ঢাকা,  রোববার
০৫ মে ২০২৪

The Daily Messenger

রংপুরে ভাতিজার বিরুদ্ধে চাচাকে পরিকল্পিকতভাবে হত্যা

মামলায় জড়িয়ে দখলকৃত জমিতে বাসাবাড়ি ও দোকান নির্মানের অভিযোগ

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ১০ মার্চ ২০২৪

মামলায় জড়িয়ে দখলকৃত জমিতে বাসাবাড়ি ও দোকান নির্মানের অভিযোগ

ছবি : মেসেঞ্জার

রংপুরের পীরগাছার দেউতিতে চাঞ্চল্যকর তাহের আহমদ হত্যা মামলায় পরিকল্পিতভাবে চাচা এবং চাচাতো ভাইদের জড়িয়ে অবৈধভাবে দখলকৃত জমিতে বাসাবাড়ি দোকান পাট নির্মানের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি পরিবার।

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলার বাদিকে বিভ্রান্ত করে হত্যাকান্ডের শিকার তাহের আহমদের স্ত্রীর বড় ভাই নুর হোসেন তাদের মামলায় জড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

রোববার (১০ মার্চ) সকালে রংপুর মহানগরীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তাহের হত্যা মামলার জামিনে থাকা আসামি চাচা শ্বশুড় পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের দেউতি গ্রামের খলিলুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে ৮৯ বছর বয়সি খলিলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, গত বছর ১৬ অক্টোবর দিবাগত রাত টার দিকে আমার ভাই মৃত লুৎফুর রহমানের পুত্র নুর হোসেন বাড়িতে (আমার জায়গা অবৈধ দখল করে করা বাড়ি) নির্মমভাবে নিহত হন। দাওয়াত খেতে আসা আমার নিরপরাধ ভাতিজি জামাই তাহের আহমদ। ঘটনায় ১৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়। ওই মামলায় আমিসহ আমার পুত্র নাতিকেও আসামী করা হয়। পরবর্তীতে আমরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাই।

খলিলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাতিজা (আমার জমি অবৈধভাবে দখলকারি) নুর হোসেন আমার ভাতিজি জামাইয়ের বাবা আমার বিয়াই আনারুল্লাহকে পরিকল্পিতভাবে ভুল বুঝিয়ে আমাদের নাম মামলায় অন্তর্ভূক্ত করেছেন। আমাদের নামে মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করে অবৈধভাবে দখল করা আমার জমিতে বাসাবাড়ি দোকানপাট নির্মান করেছেন।

খলিলুর রহমানের অভিযোগ, আমার বড় ভাই নুর মোহাম্মদ লুৎফর রহমানসহ আমরা তিনভাই মিলে ১৯৭০ সালে দেউতি মৌজার ১৬৯৬ দাগে একর ৫৯ শতক জমি ক্রয় করি। এর মধ্যে আমি একর ১৯ দশমিক ৬৬ শতক জমির মালিক হয়ে ভোগ দখল করে আসতেছিলাম। পরবর্তীতে আমার ভাই লুৎফর রহমান তার ভাগের সমুদয় অংশ বিক্রি করে দেয় এবং আমিও আমার জমি থেকে ৬২ শতক জমি বিক্রি করে দেই।

বাকী ৫২ শতক জমি আমি স্থানীয় আব্দুল জব্বারের পুত্র রফিকুলের কাছে বন্ধক রাখি এবং বাকি শতক জমিতে পুকুর হিসেবে ভোগ দখল করে আসছিলাম। আমার বড় ভাই লুৎফর রহমানের মৃত্যুর পর হঠাৎ করে আমার ভাতিজা নুর হোসেন আমার অংশের ১৬ শতক জমি দাবি করে বলে, ওই জমি আমার ভাই তাদের দলিল করে দিয়েছে। এসময় আমি অসুস্থ্য থাকায় জোড় করে আমার ভাতিজা নুর হোসেন, মানিক, ইউসুফ আলী এবং মুত নুরুল আমিনের পুত্র রফিকুল ইসলাম ওই ৫২ শতক জমি দখল করে নেয় এবং আমি যার কাছে বন্ধক রেখেছিলাম তাকে বের করে দেয়।

বিষয়টি নিয়ে আমি একাধিকবার স্থানীয় গণমান্যব্যক্তি, ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দেই। কিন্তু কোনা সুরাহা না হওয়ায় ২০১৫ সালে রংপুর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করি। ২০১৭ সালে ওই মামলায় দখলবাজ ভাতিজাদেরকে আমার জমি আমার কাছে দখল বুঝে দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাকে তারা ওই জমি বুঝে না দিয়ে সেখানে বসতবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

খলিলুর রহমান বলেন, নুর হোসেনের দখল করা ওই বাড়িতে নির্মমভাবে খুন হন আমার ভাতিজি জামাই তাহের আহমদ। আমার জমিজমা বেদখল করে বসবাস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা আমার ভাতিজা নুর হোসেন পরিকল্পিতভাবে ওই মামলায় আমিসহ আমার পুত্র নাতির নাম দিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, মামলার পর আমরা বাড়ি ছাড়া হয়ে গেলে নুর হোসেন দ্রুত গতিতে আমার জমিতে পাকাবাড়ি পাকা দোকানঘর নির্মান করেন। যা আমি জামিন নিয়ে এসে দেখতে পাই। মূলত ওই ঘটনার সময় আমরা কেউই ঘটনাস্থলে ছিলাম না। সবাই বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘটনার পর চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজনের মতো আমরাও বিষয়টি জানতে পারি।

খলিলুর রহমান বলেন, শুধু তাই নয়, ঘটনার পর রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবে গত বছর নভেম্বর আমার নাতি রাসেল এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, তার পিতা তাহের আহমদ ঘটনার সময় মামা নুর হোসেনের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রাতে হট্রগোলের খবর পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখন স্থানীয় যুবলীগ নেতা লিটনের নেতৃত্বে তার পিতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু থানায় যুবলীগ নেতা লিটন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ভাই তৈয়বের নামসহ এজাহার দিলে তা গ্রহণ করেনি পুলিশ।

পরে পুলিশ বাধ্য করে এজাহার পরিবর্তন করে মামলা দিতে। এসময় তার সাথে ছিলেন খুনের শিকার তাহেরের একমাত্র ছোট মেয়ে তাম্মিম আকতার, স্ত্রী রশিদা বেগম, মা তাহেরা বেগম, বাবা আনারুল্লাহ, ভাই জাকির হোসেন সমন্ধি ইউসিুফ আলী।

খলিলুর রহমান দাবি করেন, ওই সংবাদ সম্মেলনে কোথাও আমার নাতি তার পরিবারের লোকজন এই হত্যাকান্ডের সাথে আমিসহ আমার পুত্র খোকা মিয়া( ৩০), সোলায়মান আলী (২৫), রোকন মিয়া (২৩), মহসিন আলী (৩৫), ইউনুস আলী (৪৫) এবং আমার নাতি সাগর মিয়া (১৯) নাম উল্লেখ করেন নি। কিন্ত ওই মামলায় আসামি হিসেবে আমাদের নাম দিয়ে হয়রানি বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে।

খলিলুর রহমান আরো বলেন, আমার ভাতিজা নুর হোসেন আমার জমি বেদখল করে রাখতে মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া হয়রানি করতেই আমার বিয়াই আনারুল্লাহকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের মামলায় আসামি বানিয়েছেন। এতে আমরা খুব আতংকে জীবনযাপন করছি। আমরা পুরো বিষয়টি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমাদেরকে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

একই সাথে যারা আমার ভাতিজি জামাইকে নির্মমভাবে খুন করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে ফাঁসি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

ব্যপারে পীরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ সুশান্ত কুমার জানান, ওই ঘটনাটির তদন্ত চলছে। আমরা সঠিকভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কেউ যদি তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হন তাহলে তারা চার্জশিট থেকে বাদ পড়বেন।

মেসেঞ্জার/মাজহারুল/আপেল

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700