ছবি: সংগৃহীত
বেশি মানুষের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছানোর অজুহাতে অতিরিক্ত ফি আদায় করে প্রতারণা করছে ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মালিক কোম্পানি মেটাকে। মেটাকে অবশ্যই সেইসব বিজ্ঞাপনদাতার ক্লাস অ্যাকশন মামলার মুখে পড়তে হবে, যাদের অভিযোগ, বেশি মানুষের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছানোর অজুহাতে অতিরিক্ত ফি আদায় করে প্রতারণা করছে ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মালিক কোম্পানিটি --এমনই বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালতের একাংশ।
বৃহস্পতিবার সান ফ্রানসিসকোর ‘নাইন্থ ইউএস সার্কিট কোর্ট অফ আপিলস’র জুরিবোর্ড ২-১ ভোটের ভিত্তিতে নেওয়া এক সিদ্ধান্তে বলেছে, বিজ্ঞাপনদাতারা দলগতভাবে মেটার কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন, যেখানে তাদের বিজ্ঞাপন দেখানোর ‘পোটেনশিয়াল রিচ’ বাড়ানোর দাবি করেছে কোম্পানিটি।
বিজ্ঞাপনদাতারা বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা নির্ধারণে যে পরিমাপক ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়েছে তাতে প্রকৃত মানুষ কম না হলেও সম্ভাব্য জাল অ্যাকাউন্টওয়ালা দর্শক বেড়েছে চারশ শতাংশ পর্যন্ত।
অন্যদিকে, অন্যায্য ত্রাণ চাওয়ায় একটি পৃথক ক্লাস অ্যাকশন মামলা বাতিলও করেছে আদালত। এর মানে, বিজ্ঞাপনদাতারা সেইসব ক্ষেত্রে দল বেঁধে মামলা করতে পারবেন না, যেখানে মূল বাদীর মামলা করার আইনি অবস্থান স্পষ্ট নয়।
এদিকে, একজন ভিন্নমত পোষণকারী বিচারক উভয় ক্লাস অ্যাকশন মামলাই বাতিল করে দিতে চেয়েছিলেন। আদালতের নথি অনুসারে, বিজ্ঞাপনদাতাদের অনুমান বলছে, এর ক্ষতিপূরণ বাবদ সাতশ কোটি ডলারের বেশি জরিমানা হতে পারে মেটার।
এ প্রসঙ্গে রয়টার্স মেটা ও এর আইনজীবিদের মন্তব্য জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি।
ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কভিত্তিক কোম্পানিটি বলেছে, কোম্পানির আয়ের ‘বড় অংশ’ আসে বিজ্ঞাপন থেকে। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির সর্বমোট আয় ছিল ১৩ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার, যেখানে নেট আয় ছিল তিন হাজার ৯১০ কোটি ডলার।
ক্লাস অ্যাকশন মামলার সুবিধা হল, এতে বাদীদের এককভাবে মামলা করার তুলনায় কম খরচ পড়ে। এমনকি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সার্কিট আদালতের বিচারক সিডনি টমাস রায়ে লিখেছেন, মেটার বিরুদ্ধে বেশিরভাগ অভিযোগই এসেছে ‘পোটেনশিয়াল রিচ’ বাড়ানোর বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন নিয়ে। আর বিজ্ঞাপনদাতারা একে কোম্পানির ‘সাধারণ আচরণবিধি’ হিসেবে প্রমাণ করে তাদের দাবি করা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।
এ ক্লাস অ্যাকশন মামলার আওতায় রয়েছে লাখ লাখ ব্যক্তি ও কোম্পানি, যারা ২০১৪ সালের ১৫ অগাস্টের পর থেকে ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।
মামলায় আরও দাবি করা হয়, ‘পোটেনশিয়াল রিচ’-এর পরিমাপক ব্যবস্থার সঙ্গে কারসাজি করা এইসব জাল ও নকল অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে মেটার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তারা জানতেন। পাশাপাশি আছে বেশ কিছু বট অ্যাকাউন্টও। তবে, তারা বিষয়টি ঢেকে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তবে, বিষয়টির সঙ্গে আংশিক ভিন্নমত পোষণ করে সার্কিট বিচারক ড্যানিয়েল ফরেস্ট বলেন, বিজ্ঞাপন কেনার আগে মেটা বিজ্ঞাপনদাতাদের কী বলেছিল, ও তারা কী বুঝেছেন, বিভিন্ন এমন স্বতন্ত্র প্রশ্নের ভিত্তিতে ক্লাস অ্যাকশন মামলাটি বাতিল করে দিতেন তিনি।
বিজ্ঞাপনদাতাদের পক্ষের আইনজীবি জেফ্রি গ্র্যাবার বলেছেন, এ ক্ষতিপূরণের মামলা বিচারকদের কাছে উপস্থাপনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তিনি।
মেসেঞ্জার/মাহবুব