ঢাকা,  মঙ্গলবার
১৪ মে ২০২৪

The Daily Messenger

ক্ষান্ত হও বদলে যাও বদলে দাও ভালো হও

প্রকাশিত: ০২:০১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

ক্ষান্ত হও বদলে যাও বদলে দাও ভালো হও

সবে ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা শেষ হলো। একজন খ্যাতনামা ফুটবলারের বাবা কিছুদিন আগে বলেছেন, আমি ছেলেকে ক্যামেরুন নিয়ে গিয়েছিলাম। চেয়েছিলাম আমার ছেলে ক্যামেরুনের হয়ে জাতীয় দলে খেলুক। কিন্তু ক্যামেরুন ফুটবল ফেডারেশন এ জন্য আমার কাছে বিপুল অর্থ চায়। ফলে, আমার ছেলের আর ক্যামেরুনের হয়ে খেলা হলো না। ফিরে গেলাম ফ্রান্স। কোনো অর্থ প্রদান ছাড়াই আমার ছেলে ফ্রান্সের জাতীয় দলে খেলায় সুযোগ পেয়েছে। শুধু তাই না, আজ সে একজন বড় তারকা খেলোয়াড় হয়েছে।

আমার নিজের ছেলে-মেয়েকে বাংলাদেশের হয়ে টেনিস খেলাতে চেষ্টা করলাম, টাকা খরচ করে পাসপোর্ট করালাম, যখনই কাজের কথা নিয়ে আলোচনা শুরু হলো টেনিস ফেডারেশন জানালো সব খরচ আমাকেই বহন করতে হবে। বাধ্য হয়ে সুইডেনেই থেকে গেলাম। এখন ভাবুন অব্যবস্থাপনা একটা দেশের কত বড় ক্ষতি করতে পারে। এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর নেই! একবার উপলব্ধি করুন, যদি প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুষ না থাকতো, খেলোয়াড় বাছাই করতে দুর্নীতি করা না হতো তবে এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোতেও আজ বিশ্ববিখ্যাত তারকা খেলোয়াড়দের জায়গা হতো।

আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি মেসি, রোনালদোর যদি আজ এশিয়া বা আফ্রিকায় জন্ম হতো তবে আফ্রিকায় জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য হৃদয় বিদীর্ণ হতো। কিন্তু ঘুষ ছাড়া দলে জায়গা পেত না। এই ঘুষ, দুর্নীতির জন্য আমরা অনেক কিছুই হারিয়েছি। দেশ যতদিন পর্যন্ত দুর্নীতিমুক্ত না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা শুধু খেলেই যাবো। কিন্তু বিশ্বকাপে কখনো অংশ গ্রহণ করতে পারবো না।

চল্লিশ লক্ষ মানুষের দেশ ক্রোয়েশিয়া মাত্র ১৯৯১ সালে স্বাধীন হয়ে লকা মুদ্রিজের মতো খেলোয়াড়ের জন্ম দিয়ে তিনবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আর একবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। আর আঠারো কোটি মানুষের দেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়ে আঠারো জন খেলোয়াড় তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। নিজের দেশটাকে নোংরা করে রেখেছি। ঢাকা হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম দূষিত শহর।

বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার সাথে সাথেই নিজের ব্যর্থতা মেনে নিয়ে চারটি দেশের চারজন কোচ নিজ থেকেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। ব্যর্থতা মেনে নিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার এই উপলব্ধি আমাদের দেশের কর্মকর্তাদের কবে হবে? না, হবে না, কোনদিনও হবে না। আমরা শুধু দেখেই যাবো। আনন্দের পূর্ণতার জন্য নিজের পছন্দের দলের বিজয়ে অন্যের হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে বালু চাপা দিয়ে ট্রল করবো। অন্যকে প্রিয় করতে গিয়ে নিজের প্রিয়জনদের সাথে সুসম্পর্ক নষ্ট করবো। যে আমাকে চিনেনা, জানেনা। তার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিবো। সবই করবো। কিন্তু বড় দুঃখ এবং লজ্জা, বিশ্বকাপের মাঠ পর্যন্ত আমরা পৌঁছাতে পারবো না।

এবার আসুন চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর। দেশের প্রধান কয়েকটি হাসপাতালে হৃদরোগ চিকিৎসায় সংকটাবস্থা বিরাজ করছে। সব ধরনের হৃদরোগ চিকিৎসার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার সংস্কারের দোহাই দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের সবগুলো ক্যাথল্যাব মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে সেখানে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি। চিকিৎসার জন্য রোগীরা মিরপুরের ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে গেলেও শয্যা সংকটের কারণ দেখিয়ে তাদের ফিরেয়ে দেয়া হচ্ছে।

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, যন্ত্রপাতির অভাবে রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে না। কারণ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে সংস্কার কাজ চলছে। তবে এ অবস্থা কতদিন থাকবে সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছেন না তারা। যেসব রোগীর জটিল (শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক) ভাস্কুলার সার্জারি, বাইপাস সার্জারি, সিএপিজি, বাল্ব প্রতিস্থাপন বা চিকিৎসার প্রয়োজন তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব রোগী দ্রুত উপযুক্ত চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু ঝুঁকি কিন্তু তা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, হৃদরোগ হাসপাতালে ৫টি অপারেশন থিয়েটার বা ওটি রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন অন্তত তিনটি ওটিতে কাজ চলে। এসব ওটিতে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫টি ওপেন হার্ট সার্জারি হয়ে থাকে। কিন্তু ওটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচানোর এসব জটিল অস্ত্রোপচার স্থগিত থাকছে। এতে করে বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে তাদের মৃত্যুঝুঁকি।

এসব হাসপাতালের মেশিনগুলো বছরের পর বছর নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কিছু মেশিন ইতোপূর্বে দু’বার রিপিয়ার করা হলেও এগুলো দিয়ে বেশিদিন কাজ চালানো সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বাচ্চাদের জন্য নির্ধারিত পেডিয়াট্রিক ক্যাথল্যাবটিও বেশ কিছুদিন ধরে নষ্ট। এ মেশিনটি ঠিক করতে কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে মেশিনটির ওয়ারেন্টি পিরিয়ডও প্রায় শেষ। এ কারণে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে সব ধরনের এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে রোগীদের অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। কেউবা হৃদরোগ হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছে। আবার কেউবা বেসরকারি হাসপাতালের দালালের খপ্পরে পড়ে চিকিৎসার নামে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। কিছু কিছু মেশিন অনেক পুরনো হয়ে যাওয়ায় রিপিয়ার করেও কাজ চালানো যাচ্ছে না।

এমনও দেখা যাচ্ছে এক্স-রে টিউব নষ্ট হয়ে গেছে। এ টিউবটি ঠিক করতে প্রায় এক কোটি টাকা প্রয়োজন। কিছুদিন আগে লিখেছিলাম বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিশ্বের কোথায় স্কলারশিপে পড়ালেখা করা যায় সেই সুযোগের ব্যবহার করে বিদেশে পড়াশুনা করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা নিজ অর্থে দেশ ছেড়ে বিদেশে পড়াশুনা করতে উঠে পড়ে লেগেছে। উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে অর্ধলাখ শিক্ষার্থী বিদেশ যাচ্ছেন। ডলার সংকটের কারণে দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংক এবং শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মূলত দেশের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ভর্তি, টিউশন, আবাসন ফিসহ বিভিন্ন খরচ বিদেশে পাঠান। প্রাথমিকভাবে বিদেশগামী একজন ছাত্র ২০-৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিদেশ পাঠান। পাঁচজন ছাত্রের টিউশন ফি পাঠানো হলে সেটির পরিমাণ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো ব্যাংকের জন্য ১ লাখ ডলার অনেক মূল্যবান।

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কত সংখ্যক শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাচ্ছেন তার একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪৯ হাজার ১৫১ শিক্ষার্থী বিদেশে গিয়েছেন উচ্চ শিক্ষা নিতে। বিদেশগামী শিক্ষার্থীর পরিমাণ চলতি বছর আরো অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো ডলারের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে তা ১৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর ঘটনা নতুন কিছু না। তবে প্রশ্ন থেকে যায় তার পরিমাণ কত? এদিকে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় উভয়ই কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান দুই উৎসেরই পতন হওয়ায় স্ফীত হয়েছে বিওপির ঘাটতি। এসব পূরণ করতে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিশ্বের ধনী দেশগুলো রিজার্ভ যাতে নষ্ট না হয় সে চেষ্টা করে চলছে অন্যদিকে আমরা সেটা কত দ্রুত শেষ করতে হবে তা নিয়ে প্লান করছে। সবকিছু জানার পর মনে হচ্ছে প্রবাসী, গার্মেন্টস শ্রমিক, দিনমজুর, মেহনতি মানুষরাই দেশটাকে টিকিয়ে রেখেছে আর ধনীরা দেশের অর্থ, সম্পদ ধনীরামপুরে পাচার করে দিচ্ছেন।

আমার পুরো লেখাটি পড়লে প্রশ্ন আসবে এতগুলো ঘটনা কেন জড়িত এখানে? এবং একটির সঙ্গে আরেকটির কী সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে, কারণ মানুষের মনুষ্যত্ব এবং বিবেকের অবনতির পেছনে একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে। বায়ু দূষণে মনও দূষণ হয়, মনের কলুষতা, বিবেকের অবক্ষয়, শিক্ষার অধঃপতন, গণতন্ত্রের বিসর্জন সবকিছু বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তবুও আমি শুধু একটি বিষয়ের উপর রিফ্লেক্ট করবো সেটা হলো শিক্ষা। এত টাকা খরচ করে বিদেশে পড়ে কি আমরা সঠিক শিক্ষা অর্জন করছি? নাকি আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক তাই যার যা খুশি তাই করছি? এর নাম তো স্বাধীনতা নয়! স্বাধীনতা মানে তো দায়িত্ব। 

যাইহোক আমরাও বিদেশে পড়ছি তবে দেশের বারোটা বাজিয়ে না। তাছাড়া অতীতে মানুষ দেশের লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে যেতেন স্কলারশিপে, প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে দেশের সেবা করতেন। পরে দেশ স্বাধীন হলে কিছু সুযোগ হলো বিদেশে লেখাপড়া করার, কিন্তু সেটা তো দেশের অর্থ ধ্বংস করে নয় বরং বিদেশী স্কলারশিপের সৎব্যবহার করে। কিন্তু এখন কী হচ্ছে?

যাইহোক বিদেশি টাকার অভাবে এখন দেশের যন্ত্রপাতি থেকে অনেক কিছু অচল হবার পথে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছেন এসব সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সাথে নতুন মেশিন আনা দরকার। হৃদরোগ চিকিৎসায় জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরেই ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অবস্থান। সেখানেও সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।

কারণ আমি একটি মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসার জন্য খুলনা থেকে শুরু করে ঢাকার এসব হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এসব কথা জানতে পারি। শেষে কোন উপায় না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রোগীর চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ করি। আশা করি রোগী সেখানে সুচিকিৎসা পাবে।

দেশের একটি দরিদ্র ছেলের হৃদয়ে ফুটো ধরা পড়েছে। আমাকে তার জন্য কিছু করতে বলা হয়েছে। তার চিকিৎসার সাহায্য পেতে আমাকে নানা জায়গায় নক করতে হয়েছে। সব জায়গা নক করতে গিয়ে এত কিছু জানা আর জানা থেকে বিষয়গুলো সবার সঙ্গে শেয়ার করা। এবার আসুন বরং জানি হার্টের ফুটো নিয়ে বিস্তারিত, এটি কিভাবে সারানো যায়। বাচ্চাদের মধ্যে সাধারণত যে ধরনের হার্টের রোগ দেখা যায় তা জন্মগত বা কনজেনিটাল। জন্মগত হার্টের রোগ নানা রকমের হতে পারে, যার অন্যতম একটি হলো হার্টে ফুটো থাকা।

হার্টের মধ্যেকার এই ফুটোর কারণে বাচ্চার বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে কিংবা ঘন ঘন সংক্রমণও ঘটতে পারে। তাছাড়া তাদের হার্টের ওপরে অবাঞ্ছিত চাপ তো পড়েই। যদি ফুটো খুব ছোট হয় তবে বাচ্চার তেমন কোনো উপসর্গ নজরে পড়ে না। তবে ছিদ্রটি যত বড় হবে তত তাড়াতাড়ি সেটি ধরা পড়বে। অনেক সময় জন্মের পর পরেই বাচ্চার অসুবিধাটা বোঝা যায়। আমাদের দেশে এসব কীভাবে ধরা পড়বে যেখানে সবাই গরীব জন্ম হয় শিশুর বাড়িতে, প্রতিবেশী দাইমার সাহায্যে!

বেশিদিনের কথা নয় আমার পরিচিত সুইডেনে সদ্য জন্ম একটি শিশুর হৃদয়ে ফুটো ধরা পড়ে তখন যা ঘটে সেটা বলি। —যেদিন প্রসিডিওর করা হবে তার একদিন আগে বাচ্চাটিকে তার মা-সহ হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়। এরপর রক্ত পরীক্ষা ছাড়াও কিছু অনুসন্ধান করে দেখে নেওয়া হয়, বাচ্চাটির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া ঠিক হবে কিনা। পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে একেবারে নিশ্চিত হয়ে বাচ্চাটিকে ক্যাথল্যাবে নিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য অজ্ঞান করে নেওয়া হয়। সেই সময়ে বাচ্চাটি বুঝতেই পারে নি যে তার শরীরে ঠিক কী করা হলো।

আমাদের কুঁচকিতে দুটি প্রধান শিরা আছে। সেই শিরার মধ্যে ফুটো করে ক্যাথেটার বা সরু তার ঢুকিয়ে একেবারে হার্টের ভেতরে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। একবার সেখানে পৌঁছাতে পারলে হার্টের মধ্যে যেখানে ফুটো আছে সেখানে বিশেষ ধরনের বোতাম (বা ডিভাইস) লাগিয়ে ফুটো টিকে দু’পাশ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ডিভাইসটি প্রথমে ফুটোর ওপরে বসে থাকে। তবে মাস দুয়েকের মধ্যে সেই ডিভাইসের ওপরে চামড়ার একটি পাতলা স্তর পড়ে যায়। তার ফলে বোতামটি আর নড়াচড়া করতে পারে না।

এই পদ্ধতির জন্য আনুমানিক এক-দেড় ঘণ্টা মতো সময় লাগে। এর পরে ৩-৪ ঘণ্টা পরে বাচ্চাটির জ্ঞান ফিরে এলে তাকে ওয়ার্ডে দিয়ে দেওয়া হয়। একদিন হাসপাতালে রেখে বাচ্চাটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ডিভাইস বসানো হলে বাচ্চাটিকে ১-২ মাস জটিল কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়, যাতে তার বুকে বসানো ডিভাইসে কোনোভাবে আঘাত না লাগে। তারপরে ডিভাইস-এর ওপর দিয়ে একবার পাতলা চামড়ার স্তর বসে গেলে অবশ্য আর কোনো নিষেধ থাকে না। এই পদ্ধতির জন্য কোনো কাটাকাটির দরকার হয় না, মোটেই রক্তপাত হয় না। দক্ষ হাতে এবং আদর্শ পরিবেশে করা হলে এই পদ্ধতি খুবই সুরক্ষিত।

তবে সব ক্ষেত্রেই যে ডিভাইস লাগানো যায় এমন কিন্তু নয়। দেখা গেছে ১০০টি শিশুর এই ধরনের সমস্যায় মোটামুটি ২০-২৫টি ক্ষেত্রে ডিভাইস-এর ব্যবহার চলতে পারে। তবে কোন ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির ব্যবহার করা যাবে আর কোথায় করা যাবে না তা একমাত্র চিকিৎসকরাই বুঝতে পারবেন। এই ধরনের প্রসিডিওরের সাহায্যে হার্টের ফুটো মেরামত ছাড়াও অন্যান্য কিছু সমস্যার সমাধানও সম্ভব। অনেক সময় হার্টের শিরার মুখ বন্ধ থাকে। ভালবের সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে ক্যাথল্যাবে নিয়ে গিয়ে বেলুন ফুলিয়ে শিরার বন্ধ মুখ খুলে দেওয়া হয়। সেই একই পদ্ধতিতে কুঁচকির কাছে রক্ত টানার মতো ছোট্ট একটি ফুটো করে সেই পথে যেখানে প্রতিবন্ধকতা সেখানে পৌঁছে গিয়ে সেখানে বেলুন ফোলালে বাধা সরে যায়। সেটা কতটা কাজের হলো তা পরে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয়।

অনেক সময় বাচ্চার ভালবের সমস্যায় অপারেশনের প্রয়োজন হয়। এখন ভালব পাল্টানোর জন্য এই অপারেশন করলে রক্ত পাতলা রাখার জন্য বাচ্চাটিকে সারাজীবন ধরে একটি নির্দিষ্ট ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। কিন্তু এই পদ্ধতিতে হার্টের বাধা সরিয়ে দিতে পারলে বাচ্চাটি একটি বড় অপারেশনের হাত থেকে বাঁচার পাশাপাশি সারাজীবন ধরে ওষুধ খেয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকেও মুক্ত হতে পারে।

গোটা বিশ্ব জুড়েই শিশুদের জন্মগত হার্টের সমস্যায় এখন এই ধরনের চিকিৎসা চলছে। আগের তুলনায় এই সব রোগের ব্যাপারে মানুষের চেতনা যে অনেকখানি বেড়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বাচ্চার উপসর্গ দেখে আজকাল অনেক বাবা-মা-ই সমস্যার আঁচ অনুভব করতে পারেন। আর তাই বর্তমানে বহু অভিভাবক বাচ্চাদের হার্ট সংক্রান্ত রোগ নিয়ে কার্ডিওলজিস্টদের কাছে পরামর্শের জন্য আসছেন।

আগে এই ধরনের সমস্যার একমাত্র সমাধান ছিল ওপেন হার্ট সার্জারি। তখন পিডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি ইন্টারভেনশন, মানে বর্তমানে ক্যাথল্যাবে নিয়ে গিয়ে যে ধরনের প্রসিডিওর করা হয় (যাকে অনেকে মাইক্রোসার্জারিও বলে থাকেন) তা আজকের মতো উন্নত ছিল না। গত ২০-৩০ বছর ধরে এই চিকিৎসার ধীরে ধীরে উন্নতি ঘটেছে। ফলে বর্তমান প্রজন্মের কাছে একজন পিডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্টের ভূমিকা অনেকখানি বেড়ে গেছে।

তবে সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। আমি ঘুষ, দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে বলতে শুরু করেছি "ক্ষান্ত হও, বদলে যাও, বদলে দাও, ভালো হও" লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটতে চাচ্ছি। এতে দুর্নীতি-দুঃশাসন কমবে না; তারপরও মনের তাগিদে প্রতিবাদ করছি। এগুলো দেখলে কোনো না কোনো দুর্নীতিবাজ যদি লজ্জা পায়। দুর্নীতি-দুঃশাসন, অর্থপাচার ও নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি শুরু করবো বলে মনে মনে ভাবছি! যাইহোক অনেক কিছুই আলোচনা হলো। দেশ গঠনে সবার যে প্রয়োজন তা নতুন করে মনে করিয়ে দিতে চাই না, তবে সততা এবং সঠিক শিক্ষার পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ তথা দেশ গঠনে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ কামনা করি।
 
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন থেকে, [email protected]

dwl

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 770