ছবি : মেসেঞ্জার
প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার রাজশাহীর গ্রীণ প্লাজা রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ‘ভুয়া আপসনাম‘দেখিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী এজাজুল হক। তিনি বিষয়টি আদালতের নজরে আনবেন বলেও জানান।
তিনি জানান, গত ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় প্রতারণার মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, মোস্তাফিজুরের থেকে তিনি একটি ফ্ল্যাট কিনতে ১২ লাখ টাকা দেন। কিন্তু মোস্তাফিজুর চুক্তিপত্রের শর্ত ভেঙে ফ্ল্যাটটি অন্যত্র বিক্রি করেন।
এ কারণে তিনি টাকা ফেরত চাইলে মোস্তাফিজুর কৌশলে কাগজপত্র হাতিয়ে নিয়ে টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন।
এদিকে মামলার পর মোস্তাফিজুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৬ মার্চ সকালে তাকে থানা থেকে আদালতে পাঠানো হয়।
বিকালে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ মোস্তাফিজুর রহমানের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম তার জামিন আবেদন করেন। এ সময় বিচারক মহিদুল ইসলাম আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। এদিন স্বাধীনতা দিবসের ছুটি থাকায় আদালতের কর্মচারীরা ছিলেন না। আদালতে দায়িত্বে থাকা পুলিশ। এই মামলার নথিপত্র আদালতের কাছে উপস্থাপন করে। আসামির জামিন পাওয়ার কথা শুনে অবাক হন বাদী এজাজুল হক।
গত ২৭ মার্চ বিকেলে তিনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) আদালত পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে মামলার নথিপত্র তুলে দেখেন, আসামিপক্ষ একটি আপসনামা জমা দিয়েছে। ঐ আপসনামায় ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বরের স্বাক্ষর রয়েছে।
আপসনামায় উল্লেখ আছে, ‘ফ্ল্যাটের ক্রেতা এজাজুল হক চুক্তি বাতিল করছেন। চুক্তিপত্র অনুযায়ী মোস্তাফিজুর রহমান ১০ শতাংশ টাকা কেটে বাকি ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেন। এজাজুলের আর কোন দাবি থাকল না’।
এজাজুল হক বলেন, তিনি এক টাকাও ফেরত পাননি। কোনো আপসনামাও হয়নি। আদালতে জমা দেওয়া মামলার নথির আপসনামাটি ভুয়া। সেখানে থাকা তার স্বাক্ষরটি জাল।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার নামে ভুয়া আপসনামা আদালতে জমা দেওয়ার কারণে আমি মামলা করব’।
এজাজুল হক জানান, আসামি মোস্তাফিজুরের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম তার পূর্বপরিচিত। মোস্তাফিজুরকে আদালতে নেয়ার পর তিনি আপস করার জন্য কয়েক দফায় ফোন করেন। আইনজীবী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও এজাজুল হকের কাছে রয়েছে।
এতে শফিকুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি থাকলে তোমার টাকা তো পাবাই। ১২ লাখ টাকায় তুমি কোটিপতি হয়ে যাবা? মানুষের মানসম্মান আছে না?’
এজাজুল বলেন, ‘এই চিটের জন্য আপনি অনুরোধ করছেন কেন?’ একপর্যায়ে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বাদী এজাজুল হককে বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে আমি আর রিকোয়েস্ট করব না। তুমি চুপ থাকো। তুমি এই মামলাতে পারলে জেল দিও।’
ভুয়া আপসনামায় আসামির জামিন করানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপসনামা আমি দিব কেন? আমার মক্কেল দিয়েছে। আসল না নকল সেটা সেই বলতে পারবে। আমি বলতে পারবো না।’
এছাড়া আসামির জামিন শুনানির আগে বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আপোসের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। আদালতে নথিপত্র উপস্থাপন করেছিলেন আরএমপির আদালত
পরিদর্শকের কার্যালয়ের (জিআরও) বোয়ালিয়া ও মতিহার থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান।
আপসনামাটি দেখে তিনি বলেন, ‘এই আপসনামা কাল আসামি মোস্তাফিজুরের আইনজীবী দিয়েছেন।’
আপসনামাটি জাল, বাদীর এমন দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমি বলতে পারবো না। এ রকম হয়ে থাকলে বাদী বিষয়টি আদালতের নজরে আনবেন।’
তিনি আরও জানান, ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাজির হওয়ার শর্তে আসামিকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
জানা যায়, এজাজুল হক মামলা করেন, পেনাল কোডের ৪২০, ৪০৬ ও ৫০৬ ধারায়। রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহেদী জানান, এই তিন ধারার মধ্যে ৪০৬ ধারাটি অজামিনযোগ্য। তবে বাদীর সঙ্গে আসামির আপস হলে আদালত জামিন কিংবা মামলা নিষ্পত্তি করতে পারেন।
আপসনামার কারণেই আসামি জামিন পেয়েছেন। এটি ভুয়া হলে মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখে বাদী বিষয়টি আদালতের নজরে আনতে পারেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মোস্তাফিজুর রহমান রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট। ২০১০ সালের দিকে রাজশাহীতে পলিটেকনিকে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতে তিনি এক নিঃসন্তান দম্পতির বাসায় পালক ছেলে হিসেবে আশ্রয় নেন।
২০১৯ সালে তিনি ডেভেলপার ব্যবসায় নাম লেখান। এখন তিনি দামি হ্যারিয়ার গাড়িতে চড়েন। ফ্ল্যাট বিক্রির নামে তার বিরুদ্ধে বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি করেন এজাজুল হক। এরপর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে।
এই মামলার বাদীর নাম মো. রুবেল। ফ্ল্যাট বিক্রির নামে মোস্তাফিজুর তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। বিষয়গুলো নিয়ে মামলার আসামি মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে তাকে অসংখ্যবার ফোন করা হয়। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি।
মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/আপেল