ঢাকা,  শুক্রবার
০৩ মে ২০২৪

The Daily Messenger

৫ বছরেও চালু হয়নি সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

৫ বছরেও চালু হয়নি সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস

ছবি : ডেইলি মেসেঞ্জার

দীর্ঘ ৫বছরেও চালু করা যায়নি সাতক্ষীরার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস। ফলে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। হতাশায় ভুগছেন চাকরি হারানো বিপুল সংখ্যক শ্রমিক। সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে মিলটি আবারো চালুর দাবি বাস্তবায়ন কমিটিসহ শ্রমিকদের। কর্তৃপক্ষের দাবি, পিপিটি’র মাধ্যমে চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে মিলটি। সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক বলেন, মিলটিকে "টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট" তৈরি করার চিন্তা করছে সরকার।

সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান এই মিলটি। ১৯৮৩ সালে সাতক্ষীরা শহর উপকণ্ঠের মাগুরা এলাকায় ৩০ একর জায়গায় স্থাপন করা হয় সুন্দরবন কেক্সটাইল মিলস। মিলটিতে একসময় দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করতেন। মুল ইউনিট ও নীল কমল ইউনিটের আওতায় ৩৯ হাজারেরও বেশী টাকু ঘুরতো প্রতিনিয়ত। মিলের দু’টি ইউনিটের সুতা উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১০ হাজার কেজি। তবে এর জৌলুস বেশীদিন থাকেনি। ক্রমাগত লোকসানের ফলে ২০০৭ সালে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিদায় জানানো হয় গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে। পরে সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে মিলটি চালু হয়। তাও টেকেনি বেশিদিন। ২০১৭ সালের শেষের দিকে মিলটি ভাড়ায় নেয় নারায়ণগঞ্জের ট্রেড লিংক লি:। লোকসান হতে থাকায় একবছর কয়েকমাস চালানোর পর ২০১৯ সালে আবারো বন্ধ ঘোষণা করা হয় মিলটি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। প্রতিষ্ঠানটি দেখভালের জন্য বর্তমানে ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োজিত আছেন।

৫ বছর মিলটি বন্ধ থাকায় বেকার জীবন-যাপন করছেন এলাকার চারশ’ শ্রমিক। জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানটি অবিলম্বে চালু করতে সরকারি পৃষ্টপোষকতার দাবি শ্রমিকদের।

এবিষয়ে শ্রমিক রেজাউল হক রেজা জানান, আমি এখানে চাকরি করতাম। রুটি-রুজী আমার সেভাবেই। এখন সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসংস্থানই হলো আমাদের দাবি। মিলটা চালু হলে আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। ’’

মিলটি চালুর দাবিতে কমিটি গঠন হয়েছে সম্প্রতি। পরিকল্পিতভাবে চালু করতে পারলে লাভবান হতে পারবেন কর্তৃপক্ষ,অভিমত শ্রমিক নেতৃবৃন্দের।

এবিষয়ে সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস চালু বাস্তবায়ন কমিটির দপ্তর সমন্বয়কারী শেখ শওকত আলী জানান, ‘‘এই মিলের লাভ দিয়ে আমিন টেক্সটাইল মিল ও মাগুরা টেক্সটাইল মিল গঠিত হয়েছে। কিন্তু বিএনপি সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে আজ মিলটি দেউলিয়া হয়ে গেছে। সেসময় পাকিস্তানী তুলা আমদানি করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিলটি। আমরা দাবি করি, সরকার যেকোনভাবে মিলটি চালু করুক। ’’

সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস চালু বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মাগফুর রহমান জানান,‘‘সরকার লস দিয়ে চালাবেনা। পিপিপির মাধ্যমে বিটিএমসি ইতোমধ্যে তিনটি মিল চালু করেছে। ত্রিশবছরের লিজে সেগুলো তারা চালাচ্ছে। তারা লাভবান হতে পারলে এই মিল চালু হতে পারবেনা কেন।’’

সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস চালু বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক শ্রমিকনেতা শেখ হারুন-উর-রশিদ বলেন,‘‘ সম্প্রতি মিলটি চালুর বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু সংসদে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। মিলটি চালু না হলে একদিকে যেমন কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হবে, তেমনি আগে কর্মরত শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়বে। ’’

চালুর বিষয়ে মিলটির বর্তমান ইনচার্জ শফিউল বাশার জানান, ‘‘ ১৯৮০ সালে ২৯.৪৭ একর জায়গার ওপর এটি গড়ে উঠে। ১৯৮৩ সালে এটি চালু হয়। দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক একসময় কর্মরত ছিল। ১৯৯২ সালে মুল ইউনিটের বাইরে ‘‘নীলকমল’’ নামে আরও একটি  ইউনিট প্রস্তুত হয়। সুতা উৎপাদন থেকে থেকে থানকাপড় পর্যন্ত তৈরি হতো। তবে ক্রমাগত লোকসানের কারণে ২০০৭ সালে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের কারণে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বিদায় করা হয়। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়ে যায় মিলটি দেখাশুনার জন্য। পরে সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে মিলটি পরিচালিত হতো। তবে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভাড়া পদ্ধতিতে চালানোর চেষ্টা চলে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংকট ও মেশিনারীজ পুরনো হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে আবারো বন্ধ হয়ে যায় মিলটি। আর চালানো সম্ভব হয়নি। আমি যতটুকু জানি, দূর অথবা অদূর ভবিষ্যতে পিপিপি’র (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব)মাধ্যমে মিলটি চালানোর চিন্তা বিটিএমসি’র আছে।

তবে বাস্তবতার নিরিখে মিলটিকে চালানো সম্ভব নয় বিধায় টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট তৈরি করার চিন্তাও সরকারের মাথায় রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন করিব।

তিনি বলেন,‘‘ মিলটি বেশ আগে থেকে বন্ধ রয়েছে। বাস্তবতার নিরীখে ক্রমাগত লোকসান দিয়ে টেক্সটাইল মিলকে হয়ত আর চালু করা সম্ভব হবেনা। আমরা চিন্তা করছি একটা ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট করা যায় কিনা। যাতে শিক্ষার্থীরা এটা নিয়ে পড়ালেখা করতে পারে। আমি ডিসি সম্মেলনে এই প্রস্তাব দিয়েছি।বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে এই প্রস্তাব দেওয়ার পরে তা তারা গ্রহণ করেছেন। তিন একর জায়গা লাগবে ইন্সটিটিউট করতে। বাকী জায়গা অন্যভাবে ব্যবহারের কথা ভাবছে মন্ত্রণালয়, যাতে ভিন্নধরণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। 

মেসেঞ্জার/সজিব

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700