ঢাকা,  শুক্রবার
২৬ এপ্রিল ২০২৪

The Daily Messenger

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন নেই, সাংবিধানিকভাবেও সম্ভব নয়

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:০৫, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন নেই, সাংবিধানিকভাবেও সম্ভব নয়

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যেতে অনড় দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। অন্যদিকে সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, কোনোভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যাওয়ার সুযোগ নেই। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানও সরকারের সঙ্গে অনেকটা একমত। তার মতে, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন নেই, সাংবিধানিকভাবে এটি সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টম্বর) ভার্চুয়ালি আয়োজিত এক সভায় এ অভিমত দেন টিআইবি প্রধান।

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন: গণতান্ত্রিক সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক সভায় ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা কোনো অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছি না। এটির প্রয়োজন নেই, আমরা মনে করি এটি সাংবিধানিকভাবে সম্ভব নয়। সেটা বিতর্কের ঊর্ধ্বে। যে জিনিসটা দরকার ও সম্ভব সেটি হচ্ছে অন্য দেশেও ক্ষমতাশীন দল নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করে, সরকারে থাকে। কিন্তু তাদের মূলত দায়িত্ব থাকে নির্বাচন কেন্দ্রিক ভূমিকা পালন করা। সরকারের অন্য ভূমিকা থেকে তারা ঊর্ধ্বে থাকে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটে সরকার ইসিকে সহায়তা করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে পেয়েছিলাম। এখন যদি আমরা আবার পেয়ে যাই, সেটা হয়তোবা স্বাগত হতে পারে। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে সেটি কোনো অবস্থায় সম্ভব নয়। আমাদের প্রত্যাশা হবে আদর্শ গণতান্ত্রিক চর্চায় যাওয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদর্শিক গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যে পড়ে না। এটি ইতিবাচক ফল একসময় দিয়েছিল, কিন্তু এতে বিতর্কও আছে।

সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা মূল উদ্বেগের জায়গা জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সেটি করার ক্ষেত্রে দুটি মূল প্রতিবন্ধকতা আছে। একটি হচ্ছে, ভোটের সময়ে সরকারের ভূমিকা কতটা নিরেপেক্ষ হবে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব কতটা হবে- সেটি নিশ্চিত করার জন্য আইন সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। ইসি এমনটা উপলব্ধি করে বলে আমরা মনে করি। তার ওপর ভিত্তি করে ইসি সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে। কীভাবে আইনি রূপরেখা তৈরি করা যায় সেটা ভাবতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার তার ভূমিকা এমনভাবে পালন করবে যেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা যায়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের মতে, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য থেকে যখন ভোটে অংশ নেওয়া হয় তখন অটোমেটিক ফিল্ড নষ্ট হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে চাপ থাকে। এ বিষয়ে ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনের সংস্কার দরকার।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যে ভূমিকা সেটা ব্যাপাক আলোচিত। ইসি একা ভোট করে না। দুটি সংস্থার নিরপেক্ষতা গত দুই নির্বাচনে আমরা দেখতে পারিনি। এটা উদ্বেগের। এই ভূমিকা ভোটের সময় কীভাবে নিরপেক্ষ করা যায়- সেটা ইসির ভেবে দেখতে হবে। গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করা। এটি ইসি চায় বলে আমরা মনে করি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে যেহেতু ইসি নিজেই অংশীজন বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেহেতু ভোটের সময় ইন্টারনেটের গতি কমানো বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা হয় সেই বিষয়ে তারা সচেষ্ট থাকবে।

ভোটে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হবে- ইসির এমন প্রস্তাব প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই বিষয়টি আবারও ভেবে দেখার জন্য বলছি। যারা আগ্রহী তাদের সবাইকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সুযোগ দেওয়া অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। ইভিএমের ক্ষেত্রে বিতর্ক আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইসির উচিত হবে এর রাজনৈতিক, কারিগরি ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে দেখা।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল হাসান। তিনি বলেন, টিআইবি মনে করে যদি সব দলের আস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে তাদেরকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে আইনগত পরিবর্তন-সংস্কার প্রয়োজন হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশনকে সেকথা স্পষ্টভাবে সরকারকে জানিয়ে দিতে হবে। বিদ্যমান আইনি কাঠামোর বিভিন্ন ঘাটতি, যা নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করবার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা সৃষ্টিতে বাধা দেয়, সেগুলো দূর করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা ইসির প্রাতিষ্ঠানিক ও নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। দুঃখজনক যে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে যা বলা হয়েছে তা সব দলের আস্থা সৃষ্টির সম্পূর্ণ বিপরীত। একইভাবে ইভিএম সম্পর্কে কমিশনের সিদ্ধান্ত কমিশনের প্রতি আস্থা সৃষ্টির ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে যে ভোটগ্রহণের জন্যে এবার সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তবে এই সিদ্ধান্তে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা এসেছে। অনেকেই এটিকে নতুন নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুতর নেতিবাচক একটি পদক্ষেপ বলে মনে করছেন। টিআইবি মনে করে ইসির এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিতর্কিত এবং তা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও অংশীজনদের উদ্বেগকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে। ইসি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ ও যুক্তিসমূহ পর্যাপ্তভাবে কোথাও ব্যাখ্যা করেনি, তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে যে এটি কি একটি পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত ছিল? টিআইবি আরও মনে করে ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপকসংখ্যক অংশীজনের বিরোধিতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবং বর্তমান আর্থিক সংকটের প্রেক্ষিতে ইসির উচিত ইভিএম ব্যবহারের রাজনৈতিক, আর্থিক এবং কারিগরি ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করা।

মো. রফিকুল হাসানের মতে, সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যদি তারা আন্দোলনে অনড় থাকেন, তাহলে রাজনৈতিক সংকট ঘণীভূত হওয়ারই সম্ভাবনা থেকে যাবে। প্রকৃতপক্ষে সরকারি দল এবং বিরোধীদল উভয়পক্ষকেই দেশ এবং জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আলোচনা এবং ছাড়ের মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আসা প্রয়োজন। যেখানে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষই আশাবাদী হয়ে ওঠার যথেষ্ট কারণ দেখতে পাবেন।

ডেইলি মেসেঞ্জার/এমএএস

dwl
×
Nagad