ছবি : মেসেঞ্জার
জয়পুরহাটে হঠাৎ করেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে নতুন নতুন রোগী। গেল পাঁচ দিন থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় দুই শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু রোগী জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এর মধ্যে মঙ্গলবার একদিনেই ১৩৪ জন ডায়রিয়ায় রোগি ভর্তি হয়েছে। রোগির চাপে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বেডে জায়গা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে ও করিডোরে শুয়ে বসে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন রোগিরা। রোগি এবং স্বজনদের পদচারণায় হাসপাতালে পা ফেলানোর জায়গা নেই।
চিকিৎসকরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুম, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পৌরসভার পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, শুধু জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালেই গেল পাঁচ দিনে প্রতিদিনই চিকিৎসা নিতে এসেছে ৪৫ থেকে ৫০ জন রোগী। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলার হাসপাতাল, বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কনসালটেশন সেন্টারেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে।
এদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু ও বয়স্ক রোগী রয়েছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ওইসব রোগীদের জায়গা না হওয়ায় মেঝেতে ও বারান্দায় গাদাগাদি করে জায়গা নিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ থেকে থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতিদিনই ৪৫ থেকে ৫০ জন রোগী আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। সোমবার পর্যন্ত আধুনিক জেলা হাসপাতালে প্রায় ১৫ জন শিশু ভর্তি ছিল। হাসপাতালে ভর্তির পর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা ৭-৮ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর তারা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন।
গেল পাঁচ দিন থেকে রিপোর্ট আজ পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক রোগীকে হাসপাতালের বেডে, মেঝেতে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে দেয়া গেছে। এসব রোগীরা প্রচন্ড জ্বর, শরীর ব্যথা এবং শিশুরা সাধারণত বমি, পাতলা পায়খানা ও পেটের ব্যথায় ভুগছিল। পরে অবস্থা সংকটাপূর্ণ ভেবে হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
হাসপাতালেন চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শহরের আরাফাত নগর মহল্লার ৪ বছরের শিশু আরজা, পাঁচবিবি উপজেলার শিমুলতলী গ্রামের মুরছালিনের অভিভাবক জানান, তারা ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে গত পাঁচদিন থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের এলাকার অনেক শিশুরাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
সদর উপজেলার হানাইল গ্রামের জাকির হেসেন বলেন, হঠাৎ ইফতারের পর তার স্ত্রীর পেট ব্যথার পাশাপাশি বমি শরু হয়। এর পর হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে আমি নিজেই ডায়রিয়ায় আক্রন্ত হই।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ খুব খারাপ। মেঝেতে পা রাখার জায়গা নেই রোগীদের অনেক চাপ।
জয়পুরহাট পৌরসভার মুসলিম নগরের গোলাম আজম জানান, প্রথমে পেট ব্যথা তার পর পায়খানা শরু হয়। সেহরির সময় যখন পানি পান করি পানিটা ঘোলা ছিল। আমার ধারণা পৌরসভার পানির কারণে এই ডায়রিয়া হতে পারে।
জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: রাশেদ মোবারক বলেন, শুষ্ক মৌসুম, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পৌরসভার পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যেতে পাড়ে বলে আমরা ধারণা করছি। শহরে রাস্তার কাজ চলছে পানির লাইন ফেটে যাওয়ার কারণে সাপ্লাই পানি দুষিত হয়ে এই সমস্যা হতে পারে।
উল্লেখ্য: গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের মাত্রাটা বেশি। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় ২০০ নারী, পুরুষ ও শিশুকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
মেসেঞ্জার/মামুন/আপেল