ছবি : মেসেঞ্জার
মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) ২০২৪, মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুর ক্লাব আমানে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন মালয়েশিয়া (ডুয়াম) এর মেগা ইভেন্ট যেখানে আউটস্ট্যান্ডিং বাংলাদেশী শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী এবং পেশাজীবীদের সম্মাননা জানানো হয়।
এই প্রোগ্রামের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশীদের গৌরবগাথা অর্জন গুলো আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তুলে ধরা। বাংলাদেশীরা যে শুধু অড জব ই করে না তারা বিভিন্ন সেক্টরে সুনামের সাথে মাথা উঁচু করে কাজ করে বাংলাদেশকে পজিটিভলি ব্র্যান্ডিং করছে তা সকলের নিকট তুলে ধরাই ছিল এই প্রোগ্রামের অন্যতম উদ্দেশ্য।
এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিশ্বের টপ ১% ,২% সাইটেড সায়েন্টিস্ট সহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের প্রফেসরদের সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়াও মেধাবী বাংলাদেশী শিক্ষার্থী যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের টপ রাঙ্কিং করছে তাদের সম্মানিত করা হয়। প্রফেশনাল ক্যাটাগরি তে যারা প্রফেশনালি নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদেরকেও সম্মানিত করা হয়।
ইভেন্ট অর্গানাইজিং কমিটির আহবায়ক সুরাইয়া ইয়াসমিন নাহারের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আলমগীর চৌধুরী আকাশের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাই কমিশন মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মান্যবর মিস্টার মোহাম্মদ শামীম আহসান।
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ান লোকাল প্রফেসর শাহরুল বিন নাঈম সাদিক ( ডীন, সেন্টার ফর পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টাডিজ অফ আই আই ইউ এমে) , প্রফেসর রোমজি বিন রোসমান ডেপুটি ডীন, ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক ব্যাংকিং এন্ড ফাইন্যান্স), ইউনিভার্সিটি মালায়া সহ বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়ান লোকাল ডীন, বাংলাদেশ হাই কমিশন মালয়েশিয়ার কাউন্সিলর কনসুল্যর মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম এবং মালয়েশিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর মাহবুব আলম শাহ।
এছাড়াও শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, ইয়েমেন, ভারত সহ প্রায় ১০টি দেশের অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং কুরআন তেলাওয়াত করেন রুবাইয়্যাত রশিদ তালুকদার। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের এবং মালয়েশিয়ায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় এবং জাতীয় সংগীতের সময় সকলেই দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন রাইসা তাহসিন অহিয়া, মহুয়া, মোঃ মামুনুর রশিদ , কাজী শারমিন রহমান রুম্পা, মোঃ পলাশ হোসেন এবং মালয়েশিয়ান সঙ্গীত শিল্পী ফাতিহা।
কবিতা আবৃত্তি করেন রাবাকা সুলতানা জেরিন, পহেলা বৈশাখের নাচে মোহবৃষ্ট করে রাখেন শুভ্রা এবং জাদু পরিবেশন করেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার প্রফেসর ড. মোতাকাব্বির।
অর্গানাইজিং কমিটির আহবায়ক সুরাইয়া ইয়াসমিন নাহারের স্বাগত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে মূল প্রোগ্রাম শুরু হয় এবং ডুয়াম কমিটির পক্ষ থেকে প্রফেসর ড. সোহেল মুস্তারি সকল অতিথিদের ধন্যবাদ জানান আজকের ইভেন্টে উপস্থিত হওয়ার জন্য।
অর্গানাইজিং কমিটির পক্ষ থেকে সদস্য সচিব আলমগীর চৌধুরী আকাশ প্রোগ্রামের উদ্দেশ্যে, এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের সিলেকশন প্রক্রিয়া সহ বিস্তারিত তুলে ধরেন তার বক্তব্যে।
ডুয়ামের সহ সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহীম সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন।অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ইভেন্ট অর্গানাইজিং কমিটির ক্রিয়েটিভ আর্টস অ্যান্ড ডিজাইন টিমের সদস্য আনিকা ইসলাম অর্পা এবং ইসমাত জাহান ঈশিতা।
তাদের দুজনের প্রাণবন্ত সঞ্চালনা অনুষ্ঠানে নতুন মাত্রা যোগ করে। এছাড়াও ইভেন্টে ভলান্টিয়ার কোঅর্ডিনেটর হিসেবে ছিলেন মাহিন মুস্তাফিজ, অফিস সেক্রেটারি হিসেবে ছিলেন রাবাকা সুলতানা জেরিন, মার্কেটিং এবং প্রমোশন ম্যানেজার হিসেবে ছিলেন মোহাম্মদ আরিজ উলফি মিথুন, এডিটোরিয়াল টিমে ছিলেন মোহাইমিনুল ইসলাম মারুফ, কোঅর্ডিনেটর হিসেবে ছিলেন অপর্ণা ম্যাডাম।
অনুষ্ঠানে যে সকল বাংলাদেশীরা শিক্ষা এবং কমিউনিটি উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন তাদেরকে ৩ ক্যাটাগরিতে এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
অ্যাক্সিলেন্স বাংলাদেশী অ্যাকাডেমিশিয়ান হিসেবে বিভিন্ন বিশ্বিদ্যালয়ের ১৬জন শিক্ষককে, অ্যাক্সিলেন্স বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে ১৬ জন এবং অ্যাক্সিলেন্স বাংলাদেশী প্রফেশনাল হিসেবে ৩জন সর্বমোট ৩৫ জনকে অ্যাক্সিলেন্স বাংলাদেশী এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
এছাড়াও কমিউনিটি তে অবদান রাখার জন্য সাংবাদিক আহমাদুল কবির, মোহাম্মদ আলি এবং মোস্তফা ইমরান রাজুকে তাদের কাজের জন্য এপ্রিশিয়েট করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মান্যবর হাই কমিশনার মোঃ শামীম আহসান প্রথমেই তিনি নিজেকে একজন গর্বিত ঢাবিয়ান হিসেবে পরিচয় দেন এবং আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ দেন এরকম একটি চমৎকার আয়োজন করার জন্য।
তিনি বাংলাদেশী এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সকলকে অভিনন্দন জানান এবং তাদের কাজ দ্বারা যেভাবে পজিটিভ বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করছেন তার ভুয়সী প্রসংশা করেন।সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিপুণতার সাথে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিপুনতা ও দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সকল প্রবাসীদের এক যুগে কাজ করার আহবান জানান হাইকমিশনার মো: শামীম আহসান।
শামীম আহসান বলেন, ডুয়াম যখন আমাকে অনুস্টানে আসার আমন্ত্রণ করে তখন আমি না করতে পারিনি। কারন আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র।
ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় একটি গর্বের জায়গা। যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা লেখা পড়া শেষ করে বড় একটি অংশ বাংলাদেশের নেতৃত্বে দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। উল্লেখ্য মান্যবর হাই কমিশনার মোঃ শামীম আহসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর পলিটিকাল সাইন্স ডিপার্টমেন্ট হতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট রেজাল্ট নিয়ে ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স সম্পুর্ণ করেন।
অর্গানাইজিং কমিটির আহবায়ক সুরাইয়া ইয়াসমিন নাহার তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন আজকের এই আয়োজনে উপস্থিত হওয়ার জন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত প্রোগ্রামে উপস্থিত হওয়ার জন্য মান্যবর হাই কমিশনার মোঃ শামীম আহসানকে সকলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি এরকম একটি প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য এর সাথে জড়িত সকল কমিটি মেম্বার, ভলান্টিয়ার এবং স্পন্সরদের ধন্যবাদ জানান।
অর্গানাইজিং কমিটির সদস্য সচিব আলমগীর চৌধুরী আকাশ তার বক্তব্যে প্রোগ্রামের মিশন ভিশন, এক্সিলেন্স বাংলাদেশী এ্যাওয়ার্ড সিলেকশন প্রক্রিয়া সহ নানাদিক তুলে ধরেন।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন প্রোগ্রামের সিলেকশন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার জন্য প্রোগ্রাম সংশ্লিষ্ট কাওকে নমিনিশনে রাখা হয় নাই। তিনি এও উল্লেখ করেন, পুরো সিলেকশন প্রক্রিয়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি যাচাই বাছাই করে পুরোপুরি স্বচ্ছতার সাথে সিলেকশন করেন।
তিনি তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেন এই প্রোগ্রামের সাথে বাণিজ্যিক কোন উদ্দেশ্য জড়িত নেই এটা সম্পুর্ণ আউটস্ট্যান্ডিং বাংলাদেশীদের কাজের স্বীকৃতির মাধ্যমে তাদের উদ্বুদ্ধ করা এবং নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্যে এই প্রোগ্রামের আয়োজন করা।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা ডুয়ামের আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এত অল্প সময়ে এত বড় একটি আয়োজন করার জন্য ইভেন্ট অর্গানাইজিং কমিটির সকলকে ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য পুরো অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল রাফেল ড্র যেখানে প্রথম পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় কুয়ালাম পুর টু ঢাকা এয়ার টিকেট, ২য় পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় কুয়ালালামপুর টু লাংকাউই এয়ার টিকেট, ৩য় পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় কুয়ালালামপুর টু পেনাঙ্গ এয়ার টিকেট সহ মোট ১০টি আকর্ষণীয় পুরস্কার।
মেসেঞ্জার/তারেক