ছবি : মেসেঞ্জার
কেনাকাটায় অবিশ্বাস্য ব্যয় দেখিয়ে বহুল আলোচিত রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ কান্ডকেও হার মানিয়েছে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ পৌরসভা এর সোলার স্ট্রিট লাইট ক্রয় কাণ্ড। ২০২২-২০২৩ অর্থ-বছরে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের কেনাকাটার নামে প্রতিষ্ঠানটিতে ঘটেছে হরিলুটের কারবার।
১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকায় ১৫০ টি সোলার স্ট্রিট লাইট ক্রয় করা হয়। এতে বাজার প্রাক্কলন কমিটি প্রতিটি লাইটের দাম নির্ধারণ করে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এর প্রেক্ষিতে, টেন্ডার হয় এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লাইটগুলো পৌরসভার নিকট সরবরাহ করে।
নিম্নমানের লাইট লাগানোর কারণে কিছুদিনের মধ্যে নষ্ট হতে শুরু করে লাইটগুলো। এতেই বাধে ঝামেলা। একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকায় এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঠাকুরগাঁও।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেই একই মডেল ও একই কোম্পানীর লাইটের বর্তমান বাজার মুল্য প্রতিটির ৩৯ হাজার টাকা। কিন্তু সেই সময়ে দেবীগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট হর্তা-কর্তারা সেই একই মডেল ও কোম্পানীর প্রতিটি লাইট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে ক্রয় করে। এ যেন কোনো পুকুরচুরি নয়, রীতিমতো ‘সাগর চুরির’ ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া মশক নিধন কাজের ঔষধ ক্রয়ে প্রতি ড্রামে বাজার মূল্যের অতিরিক্ত মূল্যে ক্রয়ের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক। বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঠাকুরগাঁও হতে (গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর) একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা টিমের পর্যালোচনায় প্রাথমিকভাবে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, (গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ পৌরসভার বিরুদ্ধে পৌরসভার বিভিন্ন খাত থেকে আদায়কৃত অর্থ এবং বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঠাকুরগাঁও হতে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সে সময়ে মেয়র দাপ্তরিক কাজে বাইরে থাকায় এনফোর্সমেন্ট টিম প্যানেল মেয়র ও সহকারী প্রকৌশলীর সাথে প্রায় ১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৫০ টি সোলার স্ট্রিট লাইট নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান পরিচালনা করেন।
এসময় রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে ঠাকুরগাঁও দুদক অফিস জানতে পারে প্রতিটি সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার মত। অভিযানে ৪ টি ভিন্ন স্থান থেকে সোলার স্ট্রিট লাইট, প্যানেল ও ব্যাটারির মডেলের ছবি তোলা হয় এবং নিম্নমানের হওয়ার কারনে ইতোমধ্যে ১ টি সোলার স্ট্রিট লাইট অকেজো পায় দুদক।
লাইটগুলো তাওরাত টেকনোলজির সোলার পিভি (মডেল নাম্বার ইএসএম ১২৫ ওয়ার্ড) এর। সোলার স্ট্রিট লাইট রেজুলেশনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রাইভেট প্রপাট্রিতে স্থাপন করার দৃশ্যটি লক্ষ্য করে ঠাকুরগাঁও দুদক কর্মকতারা। এছাড়া, মশক নিধন কাজের ঔষধ ক্রয়ে প্রতি ড্রামে বাজার মূল্যের অতিরিক্ত মূল্যে ক্রয়ের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে দেবিগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোঃ আলতাফ বলেন, এই লাইনটি ২০২০ সালের কমিটিতে কেনা হয়েছে। আমরা নতুন কমিটি এসেছি। আমরা আসার পর এই লাইটটি আমরা শুধু হাতে পেয়েছি। এটা দুদক যে অভিযান পরিচালনা করেছিল সেখানে ছিলাম। আমি শুনছি লাইট গুলো ক্রয় করা হয়েছিলো ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায়।
তবে এটা আমাদের সময় ক্রয় করা হয়নি। ২০২০ সালে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা যখন ছিলেন, তিনি এই লাইট গুলো ক্রয় করেছিলেন। এই লাইটের বিষয়ে এ ছাড়া আমি তেমন কিছু জানিনা।
এ বিষয়ে তৎকালীন দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান বলেন, আমি বর্তমানে সেখানে নেই এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এ বিষয়ে পৌরসভার প্রকৌশলী সাখাওয়াদ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার কাজ হচ্ছে, কাজ ভালো করে হচ্ছে কিনা সেটা দেখা। কত দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে বা কত দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে সেই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এ বিষয়ে বর্তমান দেবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর বলেন, আমি তৎকালীন সময়ে পৌরসভার মেয়র ছিলাম না। যখন একটি টেন্ডার হয় তখন ইউএনও মাধ্যমে হয়েছিলো। আমি শুধু লাইটগুলো পেয়েছি এবং সেগুলো লাগানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক ও এনফোর্সমেন্ট টিম লিডার জনাব তাহাসিন মুনাবিল হক বলেন, গত বছর শেষের দিকে আমরা একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেবীগঞ্জ পৌরসভায় এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি।
তৎপ্রেক্ষিতে, কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছি। কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রাপ্তির পর, এটার সাথে কে বা কারা দায়ী সেটা আমরা অনুসন্ধান করে খুব শীঘ্রই আইন ও বিধি মোতাবেক পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
মেসেঞ্জার/আরিফ/আপেল