ঢাকা,  শনিবার
২৭ এপ্রিল ২০২৪

The Daily Messenger

খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩১ হাজার কোটি টাকা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০০, ১৪ নভেম্বর ২০২২

খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩১ হাজার কোটি টাকা

ফাইল ছবি।

করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ঋণ পরিশোধে বিশেষ শিথিলতা ছিল। চলতি বছর কেউ সময়মতো কিস্তি না দিলে খেলাপি হচ্ছেন। এ কারণে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। কোনো না কোনো উপায়ে আবারও বিশেষ ছাড় মিলবে- এমন ধারণা থেকে অনেকে ঋণ পরিশোধ করছেন না। অবশ্য বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসায়িক সংকটে পড়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না এমন গ্রাহকও রয়েছেন। এমন বাস্তবতায় গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায় ঠেকেছে। গত ডিসেম্বরের তুলনায় যা ৩১ হাজার ১২২ কোটি টাকা বা ৩০ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পরিমাণের পাশাপাশি শতাংশ বিবেচনায়ও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতের মোট ঋণ ছিল ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। তিন মাস আগে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি ছিল ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর গত ডিসেম্বর শেষে ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল খেলাপি। এর মানে প্রতি প্রান্তিকেই হার বেড়েছে।

ব্যাংকাররা জানান, ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করতে এমনিতেই একটি শ্রেণি সব সময়ই নানা উপায় খোঁজে। করোনার কারণে ২০২০ সালে কেউ এক টাকাও না দিলে তাঁকে খেলাপি করা হয়নি। পরের বছর যে পরিমাণ পরিশোধ করার কথা, কেউ ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলে আর পরিশোধ করতে হয়নি। আবার কোনো একটি বিশেষ ছাড় মিলতে পারে এমন আশায় সক্ষমতা থাকলেও ঋণ পরিশোধে ঢিলেমি করছেন অনেকে। আয় থাকার পরও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে ঋণ পরিশোধ করছেন না। যে কারণে খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলের নীতিমালা শিথিল থাকলেও তেমন সাড়া নেই।

ব্যাংকারদের মতে, ব্যবসা-বাণিজ্যের খারাপ পরিস্থিতির কারণেও গ্রাহকদের একটি অংশ ঋণ পরিশোধে সক্ষম হচ্ছে না। কেননা করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্ববাজারে কাঁচামালসহ বেশিরভাগ পণ্যের দর বেড়েছে। অথচ চাহিদামতো বিদ্যুৎ, গ্যাস না পাওয়ায় বেশিরভাগ কারখানায় সক্ষমতার তুলনায় কম উৎপাদন হচ্ছে। আমদানিতে নানা কড়াকড়ি আরোপ  করা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে পারছে না। এর মধ্যে ভোক্তাদের ওপর রয়েছে উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির প্রভাব। এ ছাড়া গত জুলাইতে এক লাফে জ্বালানি তেলের দর ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে সব ক্ষেত্রে খরচের বাড়তি চাপ তো আছেই। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

জানতে চাইলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর. এফ. হোসেন সমকালকে বলেন, করোনা-পরবর্তী অর্থনীতিতে একটি চাপ ছিল। এটি সামলে উঠতে না উঠতে বিশ্বব্যাপী আরেকটি সংকট চলছে। যে কারণে বেশিরভাগ জিনিসের দর বেড়ে মূল্যস্ম্ফীতি অনেক বেড়েছে। আবার বিদ্যুৎ-গ্যাসের অভাবের কারণে অনেক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসবের পাশাপাশি খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পেছনে একটি বড় কারণ ব্যাংক খাতের সুশাসনে ঘাটতি। খেলাপি ঋণ আদায়ে যেভাবে আইনি সহায়তা দরকার অনেক ক্ষেত্রে তা পাওয়া যাচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তিতে অনেক সময় লাগছে। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণের এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দশ ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৬ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা, মোট খেলাপির যা ৬৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। পরিমাণের দিক দিয়ে খেলাপি ঋণের শীর্ষে থাকা এসব ব্যাংক হলো- রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা, সোনালী, অগ্রণী, বেসিক, রূপালী, বেসরকারি ন্যাশনাল, ইসলামী, এবি, পদ্মা ও ওয়ান ব্যাংক। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৬৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বা ৬১ দশমিক ২১ শতাংশ ছিল এসব ব্যাংকে।

ডেইলি মেসেঞ্জার/এএইচএস

dwl
×
Nagad