ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
০৯ মে ২০২৪

The Daily Messenger

রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির অবস্থা ভয়ংকর : সালেহউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির অবস্থা ভয়ংকর : সালেহউদ্দিন

ছবি : ডেইলি মেসেঞ্জার

দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ংকর অবস্থা বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে গ্রন্থ প্রকাশনার এক অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে তিনি রকম মন্তব্য করেন।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু অর্থনীতির বিষয়ে কথা বললে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হবে না। এখানে রাজনীতির বিষয়টা সবচেয়ে বড়। রাজনীতি ঠিক না হলো অর্থনীতি ঠিক হবে না... এটা তো আপনারা দেখতেই পারছেন... ভয়ংকর অবস্থা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যদি সঠিক না হয় অর্থনীতি ঠিক হবে না। রাজনীতিটা মেইন।

অর্থনীতির এই টেকনিক্যাল কথা-বার্তা ... গ্রোথ রেইট পয়েন্ট হলো না পয়েন্ট হলো, তারপরে ইনফুয়েশন দশমিক হলো না দশমিক হলো... এগুলো ভেতরে কচকচালি করলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। মূল সমস্যা হলো যে, আমাদের ইন্সটিটিউশনগুলো ধবংস হয়ে গেছে, রাজনীতিটাও অনেকটা ধবংসের পথে এবং সেখানে অর্থনীতি কিভাবে ঠিক থাকবে?”

সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, যে রাজনীতিতে ছাত্র জীবন পজেটিভ রাজনীতি, ভালো রাজনীতি, মানুষের কল্যাণে রাজনীতি যদি না করেন তবে কিন্তু ভবিষ্যতে ভালো মানুষও হবেন না...ভ্যালুজ কিছু থাকতে হয়। আমাদের সময়ে কিছু ভ্যালুজ ছিলো... মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের তো ছিলোই ... সৎভাবে জীবন-যাপন করেছেন, অনেক কিছু হতে পারতেন।

আমরাও করেছি, আমার বন্ধু আলমগীর(মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) সৎভাবে জীবন-যাপন করেছেন... একেবারে করেছেন।কিন্তু আমাদের মধ্যে ভ্যালুজগুলো বারে বারে তাড়া করতো.... এখনো আমাদেরকে এটা তাড়িত করে... মানুষের জন্য চিন্তা, সাধারণ মানুষের জন্য চিন্তা... এসব চিন্তার জন্য এখনো আমাদের তাড়িত করে।

ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, অপর দিকে ওই সময়ে আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিলো যারা আমাদের মার দিয়েছি... আমাকেও একবার উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো... এনএসএফ নিয়ে গেছে.... তাদের সাথে সহযোগী যারা তারা এখন প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, তারা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন... নাম বলব না... আপনারা অনেকেই জানেন। তারা এখন আমাদের সাথে তর্ক করে তোমরা কি করেছো?

অত্যন্ত দূঃখ লাগে বন্ধু মানুষ তো... অনেক সময় এবোর্ট করতে পারি না। কিন্তু ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করেছে কিনা জানি... মনে হয় না ক্ষমা করেছে। মানুষ নিশ্চয় তাদের ক্ষমা করে নাই।

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অর্থনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহফুজ উল্লাহ লেখা আত্মজীবনী গ্রন্থআমার জীবন আমার সংগ্রামএর প্রকাশনা উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ৫৯২ পৃষ্ঠার গ্রস্থটির প্রকাশ করেছেবাঙ্গালা গবেষণা

অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে বসে আলোচনা শুনেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, নাজমুল হক নান্নু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, ভাসানী অনুসারি পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মীসহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর ছোট ভাই প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনটি উপলক্ষে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপক আখতার হোসেন খান।

অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, দেশ আজকে একটা কঠিন সংকটে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণ কিভাবে হবে সেটা নিসেন্দেহে /১০টা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেখে আমরা নিরুপণ করতে পারব না। আমাদেরকেই আমাদের পথ চয়ন করতে হবে, নিরুপন করতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে এবং এজন্য প্রয়োজন...ঘটনাটা বলি ১৯০৫ সালে রাশিয়াতে যে পাঠ্য বিপ্লব হয় সেই পাঠ্য বিপ্লবের পরে লেলিন বলেছিলেন, এখন প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে ঢুকেও আমাদেরকে কাজ করতে হবে। ওই সময়ের জন্য ওটা ছিলো একটা মোক্ষম একটা কৌশল যে কারণে ১০১৭ সাল(রুশ বিপ্লব) হতে পেরেছে। এগুলো আমাদের বুঝতে হবে।

তবে এই মুহুর্তে আমাদের লক্ষ্য খুব সীমিত। লক্ষ্যটা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাইযেই বাংলাদেশে আমরা কথা বলতে পারব, মুক্তভাবে আমাদের মত প্রকাশ করতে পারব এবং আমাদের দেশের যে সার্বভৌমত্ব যেটা নানা কারণে সেটা কমপ্রোমাইজড হচ্ছে আমি যেটাকে বলি, নিম সার্বভৌম অবস্থা সেই নিম সার্বভৌম অবস্থা থেকে কিভাবে মুক্তি পাব...এই সব কিছু নিয়ে আমাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে এবং শুধু চিন্তার মধ্যেই নিবিষ্ট থাকলে হবে না আমাদেরকে পথ বের করে নিতে হবে, আমাদের সেই পথে চলতে হবে... সেই পথ হচ্ছে সংগ্রামের, সেইপথ হচ্ছে আত্মদানের, সেই পথ হচ্ছে মানুষকে ভালোবাসার, দেশকে ভালোবাসার। আজকে আমরা যদি সবাই সেই স্বাধীনতার মঞ্চে, দেশকে ভালোবাসার মঞ্চে, সাধারণ মানুষের জীবন সামান্য স্বস্তি আনার যে সংগ্রাম সেখানে যদি আমরা কিছু অবদান রাখতে পারি সেটাই যথেষ্ট।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাংককের এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির এমিরেটস প্রফেসর . নুরুল আমিন দেশের বর্তমান ভোট ব্যবস্থা্র প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই বাংলাদেশ আমরা ছোট বেলা থেকে দেখছি ভোটের দিনটা ছিলো উৎসবের দিন।৫৪ সালে আমি ছোট কিন্তু যুক্তফ্রন্টে্র নির্বাচনের কথা কিছু কিছু যেন মনে আছে এখন এবং অন্যান্য ইলেকশন। আমার বাবা ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন, হাইস্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন...ভোটের দিনগুলো আমরা দেখতাম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে...এটা যে কীভাবে এখন হারিয়ে গেলো?

তিনি বলেন, আমি নিজে ২০১৮ সালে ভোট দিতে সেন্টারে ঢুকতে ছিলাম...আমার স্ত্রীও সাথে ছিলেন...বলে যে, বিএনপিকে যদি ভোট দিতে চান তাহলে ভোট কেন্দ্রে ঢুকবেন না। এটা আ্মাদের সবচেয়ে বড় লস...আমাদের সাধনাটা, আমাদের সংগ্রাম, আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ যেটা ওই সময়ে দুরহ ছিলো সেটা আজকে কোথায়? ইতিহাসের এই জিনিসগুলো আজকে হারিয়ে যাচ্ছে যা মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের বইতে আছে।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার ফলেই বর্তমানে রাজনৈতিক ভোট ব্যবস্থায় এই দুরাবস্থাবলে মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।

সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের বইটি একটা রাজনৈতিক দলিল...এই দলিলে যেটা অফিশিয়াল হিস্ট্রি অব ইস্ট পাকিস্তান... ডিরেল ইস্ট পাকিস্তান সেই অফিশিয়াল হিস্ট্রি থেকে এই ইতিহাস কত যে ভিন্ন মানে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাংখা এই বইতে আছে। আমি মনে করি এই বইটা লেখকের একটা বিরাট অবদান। সবাই বইটি পড়বেন।

কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নারী নেত্রী শিরিন হক, নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান এবং বাঙ্গালা গবেষণা প্রকাশক আফজালুল বাসার প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

মেসেঞ্জার/রহিম/হাওলাদার

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700