ছবি : মেসেঞ্জার
রাজশাহীস্থ ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ (আইবিএমসি) হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মের পর দুই প্রসূতির মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে ঘটনায় তলব করার পর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে পৃথক প্রতিবেদন দিয়েছে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবেদনে ওই মায়েরা অস্ত্রোপচারের আগে দেওয়া স্যালাইনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় মারা গেছেন দাবি করে বলা হয়েছে, ওই স্যালাইনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যে ঢাকায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (৬ এপ্রিল) রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর সংশ্লিষ্ট ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন প্রাপ্তির বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক জানান, অস্ত্রোপচারের আগে ওই নারীদের আইভি ফ্লুইড স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এরপর তাঁদের কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। এভাবে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া আরেক নারীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কয়েক দিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন সূত্র জানায়, গত ১৯ মার্চ রাজশাহীর দুর্গাপুরের প্রসূতি আসমা খাতুনকে (৩৮) ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঐ দিনই তাকে স্যালাইন দেয়া হয়। অস্ত্রোপচারের পর অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে তিনি মারা যান।
এর আগে গত ১৬ মার্চ নওগাঁর নিয়ামতপুরের প্রসূতি শারমিন খাতুনকে (৩৫) ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঐ দিনই স্যালাইন দেয়ার পর তার অস্ত্রোপচার করা হয়। একই ধরনের সমস্যায় তাকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত ২৫ মার্চ তিনি রামেক হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া স্যালাইন দেয়ায় আরবী খাতুন (১৯) নামের আরেক প্রসূতির একই ধরনের সমস্যা হয়েছিল। তবে তিনি চিকিৎসার পর সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক জানান, গত শুক্রবার তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর তিনি নিজ উদ্যোগে ইসলামী ব্যাংখ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন তলব করেন।
আইবিএমসি কর্তৃপক্ষ শনিবার দুটি প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে তারা ধারণা থেকে আইভি স্যালাইনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা বলেছেন। এ জন্য স্যালাইন পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষায় প্রমাণিত হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা ঠিক হবে না।
পরীক্ষায় স্যালাইনের সমস্যা থাকলে কোম্পানির সঙ্গে কথা হবে। স্যালাইনের সমস্যা না হলে আরও অনুসন্ধান করতে হবে।
ডা. আনোয়ারুল কবীর বলেন, ‘এ রকম ঘটনা দেশের অন্য জায়গায় ঘটলেও রাজশাহীতে এধরণের মৃত্যু এটাই প্রথম জানতে পেরেছি। যেহেতু স্যালাইন দেওয়া ও সিজারের পরে একই ধরনের সমস্যায় রোগী মারা যাচ্ছে, তাই বিষয়টি আমাদের আগেই জানানো দরকার ছিল। তাহলে আগে থেকে কাজ শুরু করা যেত।’
এদিকে আইবিএমসিতে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে আইবিএমসি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান চিকিৎসক এবি সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আশা করি সোমবার আমরা কাজ শেষ করতে পারব। তারপর প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’
স্বাস্থ্য বিভাগকে না জানানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ’প্রসূতিদ্বয় ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ও অসুস্থ হলেও তারা রাজশাহী মেডিকেলে মারা গেছেন। সেখান থেকে প্রতিবেদন দেবে ভেবে হয়তো কাউকে কিছু জানানো হয়নি। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস। সে জন্য তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। স্যালাইনেরও পরীক্ষা করা হচ্ছে।’
মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/আপেল