ঢাকা,  শুক্রবার
০৩ মে ২০২৪

The Daily Messenger

রাজশাহীতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ১৭:৪৬, ৩০ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১৮:০১, ৩০ মার্চ ২০২৪

রাজশাহীতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ মানুষ

ছবি : সংগৃহীত

রাজশাহীর বাংলাভিশনের সাংবাদিক নগরীর সাগরপাড়ার বাসিন্দা পরিতোষ চৌধুরী আদিত্য মশার ছবি দিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট করেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘রাজশাহীতে কেউ বেড়াতে এলে সাথে কছোয়া ছাপ মশার কয়েল আনতে ভুলবেন না। এক ঘন্টার সাফল্য এগুলো।’ তার ঐ পোস্টে অনেকে হরেকরকম তীর্ষক মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আবাসিক শিক্ষার্থী ও অন্যান্য বাসিন্দাদের অনেকেই মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে ঘরের মধ্যে দিন-রাত মশারি টাঙিয়ে রাখেছেন।

শুধু নগরীর সাগরপাড়া বা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাই নয়, গোটা রাজশাহী মহানগরজুড়ে ফেব্রুয়ারি থেকে মশার উৎপাত অস্বাভাবিক বেড়েছে। তাই মশা শুধু ঘরের ভেতরে নয়, চায়ের দোকান, রাস্তাঘাট, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষসহ সর্বত্র মশার বিচরণ। সন্ধ্যার পর মশার উৎপাত আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মশার দংশনের জন্য বাইরে বসা যায় না। এই পরিস্থিতিতে মশার কয়েল, অ্যারোসলসহ বিভিন্ন উপায়ে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ। তবে দুঃসংবাদ হচ্ছে, কয়েল ও সাধারণ এ্যারোসলে মশা মরছে না, যাচ্ছেও না। ফলে রাজশাহী মহানগরীর মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন দুঃসহ হয়ে উঠেছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) সূত্র বলছে, মশকনিধনের জন্য মহানগরীতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এছাড়া বছরব্যাপী নর্দমার পানিতে মশার লার্ভা ধ্বংসে লার্ভিসাইড দেওয়া হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, মশক নিধনে বছরে দুইবার ফেব্রুয়ারি-মার্চ এবং অক্টোবর-নভেম্বর ফগার মেশিন দিয়ে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। এটা মশার প্রজননের সময়।

রাসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচটি ওয়ার্ডে সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে এবং বিকেল চারটা থেকে দুই বেলা ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হয়েছে। এছাড়া এক দিন কেন্দ্রীয়ভাবে নগরীর বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ফগার মেশিন দিয়ে কীটনাশক ছিটানো হয়েছে।

তবে নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, সিটি করপোরেশনের ফগার অভিযানের পরও মশার উৎপাত একটুও কমেনি। বরং শীত শেষ থেকে গরম হওয়া শুরুর পর থেকেই নগরীতে মশার উপদ্রব অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে বাসাবাড়িতে দিনে-রাতে মশারি টাঙিয়ে থাকা ছাড়া বসবাস কঠিন হয়ে পড়েছে। নগরীর অধিবাসীদের অনেকে বলছেন, মশার যন্ত্রণায় তারা অতিষ্ঠ। মশা তাড়াতে তারা কয়েল জ্বালানো, অ্যারোসল সহ ছিটানোসহ বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও রেহাই পাচ্ছে না। এছাড়া কয়েল জ্বালানোর কারণে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি সহ অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি তো থাকছেই।

৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাইদুর রহমান জানান, ‘শীত কমার পর থেকে মহানগরীতে মশার উৎপাত বেড়েছে। রমজান মাসে মশার উৎপাতে নামাজ, সেহেরী ও ইফতারে টিকে থাকা যাচ্ছ না। তিনি বলেন, বিছানায় মশারি টানানো যায়, বাকি সময় বাইরে কয়েল ধরিয়ে রাখতে হয়। কয়েলের ধোঁয়া পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কয়েক দিন আগে তার এলাকায় ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হয়েছে, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। মনে হচ্ছে, মশার দল ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।

নগরীর কাশিয়াডাঙ্গায় থাকেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিহাবুল ইসলাম। তিনি বলেন, মশার অতিষ্ঠে পড়াশোনা করতে সমস্যা হচ্ছে। কামড়ের কারণে হাতে পায়ে লাল লাল গুটি হয়েছে। একটি কয়েলে এক রাত যায়। ভালো মানের একেকটি কয়েলের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা। এর ধোঁয়াও ক্ষতিকর। ড্রেন, নর্দমা পরিষ্কার না করা হলে মশার উৎপাত কমবে না।

এদিকে গরম পড়ার আগেই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বাসিন্দারা। আবাসিক হল, শ্রেণিকক্ষ কিংবা প্রশাসনিক ভবন কোথাও স্বস্তি নেই। হলের ডাস্টবিন, পার্শ্ববর্তী ড্রেন ও আশপাশের ঝোপঝাড় নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে এসব জায়গায় মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়ে সহজেই বংশবিস্তার করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, আলাদা বাজেট না থাকা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী সংকটে মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার করা যাচ্ছে না। হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক সৈয়দা নুসরাত জাহান বলেন, দীর্ঘদিন নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় জনবলসংকট তৈরি হয়েছে। তাই নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না।

এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক তবিবুর রহমান সেখ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ক্যাম্পাসের সর্বত্র মশকনিধনে কীটনাশক ছিটানো প্রয়োজন। অন্যথায় মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়বে। এতে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ নানা মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

স্টুয়ার্ড শাখা সূত্র জানায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এই শাখায় ৩৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১২ জন শ্রমিক রয়েছেন। তারা আবাসিক হল, শিক্ষকদের কোয়ার্টার, ড্রেন পরিষ্কার–ও ঘাস কাটার কাজ করেন। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় এসব কাজ নিয়মিত হচ্ছে না। অর্থ ও হিসাব দপ্তর সূত্র জানায়, ক্যাম্পাসে মশক নিধনে কোনো নির্দিষ্ট বাজেট নেই। পরিষ্কার– পরিচ্ছন্নতা উপকরণ ক্রয়ে ইউজিসি যে বাজেট দেয়, তা থেকে কিছু মশক নিধনে ব্যবহার হয়। রাজশাহী সিটি করপোরেশন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স নিলেও রাস্তা, ড্রেন ও আলোকায়ন এমনকি মশক নিধনে কোনো কাজ করে না।

রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার জানান, আমরা সারাবছরই মশকনিধনে কাজ করে থাকি। এছাড়া নিয়মিত লার্ভিসাইড (লার্ভা মারার ওষুধ) ছিটানো হয়। এছাড়া ফগার মেশির ওষুধ স্প্রে করে পূর্ণবয়স্ক মশক নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে কীটনাশকের ধোঁয়া ভালো নয়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর অনুমোদন দিয়েছে। আমরা লার্ভিসাইড ধ্বংসে বছরজুড়ে কাজ করছি। তবে মশার প্রজনন বন্ধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সবাই জানেন মশারা কোথায়-কিভাবে জন্ম নেয়, কীভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ বিষয়ে সকলে সচেতন হলে মশার উৎপাত কমবে।

মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/তারেক

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700