ঢাকা,  রোববার
২৮ এপ্রিল ২০২৪

The Daily Messenger

সেতু ধসের কারণ জানতে তদন্ত শুরু

মেসেঞ্জার অনলাইন

প্রকাশিত: ২০:১১, ২৭ মার্চ ২০২৪

সেতু ধসের কারণ জানতে তদন্ত শুরু

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোর শহরের আইকনিক ‘ফ্রান্সিস স্কট কি’ সেতুর একটা বড় অংশ জাহাজের ধাক্কায় ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। এরিমধ্যে প্রাথমিক উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ডেকে নিখোঁজ ছয়জনের খোঁজে নতুন করে অনুসন্ধান অভিযান শুরু করা হয়েছে।

তবে এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে এখন কোটি টাকার প্রশ্ন, কি করে জাহাজটি সেতুর গায়ে ধাক্কা খেলো। জাহাজটি যেভাবে এসে সজোরের সেতুর পিলারের ধাক্কা মারলো, তা শুধু সিনেমার পর্দাতেই দেখা যায়। কিন্তু এমন ঘটনা বাস্তবেও ঘটে যাবে তেমনটি কেউ চিন্তাও করতে পারেনি।

ঠিক কি কারণে এই দুর্ঘটনা, সেটি জানতে এরিমধ্যে তদন্ত শুরু করে আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থা। তদন্তকারি দলের হাতে তথ্য আছে খুবই সামান্য। এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা হলো সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ ডালি সেতুতে ধাক্কা মারার আগে সেটির বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিলো।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বন্দর বাল্টিমোর থেকে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে ২৭ দিনের যাত্রা শুরু করার পরপরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জাহাজটি। বন্দর ছেড়ে যাওয়ার পরে হঠাৎ করে সব শক্তি হারিয়ে ফেলে কনটেইনার বোঝাই ডালি। ছিলো না কোনো বিদ্যুৎ, এমনকি ইঞ্জিনেও কোনো শক্তি ছিলো না।

সমস্যা সমাধানে বারবার অ্যালার্ম বাজানো হয়। ক্রুরা মরিয়াভাবে জাহাজটিতে বিদ্যুত ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালায়। কিন্তু তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। যদিও ডালির একটি জরুরি জেনারেটর ছিলো। কিন্তু ইঞ্জিনগুলোর শক্তি ফিরিয়ে আনতে পারেনি সেই জেনারেটর।

অন্ধকারে জাহাজের আলো নিভে যাওয়ায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ক্রুরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেতুর সজোরে আঘাত করে ডালি। তবে তার আগে স্থানীয় সময় রাত দেড়টার কিছু আগে তারা একটি ‘সাহায্যের বার্তা’ জারি করে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে যে, একটি সংঘর্ষ হতে চলেছে।

জানা গেছে, জাহাজটি বিদ্যুৎ চলে যাওয়া এবারই প্রথম নয়, এর আগেও এমন ঘটনা হয়েছে। ২০১৬ সালে বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প বন্দরে ডালির বিদ্যুৎ চলে যায়। সেবার কোন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম হয়নি। তবে জাহাজটির নিবন্ধ যেখানে, সেই সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, জাহাজে কোন সমস্যা নেই।

বাল্টিমোর সেতু এমনভাবে ডিজাইন করা যাতে করে জাহাজের ধাক্কা লাগলেও ভেঙ্গে না পড়ে। বিশাল এই সেতুটি ছোট ছোট অংশ ভাগ করা ছিলো না। গোটা সেতুটিই সংযুক্ত ছিলো। ফলে জাহাজটি পিলারে ধাক্কা খাওয়ায় গোটা সেতুতেই তা ছড়িয়ে পরে। আর ধাক্কার শক্তি সেতু মোট ওজনের থেকে বেশি ছিলো্

তাই তদন্তকারিরা যা খুঁজছেন, তা হল কী কারণে সেই জাহাজটি শক্তি হারিয়েছিল এবং সেই সেতুর দিকে ধাবিত হয়ে পিলারের গায়ে সজোরে আঘাত করলো, যার কারণ সেতু ধসে পরে হতাহতের কারণ হয়। এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এখন দিন রাত আর রাতকে দিন করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের তদন্তকারীরা সেতুতে বিধ্বস্ত জাহাজটিতে পরিদর্শন করে দেখেছেন এবং সেটির ডেটা রেকর্ডার উদ্ধার করেছে। এনটিএসবি প্রধান জেনিফার হোমন্ডি বলেন রেকর্ডার বিশ্লেষণ করা হবে। তিনি জানান, জাহাজটি ভেজাল জ্বালানি ব্যবহার করছিলো কিনা, সেটিও দেখা হচ্ছে।

জেনিফার হোমন্ডি বলেন, অনেক সময় নিম্নমানের ডিজেল ব্যবহারের কারণে জাহাজের জেনারেটর ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। আরও জানা গেছে, জাহাজিটর ব্যাকআপ জেনারেটরও ব্যর্থ হয়েছে বিদ্যুৎ ফেরাতে। এটি খুবই দুঃখজনক, কারণ একেবারেই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ার ঘটনা খুবই বিরল।

আমেরিকান পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ক্লে ডায়মন্ড বলেন, বিদ্যুৎ চলে যাবার পরপরই পাইলট জাহাজটি যাতে ডানে বাঁক নিতে না পারে, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে ক্রুদের নির্দেশ দেন। সেসঙ্গে নোঙর ফেলে জাহাজটি থামানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি, সেতুর উপর যান চলাচল বন্ধে বার্তা পাঠাতে বলেন।

ডায়মন্ড বলেন, বিভিন্ন ভিডিও চিত্র দেখা গেছে জাহাজটির আলো বন্ধ হয়ে আবার জ্বলে উঠেছে। এরপরই আবারও নিভে গেছে। এতে প্রশ্ন উঠে, জাহাজটি শক্তি ফিরে পেয়েছিলো কিনা। হ্যাঁ, জাহাজটির ব্যাকআপ জেনারেটন চালু হয়েছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাহাজটির প্রপালশনটি চালু হয়নি।

তিনি জানান, আমেরিকার জলসীমায় সেসব জাহাজ চলাচল করে বা প্রবেশের অনুমতি পায়, সেগুলোতে কমপক্ষে দু’জন পাইলট থাকতে হয়। সাধারণ দক্ষ ও অভিজ্ঞ নাবিকরা পাইলট হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ডায়মন্ড বলেন, এরা বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ প্রশিক্ষিত নাবিকদের মধ্যে একজন।

Messenger/Mahbub

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700