ছবি : মেসেঞ্জার
ফরিদপুর পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের উদ্যোগে বজ্রপাত প্রতিরোধে করনীয় শীর্ষক আলোচনা সভা বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকালে শহরের খন্দকার হোটেলের ২য় তলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সাঈদ আনোয়ার।
পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা সমাজ সেবা অফিসার এস এম সুজাউদ্দীন রাশেদ,পথকলি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোঃ বিলায়েত হোসেন, পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা এ্যাড. গোলাম রব্বানী রতন।
সভায় বজ্রপাত প্রতিরোধ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আরিফুল ইসলাম। এসময় তিনি জানান,'আমাদের দেশে বজ্রপাতে প্রতি বছর গড়ে ৩২০ জনের মৃত্যু হয়। যেটা পৃথিবীর যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে ২১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার ধরন বদলে যাওয়া, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়া, বড় গাছ কেটে ফেলার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে। বাংলাদেশে বজ্রপাতের কারণগুলোর মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে প্রথম ও প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি। যদিও অনেক জলবায়ু বিজ্ঞানী এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন।
আবহাওয়াবিদ উইং কমান্ডার মো. মোমেনুল ইসলাম (অব.) বলেন, এপ্রিল থেকে জুন এর মধ্যেই বজ্রপাত বেশি হয়ে থাকে। বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ার সঙ্গে বজ্রপাতের সম্পর্ক রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হলে বায়ুমন্ডল বেশি জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে, তাই বেশি বজ্রঝড় তৈরি হতে পারে। বনায়ন কমে গেলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। কারণ হিসেবে বলা যায়, গ্রিন হাউস কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে গাছপালার খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহার করে।
বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু স্থানে অবস্থান করলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে নিরাপদ স্থানে যেতে হবে। মৌসুমে ঘনকালো (ঝড়মেঘ) মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে এবং বৃষ্টি শুরুর আগে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। পাকা বাড়িতে আশ্রয় নেয়া বেশি নিরাপদ। তবে পাকাবাড়ি সুউচ্চ হলে সেক্ষেত্রে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা থাকতে হবে। বজ্রপাতের সময় জানালার কাছে না থাকাই ভালো।
পায়ে রাবারের স্যান্ডেল পরে থাকা এবং পানি ও যে কোনো ধাতববস্তু যেমন সিঁড়ির বা বারান্দার রেলিং, পানির কল ইত্যাদির স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে।
বিদ্যুৎ পরিবাহী যে কোনো বস্তুর স্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। পুকুর বা জলাশয়ে থাকা নিরাপদ নয়। বজ্রপাতে বাড়ির ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র যেগুলো ইলেকট্রিক সংযোগ বা ডিসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা ভালো। এগুলো বন্ধ থাকলেও স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। গাড়িতে থাকা অবস্থায় বজ্রপাতের পরিস্থিতি তৈরি হলে গাড়ির মধ্যে থাকায় নিরাপদ। তবে মনে রাখতে হবে গাড়ির ধাতব কোনো অংশের সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে।
বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে হলে তাল গাছ জাতীয় সুউচ্চ প্রজাতির গাছ প্রচুর পরিমাণে মাঠের মধ্যে লাগাতে হবে। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা বৈদ্যুতিক শকে আহত ব্যক্তিদের মতো। শরীর থেকে বৈদ্যুতিক চার্জ অপসারণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শরীরে ম্যাসেজ করতে হবে। আহত ব্যক্তির অস্বাভাবিক আচরণে বিচলিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা সদস্য জিল্লুর রহমান রাহাত, সাবিনা লুসি,সহ সভাপতি আফসার হোসেন,আলেয়া বেগম,মনোয়ারা বেগম,সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ লোকমান হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক তানিয়া ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ এবিএম সাহিন,দপ্তর সম্পাদক মোঃ বাতেন,মহিলা বিষয়ক সম্পাদক তামান্না মেহবুবা চুমকি,স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মোঃ পারভেজ,যুগ্ন সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিপুল, ক্রীড়া সম্পাদক মো হাফিজুর রহমান সহ অন্য অন্য সদস্য গন। আলোচনা সভা শেষে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
মেসেঞ্জার/নাজিম/তারেক