ঢাকা,  শনিবার
২৭ এপ্রিল ২০২৪

The Daily Messenger

টাঙ্গাইলে অদক্ষ চালকদের হাতে গাড়ি, মৃত্যু ঝুঁকিতে এসিল্যান্ডরা

অভিজিৎ ঘোষ, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৯:০১, ৯ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ২১:৩৬, ৯ মার্চ ২০২৪

টাঙ্গাইলে অদক্ষ চালকদের হাতে গাড়ি, মৃত্যু ঝুঁকিতে এসিল্যান্ডরা

ছবি : মেসেঞ্জার

টাঙ্গাইলে সম্প্রতি প্রত্যেক উপজেলার সহকারি কমিশনারদের (ভূমি) জন্য চালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে নিয়োগকৃত চালকদের অভিজ্ঞতা না থাকায় যোগদানের পর থেকেই গাড়ি দূর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এসিল্যান্ডদের গাড়িগুলো।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ৩ মার্চ ৯ জন নতুন চালকদের স্ব স্ব উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে যোগদানের জন্য অফিস আদেশ দেয়া হয়। ওই অফিস আদেশে স্বাক্ষর করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ ওলিউজ্জামান। তবে অদক্ষ চালকদের তড়িঘরি করেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এসিল্যান্ডদের গাড়ির চালকরা (অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩ মার্চ যোগদানের পরই জেলার ভূঞাপুর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, বাসাইল, কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলার এসিল্যান্ডের গাড়ি দূর্ঘটনার কবলে পরেছিল। এতে গাড়িগুলোর লুকিং গ্লাস ও ব্যাক লাইট ভেঙেছে এবং গাড়ির বডি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এরমধ্যে নাগরপুরে এসিল্যান্ডের গাড়ি উপজেলার মাহমুদনগর এলাকার ফাজিল মাদরাসার সামনে একটি মোটরসাইকেলের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে দুই আরোহী গুরুত্ব আহত হয়েছে।

এসব দূর্ঘটনার পর থেকেই ওইসব এসিল্যান্ডরা চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য এক সপ্তাহের ছুটি দেয়া হয়েছে। আবার কোন কোন উপজেলার চালকরা এসিল্যান্ডের গাড়ি নিয়ে মাঠে পথে ট্রেনিং করছে অন্য চালকদের সহায়তায়। নতুন চালকদের অদক্ষতার কারণে মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছেন কর্মকর্তারা। যে কোন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বাসাইল এসিল্যান্ডের গাড়ির নিয়ে নতুন চালক কোর্ট মাঠে ইউএনওর গাড়ির চালকের সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এছাড়া প্রশিক্ষণ নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ধনবাড়ি, নাগরপুর ও বাসাইলের চালকদের এক সপ্তাহের ছুটি দেয়া হয়েছে।

নাগরপুর সহকারি কমিশনার (ভূমি) গাড়ির চালক আলি জোবায়ের বলেন, যোগদানের পর দুইবার ঘটনা ঘটেছিল। একবার গাড়ি ঢালু থেকে নামার সময় ব্যাক লাইট ক্ষতি হয় এবং পরের দিন একটা মোটরসাইকেলের সাথে লাগে। এতে কেউ তেমন আহত হয়নি। সাধারন মানুষ নিয়ে গাড়ি চালানো আর ম্যাজেস্ট্রেট বা কর্মকর্তাদের নিয়ে গাড়ি চালানোটা একটু কঠিন। নিয়োগের পর প্রশিক্ষণের দরকার ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি।

তিনি আরো বলেন, ২০২২ সালে টাঙ্গাইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) থেকে চারমাসের কোর্স করেছিলাম। এরপর আর প্রফেশনালভাবে চালানো হয়নি। পরে ওই বছরেই বিআরটিএ থেকে লাইট মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স পাই।

বাসাইল এসিল্যান্ডের গাড়ির নিয়োগ পাওয়া নতুন চালক বলেন, প্রতিষ্ঠানিকভাবে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণের কোন সার্টিফিকেট নেই। গত বছর জেলা বিআরটিএতে পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পেয়েছি। গত বৃহস্পতিবার বাসাইলের কোর্ট মাঠে এসিল্যান্ডের গাড়ি দিয়ে ইউএনও স্যার গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সাথে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ছিল।

ভূঞাপুর উপজেলা সহকারি কমিশনারের গাড়ির নতুন চালক সবুজ মিয়া তার পরিবর্তে সাদিকুল ইসলাম নামের একজন চালককে ভাড়া করা হয়েছে গাড়ি চালানোর জন্য। ওই সাদিকুলই গত ৪ মার্চ হতে এসিল্যান্ডের গাড়ি চালাচ্ছেন।

 

এসিল্যান্ডের ভাড়াটিয়া চালক সাদিকুল ইসলাম বলেন, নতুন চালক সবুজ মিয়া গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা নেই। তাই আমাকে দিয়ে গাড়ি চালানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি ওই নতুন চালক আমার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। আগামী রোববার (১০ মার্চ) জেলায় মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে গাড়ি নিয়ে যেতে বলেছেন স্যার।

ভূঞাপুর উপজেলা সহকারি কমিশনারের গাড়ির চালক সবুজ মিয়া বলেন, এসিল্যান্ড স্যারের গাড়িতো আগে চালায়নি। গাড়িটি আমার কাছে নতুন তাই প্রথমে একটু সমস্যা হয়েছিল। পিছনের লাইটের কভার খুলে পড়েছে কিন্তু ভেঙে যায়নি।

অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত সাবেক এসিল্যান্ডের চালকরা জানান, নতুন চালকরা যোগদানের পরই গাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। তাদের মধ্যে চার উপজেলার চালকদের ছুটিতে পাঠিয়েছে।

অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত সাবেক গোপালপুর উপজেলা এসিল্যান্ডের চালক আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল স্থায়ী নিয়োগের আশা দিয়ে। কিন্তু আমাদের নিয়োগ না দিয়ে অদক্ষ চালকদের নিয়োগ দিয়েছে। তারা যোগদানের পরই গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।

এছাড়া আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। পরে উচ্চ আদালত হতে আমাদের চাকরি কেন আত্মীকরণ করা হবে না মর্মে রুল জারি করেন। কিন্তু সেই উচ্চ আদালতের আদেশের রুল থাকার পরও তড়িঘরি করে নতুনদের নিয়োগ দেয়া হয়।

নাগরপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, গাড়ি দূর্ঘটনার তথ্য আপনাকে দিতে বাধ্য না। পরে তিনি ব্যস্ততার অযুহাতে ফোন কেটে দেন।

ভূঞাপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফাহিমা বিনতে আখতার বলেন, নতুন চালক তেমন দক্ষ না। গাড়ি একটু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া ওই চালক রাস্তা ঘাটও তেমন চিনে না। তাই তার সাথে একজন চালককে রাখা হয়েছে।

বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মোঃ সাইফুন নেওয়াজ বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে সরকারি গাড়ি চালকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই চালকের অভিজ্ঞতা ও লাইসেন্স আছে কিনা বা পূর্বে যেখানে চাকরি করতো সেখানে কেমন ছিল। সরকারি চালকদের কাছ থেকে মানুষ আচরণ বা গাড়ি চালানোর ভাল প্রত্যাশা আশা করে।

যোগদানের পরও তাকে আরো ভাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তারপর তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া উচিত। নইলে ওই চালক যাকে বহন করছে তিনি ঝুঁকিতে পড়বেন।

জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ ওলিউজ্জামান বলেন, নিয়োগ শর্তাবলিতে অভিজ্ঞতার বিষয়টি ছিল না। তারপরও নিয়োগ পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছে শুধুমাত্র তাদেরকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে নিয়োগকৃতরা অভিজ্ঞ না। কয়েকটি উপজেলায় এমন হচ্ছে বিধায় বিষয়টি জেলা প্রশাসক (ডিসি) স্যারকে অবহিত করা হবে।

মেসেঞ্জার/আপেল

dwl
×
Nagad