ঢাকা,  শনিবার
১১ মে ২০২৪

The Daily Messenger

তাপদাহে বেঁকে যাচ্ছে রেললাইন : পশ্চিমাঞ্চলে ধীরগতিতে চলছে ট্রেন

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ২১:৪৩, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

তাপদাহে বেঁকে যাচ্ছে রেললাইন : পশ্চিমাঞ্চলে ধীরগতিতে চলছে ট্রেন

ছবি : সংগৃহীত

প্রচণ্ড তাপদাহে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে পশ্চিমাঞ্চলে রেলওয়ের সকল ট্রেন চলছে ধীরগতিতে। ফলে কোনো ট্রেনের শিডিউল ঠিক থাকছে না।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, পশ্চিমাঞ্চলের অধীনে ২ হাজার ২৮৬ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা-চিলাহাটি-পঞ্চগড় ও রাজবাড়ি-ঢাকা রুটের রেললাইনে কংক্রিটের স্লিপার রয়েছে।

এছাড়া ঈশ্বরদী-খুলনা রুটে রয়েছে স্টিলের স্লিপার। অবশিষ্ট রেলপথে রয়েছে প্রায় ৫০ বছরের পুরনো কাঠের স্লিপার। কাঠের স্লিপারে দুর্বল ট্র্যাকে ট্রেনে গতি আনা যাচ্ছে না। চলমান তাপদাহে এসব রেললাইন বেশি বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

গত শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) পাবনার ঈশ্বরদী বাইপাস রেলওয়ে স্টেশনে রেললাইনের পাত বেঁকে গিয়ে বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে খুলনা থেকে রাজশাহীগামী আন্তঃনগর ট্রেন কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস। বেঁকে যাওয়া রেললাইনে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রবেশের পর রেললাইন বেকে যাওয়া কথা জানা যায়।

পরে ট্রেনটি থামিয়ে ঈশ্বরদী লোকোসেডের রেললাইনে পেছনে টেনে নেওয়া হয়। এরপর অপর একটি লাইনের মাধ্যমে প্রায় ১ ঘণ্টা পর ট্রেনটি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পরে রেলওয়ে অফিসের লোকজন দুই ঘণ্টা রেললাইনের ওপর পানি ঢেলে তাপমাত্রা কমিয়ে আনার পর বেঁকে যাওয়া রেলপথ স্বাভাবিক করেন।

রেলওয়ের ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনে কর্মরত শ্রমিক শুভ হোসেন জানান, কপোতাক্ষ ট্রেন ঈশ্বরদী স্টেশন থেকে ছাড়ার পর ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনের কাছে যে লাইনে ট্রেনটি আসছিল সেই রেললাইন দূর থেকে দেখে বাঁকা মনে হচ্ছিল। খবর পেয়ে বিভাগীয় রেলওয়ের পরিবহন কর্মকর্তা ও সহকারী প্রকৌশলীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন।

ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জানান, তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে যায়। এসময় ওই লাইনে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহী যাচ্ছিল। এসময় ট্রেনটি থামানো হয়। পরে অপর একটি লাইনের মাধ্যমে ট্রেনটি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। রেলওয়ে অফিসের লোকজন রেল লাইনের ওপর পানি ঢেলে তাপমাত্রা কমিয়ে আনার পর রেলপথ স্বাভাবিক হয়।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, খবর পেয়ে বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকৌশলীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রেনটি লাইন থেকে পেছনে এনে অন্য লাইন দিয়ে রাজশাহীতে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ এর সত্যতা স্বীকার করেন।

স্থানীয়রা জানান, রাজশাহীর আড়ানী স্টেশন এলাকায় অনেক কাঠের স্লিপারই পচে নষ্ট হয়েছে। পর্যাপ্ত পাথর এবং নাট-বল্টু ও ক্লিপ না থাকায় ওই স্লিপার নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। অনেক দিনের পুরোনো রেললাইন ট্রেন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এর ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন।

রাজশাহীর হরিয়ান এলাকায় গিয়েও রেললাইনে স্লিপারের একই অবস্থা দেখা যায়। স্থানীয় লোকজন জানান, অনেক দিন ধরেই এসব এলাকায় রেললাইনে বড় কোনও সংস্কার হয় না। নাট-বল্টু খুলে গেলে কিংবা ট্রেন লাইনচ্যুত হলে তখন সংস্কার করা হয়।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক জানান, ‘১৯৭৩ সালে রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়। একটি রেললাইনের আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ থেকে ২৫ বছর। কিন্তু এই স্লিপার ও রেললাইনের বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে। ফলে ট্রেন চালাতে স্বাভাবিকভাবেই সতর্ক থাকতে হচ্ছে। কারণ, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে কাঠের স্লিপারের লাইনেরই বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি।’ তাই নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে।

রেলওয়ে রাজশাহীর সহকারী প্রকৌশলী আবু জাফর জানান, মেয়াদউত্তীর্ণ ও অকোজ স্লীপারে উপর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সহকর্মী দুই উর্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে নিয়ে রাতদিন মাঠে মাঠেই পড়ে আছি। প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থানে স্লীপার ভাংছে, নয়তো রেলপাত ভাংছে। দ্রুত সময়ে সেখানে গিয়ে তা মেরামত করা হচ্ছে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত ডিগ্রী সেলসিয়াস, সেটা আমাদের কাছে কিছু নয়। আমাদের নিকট হিট এলার্ট জারি হচ্ছে, মামাকে নানার বাড়ীর গল্প শোনানোর মত। আমি সহকর্মীদের নিয়ে রাতদিন রেললাইন দেখভাল করছি।’

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) প্রচণ্ড তাপে ঈশ্বরদী-বাইপাস রেললাইনের একটি স্থান বেঁকে যায়। তাই দুপুর ১২ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চার কিলোমিটার রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ঝুঁকি থাকায় ঐ লাইনে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর কয়েক দিন আগে দর্শনা-যশোর রেলরুটে লাইন বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কায় ট্রেনের গতি ৬০ কিলোমিটারে নামিয়ে চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এখনও এই রুটটিতে সতর্কতার সঙ্গে ট্রেন চালানো হচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, মাত্রাতিরিক্ত গরম বা শীতে লাইন বেঁকে বা ফেটে যায়। এমন লাইনগুলোতে রেলের গতি কমিয়ে আনা হয়। শীত বা গরমের কারণে লাইনে স্ট্রেচিং ও ডিস্ট্রেচিংয়ের ফলে রেল ব্রোকেন ও বাকলিং হয়ে থাকে। এ অবস্থায় রেল কীভাবে চলবে তার একটি গাইডলাইন রয়েছে। সে অনুযায়ীই এখন ট্রেন চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের কাজও চলছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে রেললাইনের তাপমাত্রা সব সময় সাত থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি হয়। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে কাঠের স্লিপার এলাকার রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে এখনও বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। ঈশ্বরদীতে আগে থেকে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। তাই সেখানে রেললাইন বেঁকে যায়। পরে মেরামত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কংক্রিট স্লিপার অনেক বেশি লোড নিতে পারে। তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হলেও লাইন বেঁকে যায় না। কাঠের স্লিপারে তা সম্ভব নয়। কিন্তু স্লিপার স্বল্পতার করণে মেইন লাইনে কাঠের ও স্টিলের স্লিপার বসাতে বাধ্য হই।

এখন আমাদের চেষ্টা আছে, যেনো স্লিপার পরিবর্তনের সময় কংক্রিটের স্লিপারই বসানো হয়। কাজটা একবারে করতে পারলে ভালো। তাহলে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঘটনা কমে আসবে। ট্রেনও গতিতে চালানো যাবে।

মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/আপেল

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700