ঢাকা,  সোমবার
০৬ মে ২০২৪

The Daily Messenger

কুষ্টিয়ায় টিউবওয়েলে পানির সংকটে হাহাকার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

কুষ্টিয়ায় টিউবওয়েলে পানির সংকটে হাহাকার

ছবি : মেসেঞ্জার

কুষ্টিয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ৩৪ ফুট নিচে নেমে গেছে। জেলার উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এলাকা গুলোর টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। নদী খালবিল শুকিয়ে গেছে। ফলে মানুষের মধ্যে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

গত এক মাস ধরে পানির তীব্র সংকটে কষ্ট করেছেন জেলার লাখ লাখ মানুষ। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।

দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত দাবদাহ, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলোও ক্রমেই শূন্য হয়ে পড়ছে। এছাড়াও অপরিকল্পিত গভীর নলকূপ অসংখ্য সাব-মার্সিবল পাম্প স্থাপনের কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে।

ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে পদ্মা নদী শুকিয়ে গেছে। যার ফলে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ খালেও পানি নেই। এছাড়া গড়াই, কালী নদী সহ অন্যান্য নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। ফলে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গিয়েছে। এতে অগভীর টিউবওয়েলগুলোতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে।

এতে একদিকে পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানির যেমন সংকট দেখা দিয়েছে, গৃহস্থালির কাজসহ, কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার জন্যও পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পানি। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই পানির স্তর নামতে শুরু করে। বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩৪ ফুট নিচে নেমে গেছে।

বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি কৃষি জমিতে সেচের পানির সংকটও দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকার মাঠের সেচযন্ত্র পানি উঠছে না। ফলে বোরো ধানের জমিতে সেচ নিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে কৃষকেরা।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি এলাকার সুমন আলী বলেন, আমাদের এলাকার ৯০ ভাগ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। টিউবওয়েলগুলোতে পানি না উঠায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় যেতে হচ্ছে।

আশেপাশের এলাকার অবস্থাও একই। পানির অভাবের কারণে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গত এক মাস ধরে টিউবওয়েলে পানি উঠে না। বর্তমানে তীব্র পানি সংকটে দিশেহারা অবস্থা।

কুমারখালীর বাধবাজার এলাকার মতি মন্ডল বলেন, কয়েকদিন ধরে অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। খালবিল নদী শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। খাবার পানি, গৃহস্থালির কাজ কৃষি জমিতে সেচ দিতে ভোগান্তি হচ্ছে। পানির অভাবে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। পানির অভাবে ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

খোকসা, কুমারখালী ভেড়ামারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। মাঠের সেচ পাম্পে পর্যাপ্ত পানি উঠছে না।

বোরো ধান সহ বিভিন্ন চাষাবাদ নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত। পানির অভাবে ফসলের ফলন কমে যাবে এবং খরচ বেড়ে যাবে। দিনদিন পানির সংকট বেড়েই চলেছে।

কুমারখালীর যদুবয়রা গ্রামের নাজমা খাতুন বলেন, অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। খুব পানির সংকট, দূরদূরান্ত থেকে খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। গোসল, গৃহস্থালির কাজ গবাদিপশুর জন্য পানি সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই পানির সংকট চলছে। যার কলে পানি উঠছে, সেখানে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহীম মো. তৈমুর বলেন, কুষ্টিয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ৩৪ ফুট নিচে নেমে গেছে। অতিরিক্ত দাবদাহ, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়া, নদী খালবিল শুকিয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত গভীর নলকূপ অসংখ্য সাব-মার্সিবল পাম্প স্থাপনের কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে।

ব্যক্তিগতভাবে বসানো বেশিরভাগ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তারা টিউবওয়েলে পানি উঠছে। পানির স্তর ২০ ফুট নিচে নামলেই সাধারণ নলকূপ টিউবওয়েলে পানি উঠতে সমস্যা হয়। পানি সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

মেসেঞ্জার/রাজু/আপেল

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700