছে, শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় বৃহস্পতিবার আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৮ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইমোরি পুলিশ বিভাগ বলেছে, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ স্থানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের প্রথমে ধাওয়া দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসায়নিকের ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে। তবে তারা বলেছে, পুলিশ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন ধরনের বস্তু ছোড়ার জবাবে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে ডাকার পর সেখানে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পর নতুন করে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘‘গণহত্যা থেকে দূরে সরে যাওয়ার’’ এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের সমর্থনে অস্ত্র উৎপাদনে এবং অন্যান্য শিল্পের সাথে জড়িত সংস্থাগুলোতে বৃহৎ অর্থ বিনিয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

বর্তমানে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল গণহত্যা পরিচালনা করছে অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও ইসরায়েল এই অভিযোগকে ‘‘ভিত্তিহীন’’ হিসেবে দাবি করে প্রত্যাখ্যান করেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী চিসাতো মিমুরা বিবিসিকে বলেছেন, গাজায় গণহত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহ ও ইসরায়েলে অর্থায়নের ঘটনায় আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্ধ।

তিনি বলেন, ‘‘তারা যা করছে তা সম্পূর্ণরূপে এই গণহত্যার জন্য দায়ী। তারা যে ধরনের সুপরিচিত ভূমিকা পালন করছে, আমরা সেই বিষয়ে অবগত।’’

তবে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, সেগুলোর কিছুতে ইহুদিবিরোধী বিক্ষোভ চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ইহুদি শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেছেন, তারা কলাম্বিয়া ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনিরাপদ বোধ করছেন। যদিও গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হওয়া বিক্ষোভে অনেক ইহুদি শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মিনিসোটার ডেমোক্র্যাট দলীয় কংগ্রেসউইমেন ইলহান ওমর ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছেন। এর আগে, গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া ইলহান ওমরের মেয়ে ইসরা হিরসিকে ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দেয় পুলিশ। ইলহান ওমর বিবিসিকে বলেছেন, এই বিক্ষোভ মাত্র ৭০ জন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে শুরু হয়েছে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রথম অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। যে কারণে বিক্ষোভ এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।’’

মেসেঞ্জার/সজিব

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700