ছবি : মেসেঞ্জার
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জেলা শহর যশোরে বইছে ৪২ বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। তীব্র গরমের রেশ পড়েছে জেলার ব্যস্ততম বন্দর নগরী বেনাপোলে। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনশূন্য হয়ে পড়েছে বন্দরসহ বেনাপোল এবং শার্শার রাস্তাঘাট।
তীব্র তাপদাহের কারণে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। মানুষ একটু স্বস্তির জন্যে হাহাকার করছেন। রাস্তাঘাটে অতিপ্রয়োজন ছাড়া কোনো মানুষ বের হচ্ছেন না। শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা খুবই করুণ।
রাস্তায় রিকশা-ইজিবাইক, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানরিকশা নিয়ে যারা বের হয়েছেন, তারা ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে উঠেছেন। রাস্তার তাপে যেনো পুড়ে যাচ্ছেন ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা। সামান্য পরিশ্রমের পরই বিশ্রাম নিতে বাধ্য হচ্ছেন এসব পেশার মানুষ। এতে তাদের রোজগারও যাচ্ছে কমে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের বেনাপোল ও শার্শায় এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
যশোর বিমানবন্দর মতিউর রহমান ঘাঁটিস্থ আবহাওয়া অফিস সূত্র জানা গেছে, গত কয়েকদিনে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে।
শুক্র ও শনিবার ব্যতীত প্রতিদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকে বেনাপোল বন্দরসহ বেনাপোল শহরজুড়ে। অথচ তীব্র তাপদাহের কারনে জনশূন্য হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট।
আন্তর্জাতিক এ সড়ক দিয়ে মানুষজন বিভিন্ন অফিস-আদালত, হাসপাতাল ও স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে। ফলে মানুষের উপস্থিতি এবং যানবাহনের চলাচল সব থেকে বেশি থাকে সড়কটিতে।
এদিকে, গত এক সপ্তাহ যাবৎ বেনাপোলে প্রখর রোদ ও গরম অনুভূত হচ্ছে। এ অবস্থায় কাজে বেরিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র তাপদাহে জনশূন্য হয়ে পড়েছে পুরো সড়কটি।
মানুষের উপস্থিতি যেমন কম, তেমনি যানবাহনের উপস্থিতিও নগণ্য। সড়কে নেই যানবাহনের উপস্থিতি। দু-একটা ইজিবাইক দেখা গেলেও যাত্রীর অপেক্ষায় মোড়ে মোড়ে বসে থাকতে দেখা গেছে চালকদেরকে।
বেনাপোল সোনালী ব্যাংক মোড়, রেলস্টেশন মোড়, চেকপোস্ট সাদীপুর মোড়, চালপট্রি মোড়ের রাস্তার পাশে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ইজিবাইক চালকরা জানান, সকালে ২/১টি ভাড়া পাওয়া গেলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বেনাপোল শহর পুরো ফাঁকা হয়ে গেছে। এতো গরমে মানুষ বের হবে কী করে? পেটের দায়ে বের হয়ে যাত্রী পাচ্ছি না। ভাড়ায় ইজিবাইক চালাই, মহাজনকে দেওয়ার মতো টাকা এখনও ওঠেনি। নিজের জন্যে তো দূরের কথা, পরিবারের জন্য খাদ্য-খাবার কেনার টাকা এখনও জোগাড় হয়নি।
বেনাপোলের ইসলামী ব্যাংকের নীচে পথচারী ইকবাল হোসেন বলেন, বাসায় অসুস্থ রোগী আছে, তার জন্য ওষুধ কিনতে বের হয়েছি। রাস্তায় মোটরসাইকেল রেখে দুই মিনিটের জন্য ফার্মেসিতে এসেছি। এখন মোটরসাইকেলের ওপর বসা যাচ্ছে না। রোদে আগুন হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার বেনাপোলের চেকপোস্টের সড়কের একটি গাছের নীচে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভ্যান চালক আলতাফ হোসেন। এদিন সকাল আটটায় তিনি বাড়ি থেকে ভ্যান নিয়ে বের হন। কিন্তু গরমে চালাতে পারছেন না।
তিনি বলেন, রোদের দাপটে বন্দর এলাকার লোকজন বাইরে কম বের হচ্ছে। তাই আয় রোজগার কমেছে। প্রতিদিন ভ্যান মালিককে দেড়শ‘ টাকা, নিজের দুপুরের খাবার, চা নাশতার খরচ মিলিয়ে আগে ৩৫০ টাকা আয় করতে হবে। এরপর সংসার খরচের হিসাব। এই গরমে না পেরে ভ্যান নিয়ে ছায়ায় বসে আছি।
বাজারের কাঁচাবাজারেও ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেক কম দেখা গেছে। ভবারবেড় গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, বাজার করতে হবে এজন্য বের হয়েছি। অন্যথায় এই গরমে বাড়ি থেকে বের হতাম না। রোদে শরীর যেন পুড়ে যাচ্ছে।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক লঙ্কীন্দার কুমার দে বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহে হিট স্ট্রোক এড়াতে সবাইকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ সময়ে ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, পক্স, হিটস্ট্রোক, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি হতে পারে।
প্রচন্ড গরম থেকে মুক্তি পেতে কেউ যেন ডিপ ফ্রিজের পানি পান না করেন। এ সময় প্রচুর পানি, ডাবের পানি, দেশি ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে বলা হচ্ছে। এ ছাড়া বেশি, বেশি খাবার পানি পান ও পাতলা সুতি কাপর পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মেসেঞ্জার/জামাল/আপেল