ঢাকা,  শনিবার
২৭ এপ্রিল ২০২৪

The Daily Messenger

দেশবিরোধী বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি শেখ পরশের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ২৬ আগস্ট ২০২২

দেশবিরোধী বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি শেখ পরশের

শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডা হাইস্কুল মাঠে বক্তব্য রাখছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। ছবি : যুবলীগ।

বিএনপিকে দেশবিরোধী আখ্যায়িত করে দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডা হাইস্কুল মাঠে, জাতীয় শোক দিবস-২০২২ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও অসহায়-দুঃস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ তার বক্তব্যে এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, কোনো এক অদৃশ্য কারণে আগস্ট মাসেই বার বার রক্তের কালিমা লেপেছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও শত্রুরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কালজয়ী মহানায়কদের অনেকেরই প্রাণ দিতে হয়েছে কিংবা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। বিশ্বে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের অন্যতম ভারতের মহাত্মা গান্ধী, শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, চিলির সালভাদর আলেন্দে, যুক্তরাষ্ট্রের আব্রাহাম লিংকন, মার্টিন লুথার কিং ও জন এফ কেনেডি, মিয়ানমারের জেনারেল অং সান ও মিশরের আনোয়ার সাদাতসহ আরও অনেকে। কিন্তু এই সকল হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একাধিক কারণে যেটি সবচেয়ে বর্বরোচিত সেটি হচ্ছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ড।

খালেদা জিয়ার শাসনামলে এই আগস্ট মাসেই বার বার রক্তের কালিমা লেপা হয়েছে উল্লেখ করে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা বাংলাদেশে বিএনপির মদদে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন (জেএমবি)। দেশের ৬৩ জেলার প্রেসক্লাব, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ঢাকার ৩৪টিসহ সর্বমোট ৫০০ বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। খেয়াল করে দেখবেন, তারা প্রেসক্লাব বেছে নিয়েছিল, কারণ তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না; কারণ তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করতে চায়। তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস তো করেই না, বরং গণমাধ্যমকে ভয় পায়—কারণ গণমাধ্যমের সঙ্গে গণমানুষের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে— তাই জেএমবির সৃষ্টি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড শুধু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির হত্যাকাণ্ড ছিল না উল্লেখ করে শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, এটি ছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে তার পরাধীনতায় ফিরিয়ে নেওয়া এবং নব্য উদ্ভাসিত ও সদ্য প্রকাশিত জাতিসত্তার পরিচয় মুছে ফেলার জন্য হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্বের বুক থেকে বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ও জাতিসত্তার সমূলে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই হত্যার মাস্টারমাইন্ড ও পরবর্তী সুবিধাভোগীদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পরাস্ত পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ও তাদের এই দেশীয় দোসরদের ষড়যন্ত্রের নৃশংস শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার, তথা মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনা।

তিনি খালেদা জিয়া সম্পর্কে বলেন, খুনিদের সীমাহীন বর্বরতার উদাহরণ চারদিকে পাওয়া যায়। খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করে। যার মধ্যে বিন্দুমাত্র মনুষ্যত্ববোধ আছে, অথবা চক্ষুলজ্জা আছে সে কি পারে, বেহায়ার মত ১৫ আগস্ট জন্মদিন করতে? তিনি নাকি দেশনেত্রী? একজন দেশনেত্রী কিভাবে পারে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে অবজ্ঞা করতে, অথবা একটা পরিবারকে এইভাবে কষ্ট দিতে? আওয়ামী লীগ তো এদেশের বৃহত্তম একটা রাজনৈতিক দল। আমি খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগতভাবে প্রশ্ন করতে চাই—কারণ আমার বাবা-মা সেদিন নিহত হয়েছিল এবং এদেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে এবং নেতা মানে— আপনি কিভাবে পারেন এই দেশের একটি বিরাট অংশকে অবহেলা এবং উপেক্ষা করতে? এখানে আমি তার “দেশনেত্রী” উপাধিকে চ্যালেঞ্জ করছি। যে খালেদা জিয়া কখনও দেশনেত্রী তো দূরের কথা, “নেত্রী” হওয়ারই যোগ্যতা রাখে না।

বিএনপি শাসনামলে সিরিজ বোমা হামলার ব্যাপারে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, এই ধরণের হামলার ইতিহাস পৃথিবীতে নেই। একসঙ্গে একটি দেশের এতগুলো জায়গাতে সমন্বিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতো পরিকল্পিত এবং সমন্বিত হামলার ইতিহাসে পৃথিবীতে নেই। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এরকম সমন্বয় সম্ভব না। বিএনপি এই সন্ত্রাসের সুবিধা নিতে চেয়েছিল। তারা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের মদদ দিয়েছে। আকস্মিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল।

শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ সৃষ্টি হয়েছিল জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। এই যে আজকে আমরা কিছু ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আমাদের অসহায় ও দুস্থ ভাই-বোনদের মাঝে এসেছি। এই উপহারগুলো আপনাদের অধিকার। এগুলোকে দান মনে করবেন না। আজকে সারা বিশ্বে বিশ্বমন্দা ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতি হওয়াতে আপনাদের যে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে সেটা আমরা উপলব্ধি করি। তাই আমরা এই শোকের মাস আগস্টের কর্মসূচি হিসেবে এই আয়োজন করেছি। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেশন কার্ডের মাধ্যমে ৩০ টাকায় আপনাদের চাল দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন। খুব শীঘ্রই ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় নেতৃত্বে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারব ইনশাল্লাহ। আপনারা শুধু প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা রাখবেন এবং দোয়া করবেন আল্লাহ যেন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দীর্ঘায়ু দান করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো। কারা সেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল? জিয়াউর রহমান ছিলেন ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান রহমান এদেশের মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিলেন। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের হাতে তুলে দিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হাজার হাজার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা করেছেন এই খুনি জিয়া। ক্যু, গুম-খুনসহ এমন কোনো নারকীয় কাজ নেই যা জিয়াউর রহমান করেননি।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন-যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জুর আলম শাহীন, মোঃ রফিকুল ইসলাম, মোঃ হাবিবুর রহমান পবন, মোঃ এনামুল হক খান, তাজউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ হেলাল উদ্দিন, মোঃ জহির উদ্দিন খসরু, আবু মুনির মোঃ শহিদুল হক চৌধুরী রাসেল, অ্যাড. ড. শামীম আল সাইফুল সোহাগ, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক কাজী সারোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোঃ সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শামছুল আলম অনিক, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আবদুল হাই, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মোঃ হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা, উপ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাড. শেখ নবীরুজ্জামান বাবু, উপ-অর্থ সম্পাদক সরিফুল ইসলাম দুর্জয়, উপ-ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোঃ আলতাফ হোসেন, উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিয়ষক সম্পাদক মোঃ রাশেদুল হাসান সুপ্ত, উপ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ গোলাম কিবরিয়া শামীম, উপ-ধর্ম সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্যসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ।

dwl
×
Nagad