ঢাকা,  শুক্রবার
১০ মে ২০২৪

The Daily Messenger

ভারত ইস্যুতে বিএনপিতে বিভক্তি, প্রভাব পড়ছে দলীয় কর্মসূচিতে

আবদুর রহিম

প্রকাশিত: ০১:৪২, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ০১:৪৬, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

ভারত ইস্যুতে বিএনপিতে বিভক্তি, প্রভাব পড়ছে দলীয় কর্মসূচিতে

ছবি: ডেইলি মেসেঞ্জার

গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং হাইকমান্ডের শীর্ষ নেতারা রাজপথের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না। দলের ভেতরে তৈরি হয়েছে ক্ষুব্ধতা। হাইকমান্ডের নেতাদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদেরও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তীব্র তাপদাহে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা শ্রমজীবী মানুষদের বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ করছেন। অন্যদিকে প্রথম সারির নেতারা ঘর থেকেই বের হচ্ছেন না।  দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, ভারত বিরোধী প্রসঙ্গ নিয়ে বিএনপির ভেতরে ফাটল তৈরি হয়েছে। কূটনৈতিক বহুমুখী চাপে পড়েছে দলটির নীতি নির্ধারকরা। স্থায়ী কমিটির সিংহভাগ সদস্য ভারতের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।

পক্ষে অবস্থান নেওয়াদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান ও সালাউদ্দিন আহমেদ। এই ছয়জন দলে প্রকাশ্যেই মন্তব্য করেছেন ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, পণ্য বয়কটের কর্মসূচিতে যাওয়া বিএনপির জন্য ভূল সিদ্ধান্ত হবে। ভারত আজ বিএনপির বিপক্ষে থাকলেও আজ হোক কাল হোক বিএনপির পক্ষেই থাকবে। অন্যদিকে দলের অন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান জনগণের চাওয়া চাহিদা কী কৌশলগতভাবে দলকে সেগুলোও ভাবতে বলেছেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকসহ একাংশ ভারতীয় পণ্য বয়কটের সামাজিক আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে নিজদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও ভারত বিরোধী অবস্থান নেওয়া অংশে সমর্থন রয়েছে। গত ২৫ মার্চ বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিষয়টি বিস্তর আলোচনায় হয়। সেই বৈঠকে ভারত প্রশ্নে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরবর্তী বৈঠকে ইস্যুতে আলোচনার কথা থাকলেও সর্বশেষ বৈঠকেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

ফাইল ছবি

দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরামের দুই সদস্য ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেছেন, রুহুল কবির রিজভী ও জয়নুল আবদিন ফারুককে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফোন করে সতর্ক করেছেন। তারা যেন সামনে ভারত বিরোধী বক্তব্য দেওয়া থেকে সতর্ক থাকেন। এর মধ্যে এক নেতা ফের তারেক রহমানকে বলেছেন, দেশের সিংহভাগ মানুষ এখন ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এখন যদি চুপ থাকা হয় বিএনপি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে, ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নেতা বলেন, এতোদিন রাজনীতি করে এসেছি মানুষের জন্য মানুষের পক্ষে কথা বলা যদি ভারত বিরোধিতা হয় তাহলে আপনি আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে পারেন। তবে দলের বড় অংশই হঠাৎ তারেক রহমানের ইউটার্ন নিয়ে বিস্ময় হচ্ছেন। নেপথ্য কারণও দেখছেন। কেননা নির্দেশনা ব্যতীত ভারতীয় পোষাকে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ কিংবা অন্য নেতারাও কথা বলা গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া হয়নি বলেই অধিকাংশের ভাষ্য। তাঁরা আরও বলছেন- স্থায়ী কমিটির বড় অংশই ভারতপন্থি এবং অনেকের সঙ্গে সরকারের যোগসূত্র রয়েছে এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সামাজিক আন্দোলনে বিএনপির একাংশ থেকে সমর্থন আসার পর দলের বিভিন্ন পন্থি থেকে চাপ তৈরি হওয়ার বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হলো বলেই মনে করছেন তাঁরা।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য নেতারা বলছেন, রিজভী ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারতীয় চাদরে আগুন দেওয়ার চার দিন পরই বিএনপির ইফতার পার্টিতে ঢাকাস্থ ভারতীয় কূটনীতিকরা অংশ নেন। এর আগে দলটি বহু অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলেও ভারত সাড়া দেয়নি। গত দেড় যুগ ধরে ভারতকে খুশি করতে গিয়ে বিএনপি যত কিছুই করেছে তাদের মন গলেনি। সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পূর্ব জামায়াত বিএনপি এক ব্যনারে কর্মসূচিও ভারতের ইঙ্গিতের কারণে চুড়ান্ত হয়নি। ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যতে ইসলাম পন্থিদের রাখা হয়নি। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ জামায়াতে ইসলামী নেতাদের ফাঁসির পর ভারত সিগন্যালে বিএনপি নীরব ছিল। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে হওয়া ঐক্যও ভারতের ইচ্ছেতে হয়েছে। বিএনপির ভিশন ২০৩০ এ রাষ্ট্র সংস্কারের দফাতে ছিলো ভারতের ভারতের মনঃতুষ্ট। এতো কিছু করেও দেড়যুগেরও বেশি ভারত থেকে কোনো সাহায্যে পায়নি বিএনপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, এই অঞ্চলে ভারতে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাঁরা বিএনপির উপর ভরসা রাখবে এটা আশা করাও আমাদের জন্য ভুল। আমাদের নীতি নির্ধারণী বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্রের উপর আশা করে বসে আছে, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই ভারতের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো ভূমিকা পালন করবে এটা চিন্তা করাও দূরহ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, বিএনপির হাইকমান্ড প্রকাশ্যে ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি। দলের নেতাকর্মীরা বলেছেন ভারত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগকে সমর্থন দিয়েছেন। এটাতো সবাই জানে। দেশের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে কেন অবস্থান নিচ্ছেন সেগুলো ভেবে দেখতে বলেছেন। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব বাংলাদেশের এই পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতেই বিএনপি কাজ করে থাকে বলে জানান বিএনপির এই নেত্রী।

বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, বিএনপি ভোট বর্জন করায় দেশের মানুষও ভোটকেন্দ্রে যায়নি; তখন আওয়ামী লীগ সম্পাদক বলেছিলেন বিএনপির সাহসের উৎস কোথায়। আসলে বিএনপির শক্তি ও সাহসের উৎস দেশের জনগণ। ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন আমরা আছি ভারত আছে; ভারত আছে আমরা আছি। এ সরকার এবং এ দলের পেছনে ভারত আছে  যা তিনি স্পষ্ট করেছেন। এ নির্বাচনের বিজয় ভারতের বিজয় হিসেবে তারা জানিয়েছেন। আমার মনে হয়  ভারতের নেতা ও নাগরিকরাও এ ধরনের কথায় বিব্রত হন। এই সরকার জনগণের সমর্থনের সরকার নয়, ভারতের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের সরকার। এটা কোনো সম্মানজনক দলের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। দেশের জনগণ এটাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী সাহেব গায়ের চাদর ফেলে প্রতিবাদ এবং ক্ষোভ জানিয়েছেন, তিনি যে স্ট্যান্ডটা নিয়েছেন এটা বিএনপি'র স্থায়ী কমিটি বা হাই কমান্ড নেয়নি। এটা থেকে একেবারে পরিষ্কার বিএনপিও চায় না এই ইস্যুটা সামনে আরো উত্তেজনা ছড়াক, বিএনপিও চায় না দেশের মানুষের সঙ্গে কিংবা দলের সঙ্গে কোনো দূরত্ব হোক ভারতের। বিএনপি একবার প্রণব মুখার্জির সাথে খালেদা জিয়া দেখা না করে সেদিন যে ভুলটা করেছিলেন এই ভুল আবার বিএনপি করবে আমার কাছে মনে হয় না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এ বিষয়ে জানান, রাজনৈতিক কোনো ইস্যু না পেলে বিএনপি সব সময় ভারত বিরোধিতা করে। 'পাকিস্তান আমল থেকে যে অপপ্রচার শুনেছি, কোনো রাজনৈতিক ইস্যু যখন থাকে না, তখন একটাই ইস্যু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিয়ে আসে। আগে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আনতো আর এখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনে। সেটা হচ্ছে ভারত বিরোধিতার ইস্যু।'

মেসেঞ্জার/হাওলাদার

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700