ঢাকা,  শনিবার
২৭ এপ্রিল ২০২৪

The Daily Messenger

রাজশাহীতে বিরল রোগে আক্রান্ত একই পরিবারের ছয় সদস্য

ভুক্তভোগীরা হচ্ছেন বিড়ম্বনার শিকার

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ২৯ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১৯:১৮, ২৯ মার্চ ২০২৪

রাজশাহীতে বিরল রোগে আক্রান্ত একই পরিবারের ছয় সদস্য

ছবি : মেসেঞ্জার

রাজশাহীর পুঠিয়ায় বিরল রোগে আক্রান্ত একই পরিবারের ছয় সদস্যের আঙুলের ছাপ উঠে গেছে। এ নিয়ে পদে পদে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, এটি একটি বংশগত রোগ। এই রোগ আক্রান্তদের হাতের ছাপ থাকে না। এক যুগ আগেও নানা কাজে আঙুলের ছাপ তেমন একটা প্রয়োজন পড়ত না। কিন্তু, একদশক ধরে আঙুলের ছাপ ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয় আঙুলের ছাপের মাধ্যমে।

বিরল রোগে আক্রান্ত কৃষক অমল সরকার পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পচামাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জানান, আমার বাবা ও দাদা একই রোগে আক্রান্ত ছিলেন। আমরা দুইভাই একই রোগ নিয়ে জন্মেছি। বড় ভাই গোপেশ সরকার দিনাজপুরের একটি হাসপাতালে চাকরি করেন। তার হাসপাতালে যখন হাজিরার জন্য আঙুলের ছাপ নেয়া শুরু হয়, তখন তিনি কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে পুরনো পদ্ধতিতে হাজিরা খাতায় সইয়ের ব্যবস্থা করান।

অমল আরও জানান, বড় ভাই এই রোগের কারণে দু’বছর পর পাসপোর্ট পেয়েছেন। আমার পাসপোর্টের জন্য বেশ কয়েকবার ঢাকায় যেতে হয়েছে শুধু আঙুলের ছাপ সমস্যার বিষয়টি জানাতে। আমার মোটরসাইকেল থাকলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আঙুলের ছাপ না থাকায় কর্তৃপক্ষ এখনও লাইসেন্স দেয়নি।

অমল সরকারের বড় ছেলে অপু সরকার (২২) জানান, বংশানুক্রমে দুইভাই বাবার রোগ পেয়েছি। আমার হাতের আঙুলের রেখা না থাকায় জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও জানান, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে যখন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আঙুলের ছাপ নেয়া শুরু, ঠিক তখনই আমাদের বিড়ম্বনাও শুরু। বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য বারবার আঙুলের ছাপ দিতে ব্যর্থ হন। তখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহের কর্মীরা ঠিক বুঝতে পারেননি বিষয়টি কী? পরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এনআইডি কার্ডে লেখা হয় আঙুলের ছাপ নেই।

২০১৬ সালে যখন মোবাইল সিম কার্ডের জন্য আঙুলের ছাপ বাধ্যতামূলক হয় তখন নতুন বিড়ম্বনায় পড়েন তারা। ফলে তারা তিনজনই মায়ের নামে তোলা সিম কার্ড ব্যবহার করছেন।

অপুর ছোট ভাই অনু সরকার (১৭) জানান, শুধু আঙুলের ছাপ না থাকায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছি। এ সমস্যার বিষয়ে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার ইটিনের সাথে কথা হয়। ২০০৭ সালে এক সুইস নারী আঙুলের ছাপ দিতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে বারবার সমস্যায় পড়ার পর চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইটিনের শরণাপন্ন হন।

সেটিই ছিল তার কাছে এধরনের প্রথম কোনো রোগী। পরে একদল গবেষক ওই নারীর পরিবারের ১৬ জনের ওপর গবেষণা চালিয়ে রোগের বংশগত সমস্যার কারণটি খুঁজে বের করে।

গবেষক দল রোগটির নাম দেন ‘অভিবাসন বিলম্ব রোগ বা ইমিগ্রেশন ডিলে ডিজিজ’। ২০১১ সালে সুইজারল্যান্ডের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইটিন এবং আরও কয়েকজন গবেষক এই রোগের বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।

মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/আপেল

dwl
×
Nagad