ঢাকা,  মঙ্গলবার
৩০ এপ্রিল ২০২৪

The Daily Messenger

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুপ্তচর কিনা সন্দেহ 

আবদুর রহিম

প্রকাশিত: ১৬:০০, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুপ্তচর কিনা সন্দেহ 

ছবি: মেসেঞ্জার

গত দেড় মাসে ৫৩৮ মিয়ানমার বাহিনীর প্রবেশ,৩৩০ জনকে স্থানান্তর, এখনো ২০৮ জন আশ্রিত। দফায় দফায় গুলিগোলা বাংলাদেশের সীমান্তে, উড়লো যুদ্ধজাহাজ, ১৪ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে এবার রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রবেশ।

এটা কী পরিস্থিতি নাকি গভীর উদ্দেশ্যে ভালোভাবে দেখতে হবে
 মে. জে. (অব.) আবদুর রশীদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক

সীমান্ত সামরিকভাবে বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই
 ইমদাদুল ইসলাম, নিরাপত্তা বিশ্লেষক

পালিয়ে আসাদের আইসোলেট করে তদন্ত করা প্রয়োজন 
 ইসফাক ইলাহি চৌধুরী, নিরাপত্তা বিশ্লেষক

বাংলাদেশে লাখ লাখ আশ্রিত রোহিঙ্গার মধ্যে এখন মিয়ানমারের আরাকান আর্মির আক্রমণ থেকে বাঁচতে দেশটির সেনাবাহিনী,সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি),সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা অস্ত্রসহ দফায় দফায় বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন। গত দেড়মাসে ৫শ ৩৮ জন রাষ্ট্রীয় বাহিনী প্রবেশ করেছেন। সবশেষ গত তিনদিনে ২৮ জন পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের মতো ধারাবাহিক তাদের প্রবেশে নানা আশঙ্কার প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন- আশ্রিতদের আসলে পরিচয় কী? তারা কী মিয়ানমার জান্তার সদস্য, নাকি বিদ্রোহী আরাকানের সদস্য। কেউ কেউ তাদের গুপ্তচর বলেও ধারণা করছেন। ১৪ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করতে এই বাহিনীকে দিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রও হতে পারে বলেও ধারণা। কারণ, এর আগে রোহিঙ্গারা খালি হাতে এ দেশে এলেও এবারই প্রথম কিছু রোহিঙ্গা অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেছে, যাদের পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ড আবেদন করেছে। আবার বিশেষ বাহিনীর সদস্যরাও অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছে। অস্ত্রধারী ঢুকিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ছিল কি না, সেটাও অনেকে ধারণা করছেন। রোহিঙ্গারা বিপথগামী সেনাদের কাছে নির্যাতিত হয়ে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তা বিশ্বআদালতে প্রমাণিত। আশ্রিত ৫ শতাধিক বাহিনীর কোনো সদস্য রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে থাকে, তাহলে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে এদের বিচার করার জন্যও আহ্বান করা হচ্ছে।  এসবের তদন্ত করে তবেই যেন তাদের ফেরত পাঠানো হয় বলে দাবি উঠেছে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে ম্রাউক-ইউ, কিয়াউকতাও, মিনবিয়া, রামরি, আন এবং মাইবন এলাকাও প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আরাকান আর্মি। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার যে সীমান্ত রয়েছে সেখানের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর টহল চৌকিগুলো এখন আরাকান আর্মির দখলে। এতে বাংলাদেশের জন্য গভীর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারের সরকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে নেয়া এলাকা দখলে নিতে পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্ডার বন্ধ করে দেয়া উচিত। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক হিসেবে বংলাদেশের সম্পর্ক মিয়ানমারের সাথে কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। যেহেতু বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর আসছে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে সীমানা রয়েছে তার ৭০ শতাংশ বিদ্রোহীদের দখলে চলে গেছে, বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি বাড়ল। বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইতোমধ্যে সে দেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে কব্জা করে রাখাইন প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তাই মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে সীমানাও বন্ধ করে দেয়া আবশ্যক। গত কয়েক মাসে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সব ধরনের আইন ভঙ্গ করেছে। সেই দেশের গুলি বাংলাদেশে এলো, আকাশে উড়লো যুদ্ধজাহাজও। তার মধ্যে নয়া ঝুঁকি তৈরি হলো মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সীমানা রয়েছে তার বেশির ভাগ দখলে চলে গেলো বার্মিজ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নিল আরও ১২ সদস্য: মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধের জেরে গতকাল মিয়ানমারের সেনা ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ১২ সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এ নিয়ে তিন দিনে দেশটির মোট ২৮ সেনা ও বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকালে নতুন করে ১২ জন পালিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার রেজুপাড়া সীমান্ত দিয়ে দুজন এবং জমছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১০ জন প্রবেশ করেন। অস্ত্র জমা নিয়ে বিজিবি তাদের হেফাজতে নিয়েছে। তাদের নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে ১১ বিজিবি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।তিন দিনে বাংলাদেশে নতুন করে ২৮ জন পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ওখানে আগে থেকে ১৮০ জন আশ্রয়ে রয়েছে। সেখানে এখন মিয়ানমারের মোট ২০৮ জন সেনা ও বিজিপি সদস্য রয়েছেন। গত ৩০ মার্চ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তিনজন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এর আগে ১১ মার্চ আশ্রয় নেন আরও ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনাসদস্য।তারও আগে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন। যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। 

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে সীমানা রয়েছে তার অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের অনেক কিছুই ভাবনার আছে। যারা রোহিঙ্গা নির্যাতনে অভিযুক্ত দেশটির সেনারা এখন আরাকান আর্মির কাছে টিকতে না পেরে বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে পড়ছে। এটা কী পরিস্থিতি নাকি গভীর কোনো উদ্দেশ্যে রয়েছে ভালোভাবে দেখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী যদি আন্তর্জাতিক আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করে ফেলে আমাদের সরকারকে কিছু বলার বিষয় ছিল। এখন যেহেতু সেই সীমানার অধিকাংশ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে, এখানে হিসাবের নতুন মাত্রা যোগ হবে, সঙ্গে তৈরি হবে ঝুঁকিও। এখন আমাদের সীমানাকে বিশেষভাবে সুরক্ষিত করার জন্য চিন্তা করতে হবে। যেন তারা আমাদের মাটি বা সীমানা কোনোভাবে ব্যবহার করতে না পারে। 

 নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইসফাক ইলাহি চৌধুরী বলেন, গুপ্তচরই হোক আর পালিয়ে আসা সৈনিকই হোক বা যুদ্ধাপরাধ করেছে- এমন ক্যারেক্টারই হোক, এদের আপাতত আইসোলেট করে তারপর ধীরে-সুস্থে আমরা এর তদন্ত করে বের করব। তাদের ফেরত না পাঠিয়ে এখানে ডিটেনশনে রাখা উচিত। কারণ, এই বাহিনীটা মিয়ানমারে গণহত্যার জন্য দায়ী। রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং জাতিগত নিধনে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিচারে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের সহায়তাও চাইতে পারে বাংলাদেশ। 

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) ইমদাদুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনে  এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সীমান্ত সামরিকভাবে বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কোনো বিদেশি নাগরিক বা আশ্রয়প্রার্থী বা আদিবাসীরা এসে যাতে আশ্রয় নিতে না পারে, সে অর্থে বন্ধ করে দেয়া নয়; বরং সীমান্তের ভেতরে নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকতে হবে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাদের দখল হয়ে যাওয়া টহল চৌকি পুনরুদ্ধারে অভিযান শুরু করলে বাংলাদেশের ভেতরে এক ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে বলে মনে করেন তিনি। আর সেটি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে প্রস্তুতি রাখতে হবে।

মেসেঞ্জার/রহিম/সুমন

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700