ঢাকা,  মঙ্গলবার
৩০ এপ্রিল ২০২৪

The Daily Messenger

স্বাভাবিক হচ্ছে বেনাপোল চেকপোস্টের যাতায়াত

বেনাপোল প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

স্বাভাবিক হচ্ছে বেনাপোল চেকপোস্টের যাতায়াত

ছবি : ডেইলি মেসেঞ্জার

ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের পাঁচদিনের ছুটি কাটিয়ে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে ভারত ভ্রমণকারী পাসপোর্টধারীরা। তবে সকালের দিকে ভারত যাওয়া যাত্রীদের একটু ভিড় দেখা গেলেও সারাদিন অল্প যাত্রী ভারত যেতে দেখা গেছে। তবে রোববার ও সোমবার ভারত ফেরত যাত্রীর চাপ থাকলেও মঙ্গলবার চাপ অনেকটা কমে এসেছে। এতে চেকপোস্টে যাত্রী চলাচল ম্বাভাবিক হয়ে আসছে।

জানা যায়, এবার ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ১০ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এতে টানা পাঁচ দিন বন্ধ ছিল দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানও সরকারি ছুটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বন্ধ রেখেছিল। এতে লম্বা ছুটি পেয়ে চিকিৎসা, ব্যবসা, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে বাংলাদেশ থেকে অনেকে গিয়েছিলেন ভারতে। আবার অনেকে এসেছিলেন বাংলাদেশে।

এখন তারা ফিরতে শুরু করেছেন। এতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেড়েছিল যাত্রীদের চাপ। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত পাঁচ দিনে যাত্রী পারাপার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ হাজারে। পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষের ছুটিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাত্রী পারাপারের এই চাপ দেখা দেয়।

ভ্রমণ, ব্যবসা ও চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট যাত্রীরা এক দেশ থেকে ভিন্ন দেশে যাত্রা করে। ইমিগ্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, ঈদ ও নববর্ষের সরকারি ছুটিতে রেকর্ড পরিমাণে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ৩২ হাজার ৯৮৯ জন যাত্রী পারাপার করেছেন। যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত ৩ গুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৪১৯ জন বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেন। আর ১৩ হাজার ৫৭০ জন ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। এ সপ্তাহ পর্যন্ত ভারত থেকে আসা যাত্রীর চাপ একটু বাড়তে পারে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে দুই দেশের ইমিগ্রেশনে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে ভারতের পেট্রাপোলে ভোগান্তি বেশি বলে যাত্রীদের অভিযোগ।

পাসপোর্টধারী ঢাকার ফিরোজ কবির জানান, তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ঈদ ছুটিতে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। তবে শূন্য রেখায় লম্বা লাইনে যে ভিড় ছিল তাতে ভারতীয় ইমিগ্রেশন সারতে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে জনবল সংকট থাকায় তাদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। খুলনার রেশমা আক্তার সরকারি চাকরি করেন। তিনি ৫ দিনের ছুটি পেয়ে বেড়ানোর জন্য পরিবারের সঙ্গে ভারতে গিয়েছিলেন। ছুটি শেষ হওয়ায় দেশে ফিরতে হয়েছে। এপারে কোন সমস্যা না হলেও ওপারে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হাপিয়ে উঠেছি।

শফিকুল ইসলাম নামে একজন পাসপোর্টধারীযাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ইমিগ্রেশন পার হতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বেনাপোলে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সহজতর হলেও ভারতের পেট্রাপোলে দীর্ঘ সময় লাগছে। পেট্রাপোলে ১৮টি কাউন্টার (ডেস্ক) থাকলেও সবটিতে কর্মকর্তা না থাকায় যাত্রীদের সারি দীর্ঘ হয়।

পাসপোর্টধারী ঢাকার বরকত আলী জানান, দূরপাল্লার বাসে সিট সংকটের কথা বলে বেনাপোলে ভাড়া বেশি আদায় করছে পরিবহন ব্যবসায়ীরা। সাধারণ সময় ঢাকার ভাড়া জনপ্রতি ননএসি ৭০০ টাকা ও এসি ১২০০ টাকা হলেও এখন চাইছে নন এসি ৮০০ টাকা ও এসি ১৫০০ টাকা। এতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাতায়াত করে থাকে। ভ্রমণ কর বাবদ বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা ও ভিসা ফি বাবদ ভারত সরকারের ১৫০ কোটি টাকা আয় হয়। তবে কাঙ্খিত সেবা বাড়েনি বেনাপোল ও ভারত অংশে।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম জানান, ঈদ ছুটি শেষ হওয়ায় পাসপোর্টযাত্রীদের ঘরে ফেরার চাপ বেড়েছে। তবে দ্রুত যাতে তারা বন্দরে পাসপোর্টের কার্যক্রম শেষ করতে পারে সেজন্য সহযোগিতা করা হচ্ছে।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি মো. কামরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ঈদের দিন থেকে আজ পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি যাত্রী দুই দেশের মধ্যে আসা-যাওয়া করেছেন। স্বাভাবিক সময়ে এ সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মধ্যে থাকে। তবে এবার রেকর্ডসংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করেছেন। যাদের অধিকাংশই ঈদ ও নববর্ষ উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটির কারণে ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য ভারতে গমন করেন। ঈদের সময়ে যাত্রীদের চাপ বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় নিয়ে বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য সব ডেস্কে যাতে কর্মী থাকেন, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া পেট্রাপোলে ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, পেট্রাপোলের ওসির সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ হচ্ছে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে তাদের তাগিদ দেওয়া হয়। সেখান থেকে জানানো হয়েছে, ইমিগ্রেশনে দেরি হচ্ছে না। দেরি হওয়ার মূল কারণ বিএসএফের তল্লাশি। এরপরও যাত্রীসেবার মান বাড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাগিদ দেন।

উল্লেখ্য, আগে ভ্রমণ কর বড়দের (পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে) ৫০০, ছোটদের (পাঁচ বছরের নিচে) ২৫০ টাকা ছিল। গত বাজেটে তা বেড়ে বড়দের ১০০০ টাকা ও ছোটদের ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বন্দর ৫৫ টাকা করে টার্মিনাল চার্জ নিচ্ছে। আর ভিসা ফি বাবদ ভারতীয় দূতাবাসগুলো ৮৫০ টাকা নিচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার পাসপোর্টধারী যাতায়াত করে বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে।

মেসেঞ্জার/সজিব

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700